Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়’

বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ গ্রাহক

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে ওজোপাডিকো’র বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো কোন স্বস্তি দিচ্ছে না তার গ্রাহকদের। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারন মানুষের। পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র সেবার (?) মান নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে অভিযোগও যথেষ্ট। ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন থেকে শুরু করে .০৪ কেভি এলটি লাইন সহ সব ধরনের সরবরাহ ও বিতরন লাইনের গোলযোগ এখন নিত্যকার ঘটনা। ঘন ঘন গোলযোগ দেখা দিচ্ছে ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনগুলোতেও। ‘আকাশে মেঘ জমলেই দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়’ এ প্রবাদ এখনো সম্পূর্ণ সত্যি। খোদ বরিশাল মহানগরীতে ৩টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের জীর্নদশা গোটা নগরবাসীকে ভোগাচ্ছে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমে নাজুক হয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে। বিপর্যস্ত জরুরী চিকিৎসা সেবা সহ পানি সরবরাহ পর্যন্ত।
বরিশাল মহানগরীর রূপাতলীতে ১৩২/১১ কেভি গ্রীড সাব-স্টেশন থেকে রূপাতলী ৩৩ কেভি মূল সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরে সেখান থেকে পলাশপুর ও কাশীপুরে দুটি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনে ৩৩ হাজার ভোল্টের ভিন্ন দুটি লাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়। কিন্তু প্রায় ৩০ বছরের পুরনো ঐ দুটি ৩৩ কেভি লাইনের পাশাপাশি সাব-স্টেশন দুটিরও বেহাল অবস্থা। উপরন্তু ঐসব ৩৩ কেভি লাইন সহ সাব-স্টেশনগুলোর যথাযথ ও সময়োচিত রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতারও অভিযোগ রয়েছে। রূপাতলী মূল সাব-স্টেশনের ৩৩/১১ কেভি ট্রান্সফর্মার ছাড়াও সেখানের ‘বাসবার’ ও ‘ব্রেকার’ গুলোও দীর্ঘদিনের পুরনো। এছাড়া এ মূল সাব-স্টেশনটিও ১৯৯০ সালের পরে আর পূণর্বাসন বা পরিপূর্ণ সংস্কার করা হয়নি। এমনকি প্রায় একই সময়ে নগরীর কাশীপুর ও পলাশপুরে দুটি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন নির্মানের পর অদ্যাবদি পরিপূর্ণ পূণর্বাসন করা হয়নি। শুধুমাত্র জোড়াতালি দিয়ে সংকট নিরসন হচ্ছে। তবে গতবছর পলাশপুর সাব-স্টেশনে ১৫ এমভিএ ক্ষমতার ৩৩/১১ কেভি একটি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্থ হবার পরে একটি বিকল্প ট্রান্সফর্মার সেখানে স্থাপন করা হয়।
রূপাতলী-কাশীপুর ও পলাশপুর-কাশীপুর ৩৩ কেভি লাইন সহ সংযুক্ত দুটি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এখন অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। এমনকি ১০ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়াতেও এ সাব-স্টেশনমুখী দুটি ৩৩ কেভি লাইন ছাড়াও নগরীর প্রায় ২২টি ফিডারের ১১ কেভি বিতরন লাইনগুলোতে গোলযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। গতকালও সকাল ৮টার পরে নগরীর রূপাতলী-পলাশপুর ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনে গোলযোগ সৃষ্টির ফলে গ্রীড সাব-স্টেশন থেকে মূল ইনকামিং লাইনই ট্রিপ করে। ফলে বরিশাল ও ঝালকাঠী জেলা সহ পিরোজপুরের কিছু এলাকাতেও একই সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করে রূপাতলী ৩৩ কেভি মূল সাব-স্টেশন থেকে কাশীপুর সহ অন্যান্য ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হলেও লাইন মেরামত করে পলাশপুর ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনটি চালু করতে ৩ ঘন্টারও বেশী সময় লাগে। অপরদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রূপাতলী-কাশীপুর ৩৩ কেভি লাইনও ট্রিপ করে। ফলে একই সাথে নগরীর ৮টি ফিডারে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে দ্রæতই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।
এধরনের পরিস্থিতি বরিশাল বিভাগীয় সদরে এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও ১১ কেভি সরবরাহ এবং .০৪ বিতরন লাইনগুলোতে গোলযোগ অনেকটাই নিয়মিত হয়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে আছে বরিশাল মহানগরীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। নগরীর বেশীরভাগ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারগুলো ওভারলোডেড হয়ে আছে। ফলে প্রতিবছর গরমকালে অনেক ট্রান্সফর্মারই পুড়ে যাচ্ছে। দূর্ভোগ বাড়ছে সাধারন গ্রাহকদের।
বরিশাল মহানগরীর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি ঝালকাঠী, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা সদর এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার। এসব শহরের সাধারণ মানুষ থেকে সাধারন ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র শিল্পগুলো ধুকছে বিদ্যুৎ সংকটের সাথে বিতরন ব্যবস্থার নিয়মিত গোলযোগে। চিকিৎসা সেবা ও পানি সরবরহ পর্যন্ত চরম বিপয য়ের কবলে।
দক্ষিণাঞ্চলে ওজোপাডিকো’র বর্তমান নাজুক বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার দ্রæত পূণর্বাসন ও উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। নচেৎ অদুর ভবিষ্যতেই জোড়াতালি দিয়েও এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
তবে পরিস্থিতি উন্নয়নে ওজোপাডিকো’র আওতাধীন ২১টি জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে ২টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে স¤প্রতি। যার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় ৪৪৪ কিলোমিটার নতুন ১১ কেভি ও ০.৪ কেভি লাইন নির্মান করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৭০ কিলোমিটার ৩৩ কেভি নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মান ছাড়াও ১শ’ কিলোমিটার বিদ্যমান বিদ্যুৎ লাইন পূণর্বাশন করার কথা।
প্রকল্পের আওতায় ২৬টি ৩৩/১১ কেভি ও ২ হাজার ১শ’ টি ১১/০.৪ কেভি নতুন বিতরণ ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হবে। একই সাথে ৩০ হাজার নতুন বিদ্যুৎ খুটি স্থাপন, ৩টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন নির্মান এবং বরিশালের রূপাতলী সহ ১১টি অনুরূপ পুরনো সাব-স্টেশন পূণর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রকল্পের আওতায়। তবে চলতি অর্থ বছরের মধ্যে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হলেও তা ২০১৯-এর ডিসেম্বরের আগে সম্পন্ন হবার কোন সম্ভবনা নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এছাড়াও প্রায় ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ওজোপাডিকো’র বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নে আরো একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজও নির্ধারিত সময় থেকে অনেক পিছিয়ে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরুতেই যথেষ্ট কালক্ষেপণের ফলে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে তার সুফল কবে পৌছবে তা নিশ্চিত নন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহল।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ