Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঋণের উচ্চ সুদে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমছে

সানেমের সেমিনারে বক্তারা

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সুপারিশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমছে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে। আসছে না নতুন বিনিয়োগও। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলে দাম কমলে দেশে সমন্বয় করা হয়নি। আর এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাত খরচ কমাতে লোকবল ছাঁটাই করছে, যা সরাসরি কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে না। গতকাল শনিবার বনানীর গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। ‘লুকিং বিওন্ড এলডিজি গ্রাজুয়েশন’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলোর রেটিংয়ে উত্তরণ ঘটবে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা করবে। তবে এর সাথে বেশ কিছু ঝুঁকির সম্মুখীনও হতে হবে। এর মধ্যে এসডিজি অর্জনের প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা প্রধানতম। ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণ করলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত এবং চায়নার বাজারগুলোতে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার হারাবে। এতে বার্ষিক রফতানির ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে, যার অর্থমূল্য বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ৬ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) সদস্য হিসেবে পাওয়া নানা সুবিধা যেমন শুল্ক হ্রাস, ভর্তুকি এবং মেধাসত্ত¡ আইনে শিথিলতা আর থাকবে না। এ অবস্থায় টিকে থাকলে হলে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
এতে আরো বলা হয়েছে, বিনিয়োগ বান্ধব নীতির অভাব, দুর্বল প্রতিযোগিতা, সংবেদনশীল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যয়বহুল প্রকল্প এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শ্লথগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মানের উন্নয়ন, বাণিজ্যনীতি, মুদ্রা ও রাজস্বনীতি, শিল্পনীতির সংস্কার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করলেও বেসরকারি খাত এখনো এলডিসির ভার বহন করতে প্রস্তুত নয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গফুট জমি অধিগ্রহণ করতে ১০০ ডলার খরচ হয়, সেখানে ভিয়েতনামে আরো কম খরচে দীর্ঘ মেয়াদি লিজ পাওয়া যায়। জ্বালানি তেল- বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তারপরও এখনো উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ আছে, কিন্তু খরচ কমাতে না পারলে সেটি কাজে আসবে না।
তিনি আরো বলেন, এখন ব্যাংকগুলো চিঠি দিয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ ঋণের সুদ হারানোর কথা বলছে। রফতানি খাত, উৎপাদনশীল খাত ও স্থানীয় ব্যবসায় এতে মুনাফা করে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগী সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে লোকবল ছাঁটাই করছে। আক্ষেপ করে নাসিম মঞ্জুর বলেন, যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে ব্যাংকগুলো তাদের কাছ থেকে ১২ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। অথচ যারা শীর্ষ পর্যায়ে ঋণ খেলাপি তাদের ডাউনপেমেন্ট ছাড়াই কম সুদে, ৩-৪ বছর গ্রেস পিরিয়ড বেশি ও ১২-১৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছে। তাহলে সৎ ব্যবসায়ীদের কী নৈতিক বার্তা দেয়া হচ্ছে।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এসএমই ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে সেটা সামান্য। কিন্তু বড় শিল্প খেলাপি হলে পুরো ব্যাংকিং খাতের ওপর প্রভাব পড়ে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও বিপিসির লোকসান পূরণে দেশের বাজারে দাম কমানো হয়নি। বর্তমানে বিপিসির লোকসান শেষ হয়ে লাভ হওয়ায় কথা। কিন্তু তারপরও কেন দাম কমানো হচ্ছে না? শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানো তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ করা উচিত। তা না হলে বেসরকারি বিদ্যুৎ শিল্পের মতো উৎপাদনমুখী খাতকেও রেয়াতি হারে তেল আমদানির সুযোগ দেয়া উচিত।
সিপিডির রিসার্স ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত বছর ব্যাংকে প্রচুর টাকা ছিল। হঠাৎ করে কী হলো ব্যাংকে টাকা নেই। আমদানি প্রবৃদ্ধি দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা যায় না। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যে অনাদায়ী ঋণের হিসাব দেয়, সেখানে ঝামেলা থাকতে পারে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, এলডিসির কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে সুযোগ-সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ সেটি মোকাবিলায় ধীরে ধীরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল টিমের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সাঈদ মুর্শিদ, সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ ও সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার প্রমুখ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ