পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : বাংলাদেশ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে কৃষি উৎপাদনে। কৃষিপণ্য রফতানীর উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। যথাযথ উদ্যোগ, মান উন্নত এবং কীটনাশকের ব্যবহার ও ফুড প্রসেসিং ব্যবস্থা সায়েন্টিফিক্যালী না হওয়ায় সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে চীন ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সামগ্রিক কৃষিতে ক্রমাগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য়, আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু কৃষিপণ্য রফতানীতে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আসতে পারছে না বাংলাদেশ। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে, নজর দিলে কৃষিপণ্য রফতানীতে একটা অবস্থান করে নিতে পারবে বাংলাদেশ।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনে ইতোমধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। উৎপাদন মৌসুমে সংরক্ষণের অভাবে অনেক কৃষি পণ্য পচে নষ্ট হয়। রফতানী বাড়লে কৃষক লাভবান হবে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার হবে সমৃদ্ধ। সুত্রমতে, বাংলাদেশ অনায়াসেই দেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেক কৃষিপণ্য রফতানী করতে পারে। তাছাড়া কৃষিভিত্তিক শিল্প উন্নয়নেরও রয়েছে বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু জোরালো উদ্যোগ নেই। সুত্রমতে, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, উদ্যোক্তা বিশেষ করে যুবকদের উৎসাহিত করা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত ঋণ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। তাহলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে মডেল হবে। গার্মেন্টস শিল্প ও জনশক্তি রফতানির মত কৃষিও হতে পারে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিরাট রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ কিন্তু মান ও প্রসেসিং ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় বিদেশে রফতানী বাড়ছে না। বহু দেশে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশী পণ্যের মার্কেট গড়ে উঠেছে, ব্যাপক চাহিদাও। কিন্তু চাহিদা মিটাতে রফতানী হচ্ছে না। তবে নামকাওয়াস্তে কিছু কৃষিপণ্য রফতানী হচ্ছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর সাইবুর রহমান মোল্যা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বাংলাদেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে অনেকদুর এগিয়ে গেছে। কিন্তু ফসল ও ফল উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা সায়েন্টিফিক্যালী না হওয়ায় বিদেশেীদের কাছে ব্যাড রেপুটেশন রয়েছে।যেমন সব দেশেই ফসল ও ফল উৎপাদনে নির্দিষ্ট ডোজের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা পোকামাকড় জীবানু ধ্বংস করার পর কীটনাশক নিজেও ভ্যানিস হয়ে যায়। থাকে না ন্যূনতম কার্যকারিতা। আমাদের দেশেও সেই ব্যবস্থা রয়েছে ক্ষুদ্র পরিসরে। তার মতে, বেশীরভাগক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক ফল ও ফসলের গায়ে দীর্ঘসময় থেকে যায়, যা মনবদেহে প্রবেশ করে থাকে। এ ব্যাপারে কৃষি বিজ্ঞানী, চাষী ও মাঠ কর্মকর্তাদের উন্নত দেশে কীটনাশকের ব্যবহার বিধির অনুকরণের পরামর্শ ওই বিশেষজ্ঞের।
সুত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৯০ ধরনের কৃষিজাত পণ্য সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, লন্ডন, কানাডা, দুবাই, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) ও রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-০২ অর্থ বছরে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার পণ্য। ২০১০-১১ অর্থ বছরে রপ্তানি করে আয় হয় ৪শ’৪৮ কোটি টাকা। আর গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২৪হাজার মেঃ টন সবজি, ৬হাজার ৯শ’ ৬৩ দশমিক ৫ মেঃ টন সুগন্ধী চাল, ৩হাজার ৩ শ’৪ মেঃ টন ফলসহ কৃষিপণ্য রফতানী করে আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটিতে। অথচ আরো বহুগুণে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সুত্র জানায়, বিদেশের বাজারে উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের চাহিদা। চাহিদানুযায়ী রফতানী হচ্ছে না। আবার বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষকও কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে না। উন্নত বিশ্বের ন্যায় অনলাইন বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বের (চীন, জাপান ,দক্ষিণ কোরিয়া) অনেক স্থানে কৃষকের মাঠ থেকে কৃষি পণ্য ক্রয় করে নিয়ে তাঁদের হাতে শুধু একটা টোকেন দেয়া হয়, পরে সেই টোকেনটি নির্দিষ্ট ব্যংকে জমা দিলে সেখান থেকে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যয্য মূল্য পেয়ে যান। ঐসব দেশে কৃষকের কাজ হলো কৃষি পণ্য উৎপাদন করা আর সেটাকে লাভজনক করা সরকারী সিদ্ধান্তের ব্যাপার, কৃষকের নয়। সে ধরনের একটা বাজারের প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা।
সুত্রমতে, বাংলাদেশে ফুড প্রসেসিং ব্যবস্থাটা সন্তোষজনক নয়। আমরা কোন আম, পেয়ারা, স্টবেরী, ছবেদা, বাউকুলসহ ফল এবং সবজি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে অব সিজনে ব্যবহারের মত কোন ব্যবস্থার সৃষ্টি করতে পারিনি। আবার প্রসেসিং পদ্ধতিও উন্নতমানের নয়। প্যাকেটজাত করে উন্নত বিশ্বের ন্যয় আমরা অনেক ফলের স্বাদ গোটা বছরই নিতে পারি। কিন্তু সে ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।