Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মহাকাশে উপগ্রহ পাঠিয়ে বিশ্ব দরবারে উচ্চ মর্যাদা পেয়েছি : প্রধানমন্ত্রী

ডাক্তার-নার্সদের সহানুভ‚তিশীল ব্যবহারেই রোগীদের অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যায়

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে উচ্চ মর্যাদার স্থানে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর মধ্য দিয়ে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা উচ্চ মর্যাদা পেয়েছি। মহাকাশে উগগ্রহ পাঠানোর তালিকায় ৫৭তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানের কথাও জানান তিনি। ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ছিল বলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আবার, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পেরেছে। আর, সরকার গঠন করে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। আর, সেই কাজের ফলেই আমরা বাংলাদেশকে আজকে মহাকাশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (এনআইএএনইআর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উপকারিতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু যে বিনোদন হবে তা নয়, এটা আমাদের সার্বিকভাবে কাজে লাগবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এটা ব্যবহার করতে পারব। আমাদের শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসাসেবাসহ এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারব। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এখন সারা বাংলাদেশে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে, পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চল ও দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে সমগ্র অঞ্চলেই এই সেবাটা পৌঁছে দিতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সঙ্গে শুধু আমাদের দেশের নয়, বেশ আরো কয়েকটি দেশ...তাদেরকে আমরা এখান থেকে কিছুটা স্পেস ভাড়া দিয়ে আমরা কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারব। সেই সুযোগটাও আমাদের আছে।
রোগীদের প্রতি চিকিৎসক ও নার্সদের সহানুভ‚তিমূলক আচরণের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে সেবা দেয়ার মনোভাবটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কাজেই আমাদের নার্স, ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট যারা তাদের মনে সবসময় এই কথাটাই থাকতে হবেÑ মানুষ যখন রোগী হয়ে আসে তখন ওষুধের থেকেও ডাক্তার-নার্সদের ব্যবহার, তাদের কথাবার্তা এবং তাদের সহানুভ‚তিশীল মনোভাব থেকেই কিন্তু অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে। আর আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধটা এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে রোগীদের উন্নত চিকিৎসার দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা বিষয় আমরা দেখি, রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনসিস) ব্যাপারে কেন যেন কোথায় একটা বিরাট ভুল হয়ে যায়। যদিও যন্ত্রপাতি এখন অনেক উন্নত। তবে, সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, এখন মেশিন অনেক মডার্ন, সেগুলো চালানোর মতো বা সেগুলো রিডিং করার মতো বা সেগুলোকে দেখার মতো সেই ধরনের স্কিলড মানুষ তৈরি করা প্রয়োজন। সেখানে কি করতে হবে, আমার মনে হয় আপনারা সেভাবেই ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা উদ্যোগ নিয়ে কি করতে হবে বলেন, আমরা করে দেবো। কোনো অসুবিধা নেই বলেও আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিষয়টার সুরাহা হওয়া দরকার। নইলে আমাদের একজন কেউ রোগী হলেই দৌড়াতে হবে সিঙ্গাপুর, দৌড়াতে হবে ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া অমুক জায়গায় কেন? আর তারা ভালোভাবে যদি পারে, আমরা কেন পারব না। এই প্রশ্নটাই বারবার আমার মনে হয়। তিনি বলেন, আমাদেরও পারতে হবে। সমমানের সমমর্যাদার চিকিৎসাসেবা আমরাও দিতে পারব। সেই অভিজ্ঞতা, সেই শক্তিটা আমাদের অর্জন করতে হবে।
দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার ও নার্সদের অপ্রতুলতার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েই ডাক্তারদের একটু সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আপনাদের একটু সংযত হতে হবে। দিনেরবেলা সরকারি চাকরি করবেন আর রাতে গিয়ে প্রাইভেট করবেন তারপর তো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনারা একটু হিসাব করে, যতটা ধারণ করতে পারেন ঠিক ততটাই করবেন।
হাসপাতালের বর্জ্যব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালগুলোর বর্জ্যব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটা কিন্তু এখনো আমাদের উন্নত হয়নি। এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নইলে রোগ তো ছড়াতেই থাকবে। এটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
অনুষ্ঠানে মুগদায় নার্সিং ইনস্টিটিউট হওয়ার প্রেক্ষিতে সেখানে একটি মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকেই (সাবের চৌধুরীকেই) সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসাসেবায় নার্সিং একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সেবা হওয়া উচিত বিশ্বমানের। এ দর্শন থেকেই ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরের সময় আমি কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসের উন্নয়নে সহযোগিতার অনুরোধ জানাই। কোরিয়া সরকার কোইকার (কেওআইসিএ) মাধ্যমে বাংলাদেশে নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (এনআইএএনইআর) নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। এ জন্য কোরিয়া সরকার এবং কোইকাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জাতির পিতার দর্শনকে ধারণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত ৯ বছরে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত নার্স ও চিকিৎসকের অনুপাত ২:১ অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে নার্সদের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৪৪৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ প্রদান করেছি। আরও পাঁচ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং প্রায় এক হাজার ২০০ জন মিডওয়াইফ নিয়োগের প্রক্রিয়া চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
শেখ হাসিনা জানান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২ নম্বর ইউনিট, কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল এবং জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চালু, গোপালগঞ্জে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু ইনস্টিটিউট, আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে বার্ন ইউনিট স্থাপন, হাসপাতালগুলোতে টেলিমেডিসিন সেবা স¤প্রসারণ এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং গাজীপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। চাঁনখারপুলে বিশেষায়িত ও অত্যাধুনিক ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে বলেন তিনি। তিনি জানান, সরকার আরো ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
স্ব^াস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কোইকা সহ-সভাপতি কিয়াংগুন সুল, কোইকার সাউথ এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়ো ইয়ং কিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ