পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৪২ বছর আগে নদীকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেয়ায় আওয়াজ তুলেছিলেন মওলানা ভাসানী
রেজাউল করিম রাজু : আজ ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ৪২ বছর আগে আজকের এদিনে ভারতের পানি আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলন সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মজলুম মানুষের সংগ্রামী নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। লাখো কন্ঠের গগন বিদারী মুহু মুহু শ্লোগানের মধ্যদিয়ে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন মরণ বাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও। ফারাক্কা বাঁধ চালুর সময় এর কি ভয়াবহ বিরুপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা বিয়াল্লিশ বছর আগে অনুধাবন করেছিলেন এ দূরদর্শী মজলুম জননেতা। আজ থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে মরনবাঁধ ফারাক্কা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও। গঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে দাও বলে শ্লোগান নিয়ে লংমার্চের মাধ্যমে যে আওয়াজ তুলেছিলেন তা আজও আন্দোলিত করে আকাশ বাতাসে। পদ্মার নি:স্প্রাণ তরঙ্গে তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। নেপালের গন্ডাক থেকে গঙ্গার তীর ভারতের মালদার ফারাক্কা বিহার আর বাংলাদেশের সর্বত্র এখন আওয়াজ উঠেছে নদীকে তার স্বাভাবিক প্রবাহে চলতে দাও। সব ব্যারেজ আর ক্যানেল অপসারন করো। নদী বাঁচাও মানুষ বাঁচাও দেশ বাঁচাও।
১৯৭৬ সালের মে মাসের লংমার্চের পটভুমি ছিল বাংলাদেশের পরিবেশ প্রকৃতি জীব বৈচিত্র কৃষি মৎস্য নৌ যোগাযোগ তথা সার্বিক জীবন জীবীকার উপর সর্বনাশা ফারাক্কা ব্যারেজের বিরুপ প্রভাব। আসন্ন বিপর্যয়ের বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরে আর্ন্তজাতিক নদী পদ্মার পানির নায্য হিস্যার দাবিতে গর্জে ওঠেন মওলানা ভাসানী। ডাক দেন ফারাক্কা লংমার্চের। তার ডাকে সাড়াদিয়ে আওয়াজ ওঠে চলো চলো ফারাক্কা চল। মরন বাঁধ ফারাক্কা ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও। লংমার্চে যোগ দেবার জন্য সারা দেশ থেকে বিভিন্ন পথে সে সময় লাখো মানুষ জমায়েত হয়েছিল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে। সেখানে তিল ধারনের জায়গা ছিলনা। মানুষ অবস্থান নিয়েছিল মাদরাসা ময়দানের আশেপাশে এলাকাজুড়ে। চারিদিক ছিল মানুষ আর মানুষ। মুর্হু মুর্হু শ্লোগান ছিল চলো চলো ফারাক্কা চলো। পদ্মার তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে বিখ্যাত তালের টুপি সফেদ লুঙ্গি আর পাঞ্জাবী পরিহিত মওলানা ভাসানী লংমার্চ নিয়ে চাপাইনবাবগঞ্জ যাবার আগে স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে দশ মিনিটের এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন যা ছিল দিক নির্দেশক ও উদ্দীপক। এরপর লাখো মানুষকে সাথে নিয়ে চাপাইনবাবগঞ্জের উদ্যেশে লংমার্চ নিয়ে রওনা হন। রাজশাহী শহর পার হতে না হতে লংমার্চ পড়ে বিরুপ আবহাওয়ার মুখে। ঝড় বৃষ্টি আর খরতাপ মাথায় নিয়ে এগিয়ে চলে কাফেলা। কোন কিছুই কাফেলার যাত্রা রোধ করতে পারেনি। রাতে লংমার্চের মানুষের বহর থামে চাপাইনবাবগঞ্জে। রাতে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেবার পর ফের সকালে যাত্রা। পথের যাত্রা বিরতির সময় খাবার ছিল সামান্য ডাল চালের খিচুড়ি আর শুকনো চিড়া। রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জের মানুষের আতিথেয়তা ছিল আনন্দের ব্যাপার। অনেক রোডমার্চ, লংমার্চ হয়েছে। সব শ্রেণির মানুষের এমন স্বর্ত:স্ফুত অংশগ্রহন আর কখনো হয়নি। মাইলের পর মাইল আম বাগান পেরিয়ে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি কানসাটে গিয়ে থামে কাফেলা। এখানে পনের মিনিটের ভাষনে লংমার্চের নেতৃত্বদানকারী মজলুম জনতার কন্ঠস্বর মওলানা ভাসানী বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তোলেন গঙ্গার পানি আমার জন্মগত অধিকার। এ অধিকার আমরা আদায় করে ছাড়ব। ভারত সরকারের জানা উচিত বাংলাদেশের মানুষ আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করেনা। আমরা আমাদের অধিকারের আদায়ের লংমার্চ করতে এসেছি। কারো সাথে যুদ্ধ করতে নয়।
ফারাক্কা ইস্যুটি ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের ৪৮তম অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ত্রিশ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি হয়। কিন্তু বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত তার পানির নায্য হিস্যাটুকু পায়নি। বরং পানি চুক্তিতে গ্যারান্টিক্লজ ও সালিশী ব্যবস্থার কথা কৌশলে এড়িয়ে যাবার কারনে পানির নায্য হিস্যা না পেলেও বিশ্ব দরবারে (জাতিসংঘ) নালিশ জানানোর পথটি বন্ধ হয়ে যায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের পানি জল্লাদরা তাদের পানি শোষন নীতিকে আরো আটোসাটো করে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয় অভিন্ন ৫৪টি নদীর সবকটি স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাগ্রস্ত করছে। ১৯৭৬ সালে দুরদর্শী নেতা মওলানা ভাসানী যে আওয়াজ তুলেছিলেন তা এখন বাংলাদেশ, ভারত নেপাল সিকিম সর্বত্র অনুরিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের সমীক্ষার সময় (১৮৪১-১৯৪৬) নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলা হয়েছিল। ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরী করার সময় পশ্চিম বঙ্গের প্রধান প্রকৌশলী কপিল ভট্টাচার্য এর বিরোধীতা করে বিরুপ সমালোচনার শিকার হন। ভারত সব শংকাকে উপেক্ষা করে ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মান করে। তারপরও গঙ্গাকে ঘিরে বাস্তবায়ন করে নানা প্রকল্প। পানির অভাবে ভাটির দেশ শুকিয়ে মরলেও তা আমলে নিতে নারাজ ভারতের পানি শোষনকারী নীতিনির্ধারকরা। পানি নিয়ে ভারতের দাদাগীরিতে বাংলাদেশের কৃষি তথা পরিবেশের উপর ভয়ংকর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের শংকা এমন অবস্থা চলতে থাকলে পানি ও নদী একেবারে হারিয়ে যাবে। যা ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানে আজ বড্ড প্রয়োজন অনুভুত হচ্ছে মওলানা ভাসানীর মত একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতার। যার এক আওয়াজে গোটাজাতি ফারাক্কা লংমার্চের মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের নদী গুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভুমিকা রাখবে। বিশিষ্ট কবি আব্দুল হাই সিকদারের ‘‘ডাক’’ কবিতার আহবান- ফারাক্কা বাঁধ ভাঙ্গবে এখন কে ? কোথায় সোনার ভাসানি আজ তাকে খবর দে- ভাসানি নেই ভাসানি নেই প্রাণ কাড়া চিৎকার, ঈশা খানের দেশে একি অভাব হাহাকার ?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।