Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদপ্রত্যাশীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ

সোহরাওয়ার্দীতে আজ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান ও এহসান আব্দুল্লাহ : দুই বছর নয় মাস পর আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে ছাত্রলীগের দু-দিনব্যাপী দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। ২০১৫ সালে জুলাই মাসে আগের সম্মেলনে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি এবং এসএম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছিল। বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ সূত্রে পাওয়া তথ্য জানা যায়, এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার জন্য ৩২৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি পদের জন্য ১২৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২০০ জন ফরম তুলেছেন।
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৬৮ বছর। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জন্মের শুরু থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের এ্যাসেম্বলি হলে তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ঝাঁক মেধাবী ও প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভার মধ্য দিয়ে এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের প্রথম আহŸায়ক ছিলেন নাঈমউদ্দিন আহমেদ। ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলে এর সভাপতি মনোনীত হন দবিরুল ইসলাম। সাইফুর রহমান সোহাগ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি হিসাবে দায়িত্বে আছেন। ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে তিনি সংগঠনটির ২৮তম সভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেক নেওয়াজ খান। এসএম জাকির হোসেন ছাত্রলীগের বর্তমান নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক
এদিকে, ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগ মুহুর্তে সংগঠনটির শীর্ষ পদ পেতে তদবিরে ব্যস্ত এখন কয়েকশ নেতা। অনেকেই পদ পেতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের দ্বাড়ে দ্বাড়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। দোয়া নিচ্ছেন। আশির্বাদ প্রার্থনা করছেন। তবে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, সাবেক নেতাদের গড়ে ওঠা ‘সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ’ নিয়ে এবার পদ পাওয়া সম্ভব নয়।
কাউন্সিলরদের ভোটে, না সমঝোতায় হবে নতুন কমিটি- সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না হলেও গেল সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সমঝোতার বিষয়টিকে’ প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত দেন।
ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হবে। ইতোমধ্যে কে কে প্রার্থী তাদের তালিকা নেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি আছে। তালিকায় আসা আগ্রহীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। হলে এই কমিটির প্রেস রিলিজ দেয়া হবে। এতে সফল না হলে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট হবে।
ভোটের কথা বললেও ভোটের ‘ঝামেলা’র কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন, তারা ইয়াং ছেলেপুলে, ভোটের মধ্যে অনেক কিছুই হতে পারে। তারা প্রভাবিত হতে পারে। তবে আমরা দেখবো ভোটের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব এসেছে কি না। না এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবারের সম্মেলন নিয়ে ছাত্রলীগ সহ আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়েও চলছে নানা হিসেব নিকেষ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলনে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে চলছে ব্যাপক অনুসন্ধান। নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পাশাপাশি দলীয় প্রতিবেদনও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানা গেছে ক্ষমতাসীন মহল থেকে। মূলত বিগত দিনগুলোতে চলে আসা শিবির বা ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠার কারণে এ ব্যাপারে কঠোর হতেই এমন পদক্ষেপ।
ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় ‘সিন্ডিকেট’ প্রভাবের কথা। তবে সেই ‘সিন্ডিকেট’ এবার থাকছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমি চাই ত্যাগী, যোগ্য নেতৃত্ব। কারও পকেটের কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব হবে না। কোন সিন্ডিকেট দ্বারা ছাত্রলীগ চলবে না।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন, সহসভাপতি রুহুল আমিন, আইন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, প্রচার সম্পাদক সাইফুদ্দিন বাবু, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ আরিফিন, সদস্য রেজুয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম, স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান ইমরান, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম হাবিবুল্লা বিপ্লব, সহসম্পাদক খাদিমুল বাসার জয়, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন প্রিন্স, জহুরুল হক হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল, এএফ রহমান হলের সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রানা হামিদ, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু, উপ-স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার বৈদ্য, জিয়া হলের সাবেক সভাপতি আবু সালমান প্রধান শাওন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি শেখ তুহিন।
এছাড়াও এবারে নারীরাও আসতে পারে শীর্ষ নেতৃত্বে। গত কয়েকবার শীর্ষপদে নারী নেতৃত্ব আসার গুঞ্জন শোনা গেলেও সিন্ডিকেটের প্রভাবে তারা ছিটকে পড়েন। তাই ছাত্রলীগের মতো একটি প্রগতিশীল সংগঠনে নারী নেতৃত্বের উঠে আসার ব্যাপারেও আলোচনা হচ্ছে বলে জানা যায়। নারী নেত্রীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি চৈতালি হাওলাদার চৈতি। তাছাড়া শীর্ষ পদের একটির আসতে পারেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনও।
পদপ্রত্যাশী কয়েকশ জনের অনেকের বিরুদ্ধেই আছে নানা অভিযোগ। অনেকেই আলোচিত সিন্ডিকেটের কাছের লোক হিসেবেও পরিচিত। অনেকের রয়েছে পারিবারিক সমস্যা। অনেকের পরিবার আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবেও চিহ্নিত। ছাত্রলীগে এরা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে সংগঠনের পদপদবি ব্যবহার করে টেন্ডার, চাঁদাবাজীর অভিযোগ। অনেকে আবার মাদক সেবী ও মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠে এসেছে। আবার আছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত এবং হত্যা মামলার আসামীও। অনেকে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক বয়সসীমা অতিক্রম করেছেন ইতোমধ্যেই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ২৭ বছরের কথা বলা থাকলেও ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা কিছুটা শিথিল করে সেটাকে ২৯ করার পক্ষে মত দেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর প্রাধান্য পেয়ে এলেও এবার এর বাইরে থেকেও শীর্ষ পদে কেউ আসতে পারেন বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি লিয়াকত শিকদার ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের মতো ঢাবির বাইরে থেকে নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি বায়জিদ আহম্মেদ খান, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ কনক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপপরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সুরঞ্জন ঘোষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি আপেল মাহমুদ আছেন।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, এবারে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আমাদের সিলেকশন ও ইলেকশন দুটিরই প্রস্তুতি আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলবেন আমরা সেভাবেই করতে প্রস্তুত।
বিভিন্ন অভিযোগ ও বেøইম গেইমের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাকির বলেন, অভিযুক্তদের ব্যাপারে সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে। আর এবার অভিয্ক্তুদের আসার কোন সম্ভাবনা নেই। বেøইম গেইমের ক্ষেত্রে কোন বেøইম মিথ্যা প্রমাণিত হলে যে বেøইম দিবে তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিবে। সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্মেলনের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন। ###

 

 



 

Show all comments
  • আজগর ১১ মে, ২০১৮, ২:৫৮ এএম says : 0
    ছাত্রদের হাতেই যেন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লব ১১ মে, ২০১৮, ২:৫৮ এএম says : 0
    কোন অপরাধীকে যেন কমিটিতে জায়গা দেয়া না হয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ