পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বচ্ছতার সাথে আলাদা বরাদ্দ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। তবে এর ফলে যেন বিশ্ববাসীর কাছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভুল বার্তা না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকার কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রোববার ‘রোহিঙ্গা সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব ও আসন্ন বাজেট’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে এই মত এসেছে। এতে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠানে সিপিডি’র ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের জন্য স্বচ্ছতার সঙ্গে বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্ত তা যেন কোনোভাবেই আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে ভুল বার্তা না দেয়। অর্থাৎ এমন কোনো বার্তা যেন না যায় যে, আমরা তাদের দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্থায়ী আত্তীকরণের পরিকল্পনা করছি। বরং এই বার্তা যেন যায় যে, আমরা মানবতার সংকট বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রেখেছি।
তিনি বলেন, মায়ানমার থেকে যেসব মানুষ এসেছে, এই মানুষগুলো আবার তাদের দেশে ফিরে যাবে, এই চূড়ান্ত লক্ষ্যটা যেন বাজেটের কারণে ঢাকা পড়ে না যায়। আমরা জানি রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জটিল সমস্যা। এর তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান নেই। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা যেন আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে না যাই।
দেবপ্রিয় বলেন, দাতা সংস্থাগুলোর মনোভাব হচ্ছে, তারা ধরেই নিয়েছে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাবে না। আমরা যদি এটা প্রতিষ্ঠিত করে দেই তাহলে, একপর্যায়ে বিদেশিরাও হতাশ হয়ে পড়বে। তখন হয়ত আর সেভাবে সাহায্যও আসবে না। এতে রোহিঙ্গারা আমাদের ওপর বিরাট বোঝা হয়ে যাবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেসব খাতে সিপিডি বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে সেগুলোর বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, বিদেশি সাহায্য কতখানি রোহিঙ্গাদের উপকারে যাচ্ছে আর কতখানি আমাদের ব্যবস্থাপনা খাতে যাচ্ছে এটার বিষয়ে স্বচ্ছতা লাগবে।
সিপিডি বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাবেÑউপদ্রæত এলাকার জনসাধারণ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য, রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ পুনর্বাসন কিংবা জীবিকায়নের বাইরে এই মুহূর্তে তাদের জন্য যেসব প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়ছে সেগুলোর ক্ষেত্রে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর জন্য, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয়ভাবে যেসব নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সেগুলো মোকাবেলা, বনায়ন এবং কৃষির ক্ষেত্রে মূলত সেসব খাতে আলাদা করে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তার কোনো সংকট যদি থাকে, সেটা তদারক করার বিষয়েও বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী পাচার, নারীদের নিরাপত্তাহীনতা, শিশুদের পুষ্টিহীনতা ও সুরক্ষার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।
মূল বক্তব্যে ফাহমিদা খাতুন জানান, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ সরকার ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত বিদেশি সাহায্য এসেছে ৩২২ মিলিয়ন ডলার। প্রায় ৭৪ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে পাওয়া গেছে। চলতি বছরের বাকি নয় মাসের জন্য সরকার আরও ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য চেয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে ক্যাম্প নির্মাণ করতে ২৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল।
মায়ানমারের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী প্রতিমাসে যদি ৩০০ জন করে রোহিঙ্গা ফেরত যায় তাহলে ২০২৫ সালের আগে এই সংকটের সমাধান হবে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী সাত বছর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় হবে চার হাজার ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার।
দেবপ্রিয় বলেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় কিংবা দেশজ আয়ের পুরোটাই রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করলে হয়ত অর্থনীতিতে ভারসাম্য আসবে। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের কিছুই আর বাংলাদেশের জনগণের জন্য থাকবে না। মোট বাজেটের দুই শতাংশ যদি শিক্ষা এবং এক শতাংশ যদি স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মোট বরাদ্দের তিনগুণ কিংবা তারও বেশি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সেখানকার বাংলাদেশিরা শ্রমবাজার হারাচ্ছে। যে শ্রমিকের দিনে ইনকাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা তার আয় এসে ঠেকেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কারণ সস্তায় রোহিঙ্গারা শ্রমবাজারে ঢুকে পড়েছে। সুতরাং স্থানীয় জনসাধারণকে রক্ষার জন্যও তো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংলাপে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ করার প্রস্তাব করলে উপস্থিত অনেকেই প্রতিবাদ করেন। এসনময় মায়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ‘মিলিটারি ডিপ্লোমেসি’ জোরদার করার দাবি জানান।
নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত এই সংলাপে আরও অংশ নেন ইউনিভার্সিটি অব সাইয়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ভিসি ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, নারীনেত্রী নূরজাহান খান ও জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্জুরুল আমিন, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।