Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ায় দল ও জোট থেকে নাজিব রাজাকের পদত্যাগ

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দলকে ভরাডুবি ঘটানোর পর মালয়েশিয়ায় ৬১ বছর ক্ষমতায় থাকা ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) দলের প্রেসিডেন্ট পদ ত্যাগ করেছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। একই সাথে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বারিশান ন্যাশনাল জোটের চেয়ারম্যান পদও ত্যাগ করেছেন তিনি। অন্যদিকে তার ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরাপ করার খবর জানা গেছে। খবর অনলাইন স্ট্রেইট টাইমস।
খবরে জানা যায়, বুধবার অনুষ্ঠিত ১৪তম জাতীয় নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয় ঘটেছে তার। এরপর তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরাজয়কে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং নৈতিক দায়বোধ থেকে ওই দুটি পদ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
নাজিব রাজাকের নামের আগে বৃহস্পতিবার যুক্ত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে দুর্নীতির ইঙ্গিত দিয়ে রিপোর্টে তাকে বিতর্কিত বা কনট্রোভার্সিয়াল প্রধানমন্ত্রী আখ্যায়িত করা হচ্ছে। পরাজয় নিয়ে নাজিব রাজাক বলেছেন, নির্বাচনে ইউএমএনও এবং বিএন খুব বাজেভাবে পরাজিত হয়েছে। তাই ইউএমএনও দলের প্রেসিডেন্ট এবং বিএন জোটের চেয়ারম্যান পদ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেকোনো ব্যক্তি, যিনি একজন নেতা, তিনি যদি ব্যর্থ হন তাহলে ওই পরাজয় মেনে নেয়ার তার দায়িত্ব। আমি মুক্তমনে তা মেনে নিলাম। অনেক কিছুকে দায়ী করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এটা রাজনীতির গেমের আরেক নাম। যা ঘটে গেছে তার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাই মুক্তমনে সব মেনে নিচ্ছি। ১২ই মে শনিবার পুত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ইউএমএনও দলের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনের চেয়ারম্যান ও ইউএমএনও দলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি। অন্যদিকে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিন হোসেন ইউএমএনও দলের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এবং বিএন জোটের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ও আস্থা রাখার জন্য ইউএমএনও এবং বিএন সদস্যদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন নাজিব রাজাক। তাদেরকে তিনি বলেন, নতুন নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়ে এটা নিশ্চিত করুন যে জোট যাতে যেকোনো রকম গুরুতর চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারে। একই সময়ে তিনি ইউএমএনও এবং বিএনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আহŸান জানান।
নাজিব ও স্ত্রীর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এদিকে নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী রোজমাহ মানসুরকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নাজিব এখন মালয়েশিয়ায় কালো তালিকাভুক্ত। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় ফেসবুকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পোস্ট দিয়ে নিশ্চিত করেছে।
শনিবার একটি বেসরকারি বিমানে করে নাজিবের ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তার স্ত্রীও। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর তিনি সেই সফর বাতিল করেছেন। বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার প্রতি তিনি সম্মান দেখাবেন এবং দেশেই অবস্থান করবেন।
মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইন, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, অভিবাসন বিষয়ক মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী আগে বলেছিলেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব ও তার স্ত্রীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে যে রিপোর্ট বেরিয়েছে তা সত্য নয়। তিনি বলেছেন, তারা কেউই কালো তালিকাভুক্ত নন। তবে তারা গোপনে একটি ফ্লাইটে করে ইন্দোনেশিয়ায় চলে যাচ্ছেন এমন খবর ফাঁস হয় মিডিয়ায়। এ জন্য সুবাং জয়ায় অবস্থিত সুবাং সুলতান আবদুল আজিজ শাহ এয়ারপোর্টে শনিবার সকালে তাদের চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যায় নি। তাদের দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও শতাধিক মানুষ জড়ো হন বিমানবন্দরে, যাতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে না পারেন। তবে তাদেরকে বিমানবন্দরটির বাইরে দেখা গেছে বলে এক খবরে বলা হয়। তারা তখন ভিআইপি গেটের খুব কাছে ছিলেন। বিমান বন্দরের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে লাইট স্ট্রাইক ফোর্সের একটি টিম। এক পর্যায়ে বিমানবন্দরে রঙিন গøাসের একটি সাদা মাল্টি পারপাজ ভ্যান (এমপিভি) এসে উপস্থিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এক নাটকীয়তা। লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা মনে করতে থাকে ওই গাড়িতে নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী ছিলেন। এটা ভেবে তারা ওই গাড়ির ওপর হামলা চালায়। এতে জানালা ভেঙে যায়। কিন্তু ভিতর থেকে নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী নন, বেরিয়ে আসেন সাবেক মন্ত্রী শাহিদান কাসিম। আবার এক রিপোর্টে বলা হয়, নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় একটি বেরসকারি জেট বিমানে করে জাকার্তা যাবেন। ওদিকে ফেসবুকে নাজিব রাজাক একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের বিরতি নেবেন। শনিবার তিনি দেশের বাইরে যাবেন এবং ফিরে আসবেন পরের সপ্তাহে। তার এ ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই অভিবাসন বিভাগ থেকে তাদের সরকারি ফেসবুক পেজে বলা হয়, নাজিব ও তার স্ত্রী রোজমাহ মানসুরকে মালয়েশিয়া ছাড়ার ওপর কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর জবাবে টুইট করেছেন নাজিব। তিনি লিখেছেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, আমাকে ও আমার পরিবারকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেবে না মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ। আমি এ নির্দেশের প্রতি সম্মান দেখাব এবং দেশেই অবস্থান করবো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ