Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন: মানব জীবনে সত্যবাদিতার প্রভাব কতখানি?

আব্দুল্লাহ
ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর

প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, -০০০১, ১২:০০ এএম

উত্তরঃ সত্যবাদিতা ঈমানের প্রথম ও প্রধান শর্ত। যেখানে সত্যবাদিতা নেই, সেখানে ঈমান নেই, ইসলামও নেই। আমরা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করছি কিন্তু কয়জন সত্যবাদিতাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছি ? যদি না করে থাকি তবে কি করে প্রকৃত মুসলামান হতে পেরেছি ? দুনিয়ার যত পাপ মিথ্যা থেকেই উদ্ভুত হয়। মিথ্যা মানুষকে মোহমুগ্ধ করে সত্যের আওতা থেকে দূরে নিয়ে যায়। আর সত্য তখন মিথ্যার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। আল কুরআন দৃপ্ত ভাষায় ঘোষণা করেছেঃ তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করো না এবং যেনে বুঝে তোমরা সত্য গোপন করো না। (সূরা বাকারা, আয়াত নং - ৪২) সত্য এবং সত্যের প্রকাশই মানব ধর্ম। তাই কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছেন ঃ হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হও। (সূরা তাওবা, আয়াত নং - ১১৯) সত্যই জীবন , মিথ্যাই ধ্বংস। মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা ও মিথ্যা প্রচার করা সকল ধর্মের সকল মানুষের নিকটই অন্যায় ও ঘৃণিত। মিথ্যাবাদী ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পদে পদে অপমানিত হয়। মানব সমাজে সে বাসের অনুপযোগ্য। মানুষ তার মাধ্যমে হয় প্রতারিত ও বঞ্চিত। তাই আল কুরআনের ঘোষণা ঃ মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং - ৬১) মিথ্যাবাদী আল্লাহর দুশমন, রাসুলের দুশমন, সমগ্র মানবতার দুশমন। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বা কাজের মাধ্যমে আজ কোন স্বার্থ উদ্ধার করছে অথবা কোন ক্ষতি থেকে বাঁচতে চাইছে, অচিরেই সে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে আরো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে, বন্ধু হারিয়ে ফেলবে বা চাকুরি চলে যাবে। অতএব বলতে হবে, সত্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও শান্তিময়। অপরদিকে মিথ্যা বড্ড ঘোলাটে এবং অশান্তিময়। মিথ্যাবাদী মানুষের মাঝে অপমানিত হওয়ার পূর্বে নিজে নিজেই অপমানবোধ করে। কারণ মিথ্যার অপর নাম অপমান। নি¤œ রুচির লোকেরাই কেবল মিথ্যা বলতে পারে, মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে। মুমিন ব্যক্তির চরিত্র হবে স্বচ্ছ। সে কখনও মিথ্যা বলবে না। মিথ্যার আশ্রয়ও নেবে না। হাদীসে রাসুল (সাঃ) সত্যবাদিতার ফযীলত এভাবে বর্ননা করেছেন ঃ সত্যবাদিতা পরিচালিত করে সৎ কর্মের দিকে। আর সৎ কর্ম জান্নাতের দিকে। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদিতা পরিচালিত করে মন্দ কর্মের দিকে, আর মন্দ কর্ম জাহান্নামের দিকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং - ৬০৯৪) তাহলে পথ দুইটি: জান্নাতের পথ আর জাহান্নামের পথ। জান্নাতের পথের সূচনা হচ্ছে সত্যবাদিতা। আর জাহান্নামের পথের সূচনা হচ্ছে মিথ্যাবাদিতা। তাই সত্যবাদিতা ধর্ম, বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট প্রিয়। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদিতা সবার নিকট ঘৃণিত। সে কারণেই মিথ্যাবাদিদের কেউ বিশ্বাস করে না এবং বিপদের সময় তারা কারো সাহায্যও পায় না। এখন আমাদের ভেবে দেখা উচিত আমরা কোন পথ অবলম্বন করব এবং কোন পথে চলব। বস্তুত সত্যবাদিতা মানবিক গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম একটি গুণ। যার মধ্যে এ গুণের সমাহার থাকবে, পৃথিবীর সব ধরনের লোক তাঁকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করবে, আল্লাহ ও রাসুলের নিকট সে প্রিয় হবে এবং আখেরাতে সত্যবাদিতার কারণে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
উত্তর দিচ্ছেনঃ মুফতী মনির হোসাইন সুজাতপুরী

ইসলামিক প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশ্ন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ