Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ আখ্যা জনগণের সঙ্গে তামাশা : প্রধানমন্ত্রী

গ্রেনেড হামলা মামলার রায় তাড়াতাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১৪ বছর আগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলায় ‘তাড়াতাড়ি’ রায় ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই মামলায় ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে বলেন, এ রকম ঘটনা কখনও ঘটেনি যেখানে একটা হামলা হয়েছে অথচ হামলার শিকার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ। তারা হামলার পর আলামত নষ্ট করেছে এরপর জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে। আমি তখন বিরোধীদলীয় নেতা, আমাকে হত্যার জন্য যদি তখনকার সরকারের প্রধান ও তার ছেলে মিলে ষড়যন্ত্র করে তাহলে সে দেশ কীভাবে চলে আপনারা চিন্তা করতে পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ আখ্যা দেয়া জনগণের সঙ্গে তামাশা বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ভোট চুরিতে এক্সপার্ট, মানুষ খুনে এক্সপার্ট, দুর্নীতিতে এক্সপার্ট, কালো টাকা সাদা করে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে, সে আবার গণতন্ত্রের মা হয়? এটা দেশের মানুষকে নিয়ে তামাশা করা; আর কিছু নয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে এই হামলায় নিহতদের স্বজন এবং আহতদের মধ্যে সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যার বিচার চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এটার বিচারের রায় হবে এবং এই ঘটনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা উপযুক্ত শাস্তি পাক, সেটাই আমরা চাই অর্থাৎ ন্যায়বিচার চাই। হামলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতগুলো মানুষের জীবন নিল এভাবে আক্রমণ করে, একটা দলকেই সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা, এটাই ছিল বিএনপির উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, তার কেবিনেটের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, তারা এটার সঙ্গে জড়িত। এটা খুব স্পষ্ট বুঝা যায় তাদের উদ্দেশ্যই ছিল আমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করা।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে খুন করে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে, তাকে বলে গণতন্ত্রের মা ! এটা গণতন্ত্র হলো কোথা থেকে? ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে খুব বড়াই করছিল তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলো। কিন্তু আন্দোলন সংগ্রাম করেছে জনগণ; তারা তাদের ভোট চুরি মেনে নেয়নি। যার ফলে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অপকর্মের তো শেষ নেই। ব্যাংকের টাকা পয়সা লুটপাট করে খেয়ে চলে গেছে। সব বিদেশে পাচার করেছে। সেই পাচার করা টাকা ধরা পড়েছে আমেরিকায়, সিঙ্গাপুরে। কিছু টাকা আমরা ফেরত এনেছি। পাচার করা টাকা ধরা পড়ল বিদেশিদেরই কাছে। এজন্য আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার কাজ তো এটাই ছিল, খুন খারাবি। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়র নির্বাচনের পর ৬ জনকে হত্যা করল। জিয়াউর রহমান আসার পর থেকে শুরু আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছে। ঘরে থাকতে পারেনি কেউ। মেয়েদের ওপর যে অত্যাচার করেছে; একদিকে পুলিশ আরেকদিকে বিএনপির ক্যাডাররা, রাস্তায় ফেলে যে অত্যাচার করেছে, আমরা তো তা ভুলতে পারি না।
এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদÐের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার একটা হয়ে গেছে। কোরআন শরিফে বলা আছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করলে যে অন্যায়, তার শাস্তি সে পাচ্ছে।
গ্রেনেড হামলায় যারা আহত ছিলেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এই হামলায় নিহতদের স্বজন এবং আহতদের সহায়তা করে যাওয়ার অঙ্গীকারও করে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় গেছে, অনেকের বয়স হয়ে গেছে, অনেকের শরীরে স্পিন্টার, অনেকেই এ রকম মানবেতন জীবন যাপন করছে, অনেকেই মারা গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কিছু সহযোগিতা দিতে। তিনি বলেন, কেবল এই হামলা না। বিএনপি-জামায়াত আমলে আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সবার পাশে থাকবেন তিনি।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অন্তর্ভুক্ত করুন
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক ২য় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এটা করেছে এবং আমরা আশা করি অন্যান্য দেশও আমাদের অনুসরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তকরণে এ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সা¤প্রতিক পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও এখন সিপিপি মডেল অনুসরণ ও স¤প্রসারণ করছি। দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমের পরিবর্তে আমরা টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করেছি। যা আমাদের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তি-২০১৫ এর মত আন্তর্জাতিক নীতি কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ দেশের সকল মানুষকে উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশনাল সেন্টার স্থাপন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে গত সাড়ে ৯ বছরে সারাদেশে ৪ হাজার ৮৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ২৫৫টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং ৪২৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণের কাজ চলছে। দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে খাদ্যাভাব মেটাতে দুর্যোগ প্রবণ ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলার ৫ লাখ পরিবারের মধ্যে ৫৬ কেজি চাউল বা ৪০ কেজি ধান ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি করে ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের তৈরি পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সাড়াদান কৌশলে প্রতিবন্ধিতা বিষয়কে অন্তর্ভুক্তির জন্য দুর্যোগ বিষয়ক বৈশ্বিক প্লাটফর্মে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সম্মেলন হতে প্রাপ্ত অর্জন ও অভিজ্ঞতা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন ও জীবিকা উন্নয়নে এবং দুর্যোগ সহনশীলতা শক্তিশালী করতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণে সহায়তা করবে। এ সম্মেলন সকল দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং এরপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শনীর তিনদিনের এক মেলার উদ্বোধন করে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল স্বাগতিক বক্তৃতা করেন। রয়্যাল থাই সংসদের সদস্য এবং ইউএনর ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন রাইটস অব দ্যা পারসন্স উইথ ডিজ্যাবিলিটিজর সদস্য মনথিয়ান বুন্তান সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

 



 

Show all comments
  • রিয়াজ ১৬ মে, ২০১৮, ৬:৩৫ এএম says : 2
    কোনটা জনগণের সঙ্গে তামাশা, সেটা তারা ভালো করেই জানে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৬ মে, ২০১৮, ১০:২১ এএম says : 3
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’টি অনুষ্ঠানে যেসব বক্তব্য রেখেছেন এর সবই সত্য কথা এবং ওনার এসব কথাগুলো আমাদের অনুধাবন করা বিশেষ প্রয়োজন। নেত্রী হাসিনা একজন দেশপ্রেমিক তিনি জনগণের কল্যাণে ওনার জীবন উৎসর্গ করেছেন এটা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। আমাদের দেখার বিষয় তিনি যা বলেন সেটা করেন কিনা; সেদিক থেকে বিচার করলে নেত্রী হাসিনা যা বলেন সেটাই করেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে দলের মধ্যে এত বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতি কেন?? বর্তমানে যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগে প্রচুর সংখ্যক সদস্য দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দলের যেপরিমান সদস্য তাঁর তিন গুন সদস্য শুধু আওয়ামী লীগেই দেখা যায়। এখন এতবড় একটা দলকে নিয়ন্ত্রন করা অবশ্যই কঠিন। তারপর আবার বেশী সদস্য হওয়াতে অপশক্তিও দলে ঢুকে পড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টী করছে। আর দুর্নীতি?? এরজন্য পুরোটাই দায়ী অপশক্তি কর্তৃক ২১ বছর এবং পরে ৫ বছর মোট ২৬ বছরে যারা সরকারি আমলা বা কামলা হয়েছেন তারাই দায়ী। কারন আইন তৈরী হয় সংসদে মানে রাজনীতিবিদরা আইন প্রণয়ন করেন। আমরা দেখেছি আইনের মধ্যে কোন খারাপ দিক নেই তাহলে রাজনীতিবিদরা সঠিক আছেন তাই না? কিন্তু এই আইন প্রয়োগ করে আমলা কামলারা অপশক্তির কায়দায় রাজনীতিবিদদের বগলে নিয়ে এই আইন প্রয়োগের সময় প্রচুর দুর্নীতি করে উভয়েই লাভবান হয় তাই না?? কিন্তু আমলা কামলারা এমনি কায়দা করে কাজ গুলো সমাধা করে পয়সার বানিজ্য করেন যে, পরবর্তীতে এর সমস্ত দোষটা আমলারা তুলে দেয় রাজনীতিবিদদের ঘাড়ে এটাই মহা সত্য তাই না?? কাজেই যেভাবে ঢালাও ভাবে সবাই রাজনীতিবিদদেরকে দোষারুপ করছে সেটা সঠিক নয় তাই না??
    Total Reply(1) Reply
    • Yahya ২২ মে, ২০১৮, ৫:০০ এএম says : 4
      যালেমের শুনাম যারা করবে, তাদের জবানে আল্লাহর গজব নাযিল হবে। ইনশাআল্লাহ।

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ