Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে রায় আজ

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জীবনহানির আশঙ্কা না থাকলে জামিন দেয়া যায় না -অ্যাটর্নি জেনারেল
আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেননি -খালেদা জিয়ার আইনজীবী
স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, অসুস্থতাজনিত কারণে যদি জীবনহানির আশঙ্কা না থাকে এবং মেডিকেল বোর্ডের যথাযথ মতামত না থাকে তাহলে শুধু অসুস্থতার যুক্তিতে জামিন দেয়া যায় না। এর জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, হাইকোর্ট ইতিপূর্বে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে জামিন দিয়েছেন কিন্তু সরকার বা দুদক কেউই এর বিরুদ্ধে আপিল করেনি। শুধু এই একটি মামলাতেই পরীক্ষামূলকভাবে রাষ্ট্র-দুদক এক সঙ্গে হয়ে আপিলে এসেছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে শুনানির সময় এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং জয়নুল আবেদীন। শুনানি শেষে আজ (বুধবার) দিন ধার্য করেন আদালত। সুপ্রিম কোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কার্যতালিকায় বিষয়টি ১ নম্বর রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিবেন।
গতকাল খালেদা জিয়ার জামিন রায় উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সবকটি ফটকে সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। আদালতের চারপাশে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। সকাল ৯টার আগেই আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ, সাধারণ আইনজীবী, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদে, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামালহ বিএনপি সমর্থিত শতাাধিত আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ সহকারী ও ডেপুটি অ্যাটর্নিরা, আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন আইনজীবীকে দেয়া যায়।
৯টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বধীন আপিল বেঞ্চ এজলাসে বসেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার ফারদার কিছু সাবমিশন করতে হবে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন,না, না। তিনি বলেন, মাই লর্ড, আমার কিছু কথা বাকি আছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি তো শুনানি করেছেন। কী বলতে চান? আর্গুমেন্ট থাকলে এখনই বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একদিনের জন্য কী হবে আর? প্রয়োজনে কালকে রায়ের জন্য থাকুক। প্রধান বিচারপতি বলেন, আগামীকাল আবার এক ব্রাদার আসতে পারবেন না। এরপর দুপুর ১২টা শুনানি শুরু জন্য রাখেন।
শুনানিতে যা হল:
শুনানির শুরুতে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে শুনানিতে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ব্যারিস্টার মীর হেলাল ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিমের মামলার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নাজমুল হুদা এক বছর আটমাস কারাভোগ করার পর গুরুতর অসুস্থ বিবেচনায় তাঁর জামিন হয়। একইভাবে মোহাম্মদ নাসিমকে দন্ড দেয়ার পর তাঁর এক পা ও হাত প্যারালাইসিস হয়ে যায়। মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে তাঁকে জামিন দেয়া হয়। একইভাবে সংক্ষিপ্ত সাজায় মীর হেলাল ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে গুরুতর অসুস্থ বিবেচনায় জামিন দেয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকে অনেকদিন সাজা খেটেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অসুস্থতাজনিত কারণে যদি জীবনহানির আশঙ্কা না থাকে এবং মেডিকেল বোর্ডের যথাযথ মতামত না থাকে তাহলে শুধু অসুস্থতার যুক্তিতে জামিন দেয়া যায় না। এ সময় আদালত প্রশ্ন রাখেন, এসব মামলা কি জরুরি অবস্থার সময় হয়েছে? তখনকার প্রেক্ষাপট কী ছিল?
অ্যাটর্নি জেনারেল দুদকের কিছু মামলায় আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, ৯০ কর্মদিবসে যদি আপিল শুনানি শেষ না হয়,আসামি যদি গুরুতর অসুস্থ হয় বা মত্যুর আশঙ্কা থাকে এবং সাজা যদি তিন বছরের ঊর্ধ্বে না হয় তাহলে অসুস্থতাজনিত কারণে আসামি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলায় আসামি জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি যুক্তিও নেই। দুপুর ১২টা ৫৫মিনিটে তিনি শুনানি শেষ করেন।
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মাইলর্ড আমরা কোনো প্রতিউত্তর করব না। শুধু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কেননা ইতিপূর্বে যেসব মামলার শুধু উদাহরণ টেনেছি কিন্তু আজ অ্যাটর্নি জেনারেল বিস্তৃতভাবে পড়তে উপস্থাপন করেছেন। যা আমাদের পক্ষে গেছে। জরুরি অবস্থার সময়ের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে অসুস্থতার যুক্তিতে হাইকোর্ট ওই সব মামলায় আসামিদের জামিন দিয়েছিলেন এবং আপিল বিভাগ তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি।
জয়নুল আবেদীন আব্দুল ওয়াহাব ও ইসমত আরার মামলার উদাহরণ টেনে বলেন, যথাক্রমে এ দুই মামলায় আট বছর ও সাত বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল আসামিদের। হাইকোর্ট তাঁদের জামিন দিয়েছিলেন কিন্তু সরকার বা দুদক কেউই এর বিরুদ্ধে আপিল করেনি। শুধু এই একটি মামলাতেই পরীক্ষামূলকভাবে রাষ্ট্র-দুদক এক সঙ্গে হয়ে আপিলে এসেছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। এরপর আদালত রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। ।###

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ