Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা

অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুর মামলায় ১০৩ বিএনপি নেতাকর্মী

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 মোঃ হেদায়েত উল্লাহ, টঙ্গী থেকে : সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা কাটলেও টঙ্গী থানা পুলিশ কর্তৃক বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৪৮ জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০৩ জনের বিরুদ্ধে কথিত লেগুনা ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ মামলার ঘটনায় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাটেনি। এ ঘটনায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এসপি হারুন অর রশিদ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ আরো জোরদার হয়ে উঠছে। এ নিয়ে গত কয়েকদি ধরে মহানগরীর সর্বত্র নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।

গত ৬ মে রোববার হাইকোর্ট কর্তৃক গাজীপুর সিটির নির্বাচন স্থগিত করার পর টঙ্গী থানা পুলিশ যে লেগুনাটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৪৮ জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০৩ জনের বিরুদ্ধে কথিত লেগুনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলা করেছে সেই লেগুনাটি বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় টঙ্গী থানায় পড়ে আছে। লেগুনাটির মালিক ও চালকও বলছে গাড়িতে কেউ হামলা কিংবা অগ্নি সংযোগ করেনি। পুলিশ গাড়িটি আটক করে থানায় নিয়ে আসে এবং বলে এই গাড়িতে এজাহারভুক্ত আসামীরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
এদিকে একটি অক্ষত গাড়ি আটক করে এনে তাতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পর গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকার ব্যাপারে জনমনে সংশয় আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আগেই বলেছি গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করতে। আমার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই সাজানো মামলা তার নির্দেশেই হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, এই পুলিশ সুপারকে অতিশীঘ্রই গাজীপুর থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং আমাদের সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে হবে।
গত ৬ মে রোববার আদালতের নির্দেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ হাসান সরকারের বাড়ির আশপাশে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ১৩ জনকে আটক করে। ঐদিন রাত ১০টার পর আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১২ জনসহ ১০৩ জনের নাম উল্লেখ করে পরদিন ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করে পুলিশ। এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি আছে আরও এক শ’ থেকে দেড় শ’ জন। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ৪৮ জনই বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখিত মামলার আসামীরা হলেন, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম, বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মাজহারুল আলম, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ইজাদুর রহমান, বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের চার চাচাতো ভাই সালাহ উদ্দিন সরকার, পাপ্পু সরকার, নকিব উদ্দিন সরকার ও অপু সরকার। এ ছাড়া ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে কোনাবাড়ী ইউনিটের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস সরকার, ১৯ থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে কাউলতিয়া ইউনিটের দায়িত্বে থাকা নাজিম উদ্দিন চেয়ারম্যান, ১৩ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সুরুজ, ২৩ থেকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে গাছা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা হাজি সামাদ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের একাধিক কাউন্সিলর, বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকেও আসামি করা হয়। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে একটি লেগুনা গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৬০৮০), কাচের টুকরা ও ১০টি ইটের টুকরা। বৃহস্পতিবারও মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়িটি অক্ষত অবস্থায় থানায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উৎসুক লোকজন গাড়িটি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। গাড়িটির কোথাও ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের কোনো চিহ্ন নেই অথচ পুলিশ বলছে লেগুনাটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। লেগুনা গাড়িটির মালিক গাজীপুরের কামারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আলামিন বলেন, ৬ মে রোববার বেলা পৌনে তিনটায় লেগুনাটি রিক্যুইজিশন করেছিল পুলিশ। সাড়ে চারটার দিকে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকা থেকে তিন-চারজনকে আটক করে ওই গাড়িতে তোলা হয়। থানার দিকে যাওয়ার পথে গাড়ি নষ্ট হওয়ায় পুলিশ অন্য গাড়ি নিয়ে চলে যায়। গাড়িটি ঠিক করে ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে থানার সামনে থেকে আবার পুলিশ আটক করে গাড়িটি থানার ভেতরে নিয়ে আসে। একই বিবরণ গাড়িটির চালক রকিবও দিয়েছেন সাংবাদিকদেও কাছে। গাড়িটিতে আগুন দেওয়া বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেন তারা দুজনই।
এ ব্যাপারে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এজাহারে উল্লেখিত ঘটনা সত্য। লেগুনার মালিক গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য মিথ্যা বলতে পারেন। এই ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছেন, বিএনপি নেতার্মীদের বিরুদ্ধে এই মামলা করে সামনের নির্বাচনে পুলিশ সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থীকে সুবিধা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যাতে পরে নির্বাচন হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পালিয়ে থাকতে হয় এবং সেই সুযোগে খালি মাঠে আওয়মী লীগ প্রাথূী সহজে জয়লাভ করতে পারে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে পুলিশ এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বেছে বেছে নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত নেতাদের আসামি করেছে যাতে বিএনপি প্রার্থী মাঠে কাজ করতে না পারে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ