Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আকস্মিক বন্যার উন্নতির সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সুরমা ও কুশিয়ারাসহ ৬ নদী ১২ স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে : উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টি ও ঢল
শফিউল আলম : সিলেট-ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক ও সাময়িক আগাম বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট বিভাগের ৪টি জেলা এবং নেত্রকোণা-কিশোরগঞ্জসহ ৬টি জেলায় প্রবাহিত নদ-নদীগুলো একযোগে ফুলে-ফুঁসে উঠার ফলে সৃষ্টি হয় আগাম ও আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষত আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উজানের ঢলের সাথে সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে। গতকাল (বুধবার) নদ-নদী প্রবাহের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, সিলেটের প্রধান দু’টি নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ ৬ নদ-নদী ১২ স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ আজও অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সিলেট বিভাগের ৮টি নদ-নদী ১৩টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত সোমবার ৬টি নদ-নদী ৯টি পয়েন্টে, গত রোববার ৪টি নদী ৬ পয়েন্টে এবং গত শনিবার ২টি নদী বিপদসীমার উপরে ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, বর্তমানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও নদ-নদীর পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের কতিপয় স্থানে বিদ্যমান আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে। নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার কতিপয় স্থানে বিদ্যমান আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এই জেলায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা নেই।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নদ-নদীর প্রবাহ ও বন্যা পরিস্থিতির গতকাল সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, সিলেট অঞ্চলের প্রধান সুরমা নদী কানাইঘাট ও সিলেট উভয় পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর অন্যতম প্রধান কুশিয়ারা নদীর পানি আরও বেড়ে গেছে। কুশিয়ারা ৫টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরমধ্যে অমলশীদে ১০৭ সেমি, শেওলায় ১২০ সেমি, মারকুলিতে ১২১ সেমি, শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে ৪৭ সেমি ও ফেঞ্চুগঞ্জে ১১৯ সেমি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া মনু নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়ে মৌলভীবাজারে ১৮৯ সেমি ও মনু রেলব্রিজে ২০ সেমি উপরে, কালনী নদীর পানি আজমিরিগঞ্জে অনেক বৃদ্ধি পেয়ে ১৫২ সেমি উপরে, সুতং নদী সুতং রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে পানি আরো বেড়ে গিয়ে ১১৮ সেমি উপরে, কংস নদীর পানি নেত্রকোনা জেলার জারিয়াজঞ্জাইল পয়েন্টে কিছুটা বেড়ে বিপদসীমার ৫৯ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমেশ্বরী নদী কলমাকান্দায় সতর্কসীমায় রয়েছে। খোয়াই নদীর পানি গতকাল বিপদসীমার নিচে নেমেছে।
এদিকে বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়া বিভাগের গাণিতিক মডেলের পূর্বাভাস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাসমূহের এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আসাম ও মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
পাউবো’র বৃষ্টিপাতের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল ও আগের দুই দিনে সিলেট অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে- জকিগঞ্জে ১২৩ মিলিমিটার, মনু রেলসেতু পয়েন্টে ১৩৩ মিমি, মৌলভীবাজারে ১৭৩ মিমি, কমলগঞ্জে ২২৯ মিমি, হবিগঞ্জে ১২৮ মিমি এবং নেত্রকোনা জেলার জারিয়াজঞ্জাইলে ১২০ মিমি। আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৭০ মিমি। এ সময়ে নেত্রকোণায় ৫৪ মিমি, চট্টগ্রামে ১৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া, হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রপাতের সাথে বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ ও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনায় ৪৩ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ১৪ মিমি, চট্টগ্রামে ২ মিমি, শ্রীমঙ্গলে ২৪ মিমি, রংপুরে ৪ মিমি, খুলনায় ৩ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত বর্ষণের কারণে বৈশাখের তাপদাহের বদলে প্রায় সারাদেশে তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকেই রয়েছে। দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ১৯.৫ ডিগ্রি সে.। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৬.৬ ডিগ্রি সে.।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ