পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা যেখানে লোকসান গুনছে, সেখানেও দেদারসে ব্যবসা করছে এজেন্ট ব্যাংক। কোনও ধরণের শাখা ছাড়াই চলছে এই ব্যাংকিং। লেনদেনও হচ্ছে ব্যাংকের আদলেই। ব্যাংকের শাখার মতোই গ্রাহক বিভিন্ন ধরনের সেবা নিচ্ছেন। গ্রাহক তার চাহিদা মতো ঋণ পাচ্ছেন, আবার তা পরিশোধও করতে পারছেন।
সারাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং এর চার হাজার ৯০৫টি আউটলেটে ১৪ লাখেরও বেশি গ্রাহক বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন গ্রাহক হয়েছেন দুই লাখ ৫৪ হাজার ৪৩০ জন। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৭ জনে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৭ জন। ২০১৭ সালের জুন শেষে যা ছিল আট লাখ ৭২ হাজার ৮৬৫ জন। এই হিসাবে গত নয় মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন গ্রাহক হয়েছেন প্রায় ছয় লাখ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তিন হাজার ২১৬টি এজেন্টের আওতায় চার হাজার ৯০৫টি আউটলেটের মাধ্যমে সারাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যার দিক থেকে ব্যাংক এশিয়া সবার শীর্ষে অবস্থান করছে।
২০১৮ সালের মার্চ মাস শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে মোট জমার পরিমাণ (আমানত) দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ২৩৫ কোটি টাকা। এই হিসাবে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৭৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গড়ে গ্রাহক বেড়েছে ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। একক ব্যাংক হিসাবে গত তিন মাসে সবচেয়ে গ্রাহক বেড়েছে বেশি ইসলামী ব্যাংকে। এই ব্যাংকটির গ্রাহক বাড়ার প্রবৃদ্ধি ১১৫২ দশমকি ১৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে এই ব্যাংকটিতে গ্রাহক ছিল এক হাজার ৩১৯ জন। মার্চে এসে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫১৬ জনে। তবে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক এখন ডাচ বাংলা ব্যাংকের। এই ব্যাংকটির গ্রাহক এখন প্রায় নয় লাখ।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ব্যাংকগুলো হলো, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অনেক ইউনিয়নেও পাওয়া যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। এজেন্ট ব্যাংকিং নামের এইসব আউটলেট থেকে ব্যাংকের শাখার মতোই গ্রাহকরা নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলছেন, তাতে ইচ্ছেমতো টাকা জমা ও উত্তোলন করছেন। যখন-তখন এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরও (দেশের ভেতর) করা যাচ্ছে। এমনকি এখান থেকে বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্পও চালু হচ্ছে। একইভাবে আমানতের টাকা প্রতি মাসে জমাও নেওয়া হচ্ছে, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিলও পরিশোধ করা হচ্ছে এখান থেকেই। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরনের ভর্তুকিও গ্রহণ করা হচ্ছে এই এজেন্ট ব্যাংক থেকেই। এ কারণে দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে এই এজেন্ট ব্যাংকিং। ফলে লেনদেনের পাশাপাশি বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমলেও দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক। তবে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে রেমিটেন্স সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এজেন্ট ব্যাংকিং অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মার্চ পর্যন্ত ১৬ ব্যাংকের চার হাজার ৯০৫টি আউটলেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের দুই হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা রেমিটেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে বিতরণকৃত রেমিটেন্সের পরিমাণ দুই হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং শহরাঞ্চলে বিতরণকৃত রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৭৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেশি। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে খোলা মোট হিসাব সংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি হিসাব খুলেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্যাংক এশিয়া লি. এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে এখন আট লাখ ৮৪ হাজার ৬৮০ জন গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ব্যাংক এশিয়ায় রয়েছে তিন লাখ ৮০ হাজার ৯৩৬ জন গ্রাহক। আর আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে রয়েছে ৮৩ হাজার ৭৮৪ জন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।