Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর ঘোষণা দিলেন -অর্থমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অর্থমন্ত্র আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, তরুণদের ওপর বিশ্বাস রেখে এবার বাজেটে কর্পোরেট কর হার কমানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের যৌথ উদ্যোগে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি। সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এ এইচ মানসুর, বুয়েটের পেট্রোলিয়াম এবং খনিজ সম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তামিম, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান, সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান ও সিপিডির ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা।
সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে দুই স্তরের ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কর্পোরেট করের হার কমানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে তরুণ করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দেয়ার সাত মাসের মধ্যে বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান করা যাবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বিষয়টি আগামী বাজেট ঘোষণার পর পর্যালোচনা করা হবে। অর্থমন্ত্রী দেশের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কম্পিটিশন অ্যাক্ট’ জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠনের শেয়ার পুঁজিবাজারে না আসতে পারার বিষয়টি অত্যন্ত হতাশার বিষয় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে চারটি বিষয়ের ওপর প্যানেল আলোচনা হয়। সেগুলো হলোÑ কর ও ভ্যাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার সেশন। ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একটি দেশের অর্থনীতির ক্রমবিকাশের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ধীরগতি এবং উন্নয়ন কাজের গুণগতমান নিশ্চিতকরণে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই তা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে সরকারের টাকার অপচয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলোর গুণগত মান নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের আহŸান জানান।
কর ও ভ্যাট নিয়ে আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর একাধিক পর্যায়ে কর দিতে হয়। এ ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন। প্রদেয় কর অনেক সময় ফেরত পাওয়া যায় নাÑ অভিযোগ করে তারা কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর কর যাতে একবারই দেয়া যায় সেই ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আগামী বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক আমদানিকৃত এলএনজির সাথে দেশীয় গ্যাসের সংমিশ্রণ করার মাধ্যমে তা জাতীয় গ্রিডে প্রদান করা হবে এবং এলএনজির দাম যেন সহনীয় মাত্রায় থাকে সে বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। সব মিলে ‘আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব একটি বাজেট দেয়ার চেষ্টা করব।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, কর্পোরেট কর যৌক্তিক হারে পর্যায়ক্রমিকভাবে কমানোর প্রয়োজন এবং করের হার হ্রাসের ফলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণের উপর যেন কোনো অভিঘাত না আসে সে বিষয়ে যতœবান হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি দক্ষ জনবল তৈরি এবং গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেন।
পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এ এইচ মানসুর বলেন, গত সাত বছরে জিপিডিতে রাজস্বের অবদান আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পায়নি, যা উদ্বেগের বিষয়। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাÐ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে মনোনিবেশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান।
বুয়েটের পেট্রোলিয়াম এবং খনিজ সম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তামিম এলএনজির দাম সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান। প্রফেসর তামিম দেশীয় কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন গ্যাসক‚প খননের কার্যক্রম বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ফলে নতুন শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাবৃন্দ জমি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, তা নিরসন হবে। তিনি প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সাথে স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দরগুলোর যোগাযোগ স্থাপনের উপর জোরারোপ করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ