Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নোয়াখালী জেলা শহরে উচ্ছেদকৃত মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক পরিবারের দুর্ভোগ

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদাদাতা, নোয়াখালী থেকে : বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ ও মিডিয়া বান্ধব হলেও প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার নোয়াখালী জেলা শহরে উচ্ছেদকৃত ৮৫টি মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রের শিকার মুক্তিযোদ্বা ও সাংবাদিকগন কবে নাগাদ বসতভিটির স্থায়ী বন্দোবস্ত পাবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। ইতিমধ্যে আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্থ কয়েকজন ভূক্তভোগী মৃত্যুবরণ করেন এছাড়া অসুস্থ কয়েকজন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধী দলীয় উপনেতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আবদুল হামিদ এর নেতৃত্বে একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল বিগত ২০০৩ সালের মে মাসে ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের লক্ষ্যে নোয়াখালী সফর করেন। উক্ত প্রতিনিধি দলে ছিলেন, আওয়ামী লীগের তৎকলীন সাধারন সম্পাদক আবদুল জলিল, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বর্তমান কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। পরে প্রতিনিধি দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় এডভোকেট আবদুল হামিদ এমপি বলেন, আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে উক্ত ভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরেও ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্বা ও সাংবাদিকরা ভূমি বন্দোবস্ত লাভ করেনি উপরোন্ত মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকগন যাতে উক্ত ভূমি বন্দোবস্ত পেতে না পারে - সেজন্য যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, বিগত ১৯৮৭ সালে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী মাইদুল ইসলাম নোয়াখালী সফরকালে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নোয়াখালী সদর উপজেলার ১০১নং পূর্ব লক্ষীনারায়নপুর মৌজার ১৫০১, ১৫০২, ১৫০৩, ১৫২০, ১৫২৫, ১৫২৭, ১৫২৮, ১৫২৯, ১৫৩০ ও ১৫৩১ দাগে মোট ৫.০৩ একর পতিত ভূমি মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের অনুকুলে বসবাসে বরাদ্দ প্রদানের জন্য পূর্তমন্ত্রী শেখ সহিদুল ইসলাম বরাবরে প্রেরন করেন। এর প্রেক্ষিতে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ১৯৯০ সালে আবেদিত ভূমিকে বেসরকারী হাউজিং ঘোষনা করে আবেদনকারীদের অনুকুলে উক্ত ভূমি বরাদ্দ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত নির্দেশ প্রদান করেন। পূর্ত মন্ত্রনালয়ের আদেশ বাস্তবায়নে হাউজিং অধিদপ্তরের বিলম্বের প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক আবেদিত ভূমি সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের নামে স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়ার লক্ষে উক্তভূমি হুকুমদখল এবং স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদান সাপেক্ষে আবেদনকারীদের অনুকুলে উক্ত ভূমি অস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করেন। ভূমি মন্ত্রনালয়ের আনুষ্ঠানিকতা অনুমোদনের পর মূল্য নির্ধারণ ও স্থায়ী বন্দোবস্ত নথি সৃজন করা হয়। ২০০১ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক এম এ হাফিজ আবেদিত ভূমি তৎকালীন মৌজা রেইট অনুযায়ী প্রতি শতাংশ ৯৪৬২.৮২ টাকা নির্ধারণ করে আবেদনকারীদের নথি অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেন। একই বছরের শেষের দিকে তদানীন্তন জেলা প্রশাসক কে,এম,ডি আবুল কালাম আবেদিত ভূমিতে আবেদনকারীদের বসবাসের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহনির্মাণ উদ্বোধন করেন। মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসক কর্তৃক গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম উদ্বোধনের পর বসবাসের জন্য পতিত ভূমি ভরাট, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ গ্রহন এবং ৬৫টি পাকা ও সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।
২০০৩ সালের মে মাসে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল হায়দার বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। জেলা প্রশাসকের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকগন তৎকালীন এমপি ও জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে উক্ত ভূমি স্থায়ী বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া ও সকল কাগজপত্র প্রদর্শন করলে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়। কিন্তু ২০০৩ সালের ১০ মে ভোররাতে হঠাৎ করে শতাধিক পুলিশের নেতৃত্বে কয়েক শতাধিক শ্রমিক, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী বুলডোজার নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের ঘরবাড়ী নিমিষে ধ্বংশস্তুপে পরিণত করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
২০০৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকগন জেলা প্রশাসক কর্তৃক অন্যায় ও আইন বর্হিঃভূত উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করেন। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট রীটকারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের অনুকুলে আদেশ প্রদান এবং ২০০১ সালে জেলা প্রশাসক এম এ হাফিজ প্রেরিত পত্র বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেন। হাইকোর্টের উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন। সুপ্রীম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সরকারের আপীল খারিজ করেন। সুপ্রীম কোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস আবেদিত ভূমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু এবং হাইকোর্টের নির্দেশিত আদেশ উপেক্ষা করে অস্বাভাবিকহারে ভূমির মূল্য বৃদ্ধি করে এটি অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করেন। ভূমি মন্ত্রনালয় জেলা প্রশাসক প্রেরিত মূল্য নির্ধারন অনুমোদন করে বন্দোবস্ত প্রদানের ছাড়পত্র প্রদান করেন। উল্লেখ্য, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক নীতিমালা ও পূর্বাপর পতিত ভূমি উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনুধাবন না করে শহরের বানিজ্যিক প্রøটের ন্যায় উক্ত ভূমি তিন চারগুন মূল্য নির্ধারন করেন। যাহা মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবিদের পক্ষে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করা সম্ভবপর নয়। জেলা প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের অনুকুলে প্রতি শতাংশ ভূমি ১২ লাখ টাকার অধিক নির্ধারণ করেন। অথচ নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুইশত গজ পশ্চিমে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নোয়াখালী সুপার মার্কেটের অনুকুলে ২০০৬ সালে প্রতি শতাংশ ভূমি ৩ লাখ টাকা, মাইজদী হাইজিং দ্বিতীয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে জমি ভরাট ও সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে ২০১৪ সালে প্রতি কাঠা ভূমি মাত্র ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের চিরতরে বঞ্চিত করার লক্ষে জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভূমির মূল্য ১২ লাখ টাকায় নির্ধারণ করে।
এব্যাপারে উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্থ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন এবং বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, তৎকালীন সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ৮৫টি মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবার। আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মিডিয়া বান্ধব সরকার। ২০০১ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের আলোকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের উক্ত ভূমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে হবে। এজন্য আমরা প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আবদুল হামিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী শেখ হসিনা’র হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ