পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছেনি নার্সিং পেশা
হাসান সোহেল : চারদিকে যুদ্ধের বিভীষিকা, আহত সৈনিকদের আর্তচিৎকার। তাঁদের সেবায় ছুটে চলেছেন এক নারী। ১৮৫৪ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের পাশে এই নারী বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেবার হাত। জীবদ্দশায় ‘এ লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই নারী ছিলেনÑ ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল’। তিনি ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালীর ফ্লোরেন্স শহরে জš§ গ্রহন করেন। আধুনিক নার্সিং-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জš§দিনকে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সূত্র মতে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ঠিক করেছিলেন সেবিকা হবেন। সে যুগে ধনী পরিবারের শিক্ষিত নারীরা এ কাজ করতেন না, সমাজে এটি বিবেচিত হতো ছোট কাজ হিসেবে। মা-বাবার ঘোর আপত্তি সত্তে¡ও ফ্লোরেন্স নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। অবশেষে মা-বাবা বাধ্য হয়ে তাঁকে অনুমতি দিলেন। একটি হাসপাতালে শুরু করেন সেবিকার কাজ। আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত বলা হয় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে, যাঁর খ্যাতি দুনিয়াজুড়ে। ফ্লোরেন্সের মতো অনেকেই আসতে চান সেবামূলক এ পেশায়। চিকিৎসা ব্যবস্থায় ও রোগীদের সেবার বিষয়ে ৯০ শতাংশই দায়িত্ব পালন করে থাকেন নার্স বা সেবক-সেবিকাগণ। তবে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও অবহেলার কারণে কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছেনি নার্সিং পেশা। আর তাই তরুণ-তরুনীদের আগ্রহও খুবই কম। এদিকে নার্সিং পেশার উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও রোগীরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। এমনকি সাধারণ নার্সরাও হচ্ছেন অধিকার বঞ্চিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রকৃত মেধাবী নার্সিং অফিসারদের অবমূল্যায়ন, ঘুষ ও দূর্নীতির কারনে নার্সিং পেশা দূর্বল হয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী রোগীর বিছানা, চিকিৎসক এবং নার্সের অনুপাত হতে হবে ১:৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত ৩ জন নার্স থাকতে হবে। সেই হিসাবে দেশে প্রায় ৩ লাখ নার্সের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ভাবে কর্মরত আছে মাত্র ২৮ আটাশ হাজার। যা চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। এতে করে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবার স্বাভাবিক গতি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেশাগত উৎকর্ষতা সাধন এবং দায়ত্বপ্রবণ হলে বর্তমানে নিযুক্ত নার্স দিয়ে আরও ভাল সেবা পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও নার্সিং কাউন্সিলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সঙ্গে নার্সিং পেশাকে আরো এগিয়ে নিতে এবং এ পেশার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে নার্সিং পেশার সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়াতে হবে।
ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর এ কে আজাদ খান বলেন, আমাদের দেশের নার্সদের বিশ্বমানের দক্ষতা আছে। তবে তাদের ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করলে তারা প্রখম শ্রেণীর সমমানে পৌঁছাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, নার্সিং কোন পেশা নয় এটা এক একধরনের ইবাদত। অসুস্থ্য একজন মানুষ চিকিৎসা শেষে যখন সুস্থতার হাসি হাসে, সেটাই বড় পাওয়া। নার্সদের মধ্যে এই চিন্তা থাকলে দেশের চিকিৎসা সেবার মান আরও বাড়বে।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ-স্বানাপের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে নার্সিং পেশা ক্রমাগত দূর্বল হয়ে পড়ছে। এতে করে নার্স এবং রোগী উভয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নার্সিং পেশায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি নার্সিং পেশার মান সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও নার্সিং কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের অপসারণ করে সৎ ও যোগ্য লোক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার বলেন, আনুপাতিক হারে নার্সের সংখ্যা কম হলেও নার্স নিয়োগ অব্যহত রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বিপুল সংখ্যক নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশে রোগী, হাসপাতাল ও চিকিৎসক বাড়ার কারনে নার্সের সংখ্যা কম মনে হচ্ছে। তবে ৫ হাজার নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি এই সমস্যার সমাধান হবে। জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে বাংলাদেশে রহিমা খাতুন, সাহাজাদী হারুন, জোহরা বানু, আক্তার বানুর মতো কয়েক জনের হাত ধরে এই পেশার যাত্রা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স নিয়োগের পাশাপাশি বর্তমান সরকার সেবা পরিদফতরকে অধিদফতরে রূপান্তর ও নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান এবং প্রথম শ্রেণীর নার্সিং পদ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এম.এস.সি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারি ৬২টি নার্সিং প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ২১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর সরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৫ হাজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১১ হাজারের বেশি নার্স নার্সিং কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত হন। এদিকে নার্সদের উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নানা পদক্ষেপ আসলেও এখনো সমাধান করা হয়নি ২০০৩ সালে চাকরিতে যোগদান করা নার্সদের পদবীর বিষয়টি। ওই সময়ে নিয়োগ পাওয়া নার্সদের মতে, তখন ক্ষমতায় থাকা সরকারের একটি সিদ্ধান্তের কারণে ২০০৩ সালে চাকরিতে যোগদান করা নার্সরা এখনো বৈষম্যের স্বীকার। ওই ব্যাচের নার্সরা দীর্ঘ ১৬ বছর চাকুরী করেও সিনিয়র স্টাফ নার্স পদবি লিখেতে পারছে না। অথচ ২০১৩ বা সর্বশেষ ২০১৬ সালেও যেসব নার্স নিয়োগ পেয়েছেন তারাও পদবি হিসেবে সিনিয়র স্টাফ নার্স লিখছেন। একাধিক নার্স জানান, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব যুক্তি দেখান চাকরিতে প্রবেশ করেই সিনিয়র হবে কেন। স্টাফ নার্স হিসেবে যোগদান করে পরবর্তীতে প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র হবে। আর এ যুক্তিতে ওই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া নার্সরা আজও সিনিয়রিটি পাননি।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নার্সেস বলিষ্ট কণ্ঠস্বরÑ স্বাস্থ্য মানবিক অধিকার’। এবারের নার্সিং দিবসটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজধানীর মুগদায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সারাদেশে বিশেষ গুরুত্বসহকারে দিবসটি পালিত হবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।