পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: শামসুল আলম খান : ‘আমার সহপাঠী সুমা কিছুদিন ধরে স্কুলে আসছে না। তখন বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ ব্রিগেডের একজন সদস্যকে খোঁজ নিতে বলি কেন সুমা স্কুলে আসছে না। খবর পাই তার বাল্য বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। ব্রিগেডের সকলে মিলে ওর বাড়িতে যাই। মেয়েটি’র বাবা-মাকে বুঝাই। তারা বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হয়। মেয়েটি আবার আমার সঙ্গে এসে আমার সঙ্গে ক্লাস করে।’
আতœতৃপ্তি নিয়েই বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে এমন দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরলেন স্থানীয় ধলা স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিম লিডার মাহাবুবা আলম তৃপ্তি।
এ ব্রিগেড টিমকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তার নামের শেষে স্থানীয় এলাকাবাসী যুক্ত করেছেন ‘ম্যাজিষ্ট্রেট’ তকমা। সেই কথাই জানাচ্ছিলেন এই শিক্ষার্থী -‘বাল্য বিয়ে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ব্রিগেড নিয়ে আমরা গর্বিত। বাল্য বিয়ে বন্ধ করার কারণে অনেকেই আমাকে ম্যাজিষ্ট্রেট বলে।’ এ শিক্ষার্থীর কন্ঠে আশাবাদী এমন উচ্চারণের পর পরই হাসির ফোয়ারা ছুটলো গোটা অনুষ্ঠানে।
গতকাল বুধবার দুপুরে স্থানীয় দরিরামপুর নজরুল একাডেমি মাঠে ত্রিশাল উপজেলাকে বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষণা অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোজাম্মেল হক খানের উপস্থিতিতে বাল্য বিয়ে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ব্রিগেডের দলনেতা শুনিয়ে দিলেন এসব সাফল্যগাঁথা।
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু জাফর রিপন ‘সবুজ ত্রিশাল’ অভিযানের সাফল্যের পর বাল্য বিয়ে মুক্ত ত্রিশাল উপজেলা গড়তে গঠন করেন ‘বাল্য বিয়ে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ব্রিগেড।’ তার এ নতুন উদ্ভাবনে এ উপজেলা থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হচ্ছে বাল্য বিয়েকে।
অনুষ্ঠানে সবার উপস্থিতিতে ইউএনও আবু জাফর রিপন জানালেন উপজেলার সব গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ ব্রিগেডের সদস্যরা। তিনি বললেন, ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বাল্য বিয়ে ব্রিগেড যাত্রা শুরু করে মাত্র ১৬ জন সদস্য নিয়ে। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে ১৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩৬ জন সদস্য নিয়ে উপজেলাব্যাপী ব্রিগেড গঠন করা হয়।
বর্তমানে ১৮ টি ব্রিগেডে ১৮৬ জন সদস্যের সমন্বয়ে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ ও যৌন হয়রানি বন্ধে নিয়মিত উঠান বৈঠক, ক্লাস ক্যাম্পেইন, শ্রমজীবী, পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। সদস্যদের প্রত্যেকে পেয়েছেন বাইসাইকেল। এ ৬ মাসেই ৬৫ টি বাল্য বিয়ে বন্ধ এবং কয়েকটি যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ব্রিগেডের কার্যক্রম প্রশংসা কুড়িয়েছে।’
‘ত্রিশাল মডেল’ অনুসরণ করলে সমাজ থেকে বাল্য বিয়ের কুসংস্কার অচিরেই বিলুপ্ত হবে জানিয়ে মুগ্ধ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘শৈশবে যখন আমরা বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে রচনা লিখতাম, তখন আমাদের মাথায় আসতো না এভাবে বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ব্রিগেড করা যায়।
আমরা শুধু প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু ত্রিশালের ইউএনও আবু জাফর রিপনের উর্বর মস্তিস্ক থেকে একটি সুন্দর আইডিয়া এসেছে। ত্রিশালের প্রতিটি ঘরে ঘরে বাল্য বিয়ে বিরোধী দুর্গ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ৪৯২ টি উপজেলায় এ ধারণাটি ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামী এক বছরের মধ্যে সারা দেশে বাল্য বিয়ে শুন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব।’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জি.এম.সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এ.বি.এম.আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড.সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে গোটা দেশকে বাল্য বিয়ে মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রিশাল উপজেলা এক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের মাধ্যমে ত্রিশাল উপজেলার ইউএনও একটি গণজাগরণ তৈরি করেছেন। কাজীরাও একমত হয়েছেন তারা আর বাল্য বিয়ে পড়াবেন না। শিক্ষকরাও বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।