Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উজানের পাহাড়ি ঢলে অসময়ে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল সিলেটে বন্যা : উন্নতির সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বৃষ্টিপাত, পানি তুলনামুলক কমলেও এখনও ১৩ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে, বিপদ সীমানায় ২টি পয়েন্ট, পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সুরমা সুনামগঞ্জে, ভারতের, আসাম, মেঘালয় ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত হ্রাস, উত্তর পূর্বাঞ্চলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নতির সম্ভাবনা।
ফয়সাল আমীন : প্রি-মৌসুমী বন্যার কবল থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল সিলেটর, এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো: আরিফুজ্জামন ভূঁইয়া। তিনি বলেন বর্ষার আগে বন্যা এরকম একটি ধারা বাংলাদেশ তথা দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের স্বাভাবিক একটি ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও স্থানীয় বৃষ্টিপাতের এ বন্যা পরিস্থিতি কল্পনাতীত। সিলেট অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে প্রত্যাশিত বৃষ্টির পরিমান ১১৪৬ মি:মিটার। এর বদলে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৭‘শ মি:মিটার। তারপরও বন্যার মুখে পড়ে যায় উত্তর পূর্বাঞ্চল সিলেট। এর জন্য দায়ি উজানের নিয়ন্ত্রনহীন পাহাড়ি ঢল। সেই সাথে অভ্যন্তরীন নদÑনদী ভরাট। অভ্যন্তরীন নদ-নদী খনন করে পানি রক্ষন ও প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে বন্যার সর্বনাশা ছোবলে ক্ষতির মুখে পড়তো না উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশের সাথে সম্পাদিত পানি চুক্তি বাস্তবায়িত হলে অসময়ে উজানের ঢলে আক্রান্ত হতো না সিলেট অঞ্চল। এ ব্যাপারে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড সাইন্স এনভারমেন্ট ইনজিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.জহির বিন আলম বলেন, মহা পরিকল্পনা নিয়ে অভ্যন্তরীন নদ-নদীর ড্রেজিং সহ পানি ম্যানেজমেন্ট যেমন আমাদের দ্রæত করা দরকার তেমনি দরকার শক্তিশালী কূটনীতিক পলিসি । যার মধ্যে দিয়ে প্রতিবেশি দেশকে বাগে এনে ন্যায্য পানি হিস্যা আদায় ্ও অসময়ে, অযৌক্তিকভাবে পাহাড়ী ঢল নিয়ন্ত্রন সম্ভব হতো। সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারনত মার্চ এপ্রিলে এ স্বল্প মেয়াদী বন্যা হয়ে থাকলেও এবার দেরীতে মে মাসে এ বন্যা লক্ষনীয়। বিশেষ করে স্থানীয় বৃষ্টিপাত সহ উজানের ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বা হয়ে থাকে। এমনটাই এবার ঘটেছে উত্তর পূর্বাঞ্চলে। ফলে পানির কবলে নিচু অঞ্চল তলিয়ে গেছে। উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানি গড়িয়েছে ভাটির নদ-নদী খাল-বিলছড়া সহ বিশেষ করে হ্ওার অঞ্চলে। হ্ওার বেষ্টিত সিলেট অঞ্চল এ বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। তবে বোরো ধান কাটা সম্পূন্ন হয়ে য্ওায়ায়, ফসলহানী থেকে রক্ষা পেয়েছে খাদ্য শস্যের অন্যতম ভান্ডার সিলেট অঞ্চল। যদি বৃষ্টি কারনে ধান মাড়াই, শুকানো বা গোলায় ভরা ব্যাঘাত ঘটছে। গতকাল (বুধবার) আবহ্ওায়া পরিসংখ্যানে জানা যায়, মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট সুরমা-কুশিয়ার সহ ১১টি নদ-নদীর ৩৬টি পর্যবেক্ষণ স্থানের ২৪টিতে পানি বৃদ্ধি, ১২টিতে হ্রাস, ১৬টি পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। সুরমা কানাইঘাটে পানি ৭ সে:মি: হ্রাস পেলেও বিপদসীমার ২৭ সে:মি উপর, সুরমা সিলেটে ৩ সে:মি হ্রাস পেল্ওে ১৫ সে:মি, কুশিয়ারা অমলশীদে ২৯ সে:মি হ্রাস পেল্ওে ৬০ সে:মি:, শ্ওেলায় ১৫ সে:মি: হ্রাস পেল্ওে ৯২ সে:মি, কুশিয়ারা ফেঞ্চুগঞ্জে ১০৫ সে:মি:, কুশিয়ারা মারকুলি ৭০ সে:মি:, মনু মৌলভীবাজার ১৮৫ সে:মি:, মনু রেল্ওয়ে ব্রিজ ১১০ সে:মি:, ধলাই কমলগঞ্জ ২৪ সে:মি:, সুতং সুতং রেল্ওয়ে ব্রিজ ১২০ সে:মি:, কংস নেত্রকোনার জারিয়াজঞ্জাইল ৫০ সে:মি:,, কালনী আজমিরিগঞ্জ ১৪৪ সে:মি:, বাউলাই খালিয়াজুরি ২৩ সে:মি: বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খোয়াই বাল্লায় ৭ সে:মি:, হবিগঞ্জে ৭০ সে:মি হ্রাস পেল্ওে বিপদসীমায় রয়েছে। সোমেশ্বরী কলমাকান্দায় ১৭ সে:মি:, হ্রাস পেল্ওে সতর্কসীমায় রাখা হয়েছে। তবে সুরমা সুামগঞ্জে বিপদসীমার ৬৬ সে:মি: নিচে থাকলে পানি বৃদ্ধি ঘটছে, সারিগোয়াইন সারিঘাটে বিপদসীমার ২৮৬ সে:মি: নিচে প্রবাহিত হয়ে পানি হ্রাস ঘটছে। হাওর বেষ্টিত ভাটি অঞ্চল সুনামগঞ্জে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল হ্রাস ্ও বৃষ্টিপাত কমতে থাকায় ভাটির দিকে পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে। যেকারনে সুনামগঞ্জে পানি বাড়ছে, তবে আশংকিত হ্ওয়া কিছু নেই বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহ্ওায়া অধিদপ্তরের গানিতিক মডেলের পূর্বাভাস পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল সিলেট, সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার ্ও হবিগঞ্জ ও সংলগ্ন ভারতের উত্তর পূর্বা অঞ্চলের প্রদেশ আসাম মেঘালয় ও ত্রিপুরার অনেক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তবে আসাম ্ও মেঘালয়ের বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ আসাম মেঘালয় ও ত্রিপুরার গত মঙ্গল বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল চিলচরে ১৩ মি:মি:, কাইলাশ্বরে (মনু) ৩৯ মি:মি:, চেরাপুঞ্জিতে ৮মি:মি: আজ্য়ালে ৩৮ মি:মি, শিলংয়ে ৪ মি:মিটার। কিন্তু গতকাল বুধবার বৃষ্টিপাত অন্যস্থানে না হল্ওে কালাশ্বরে (মনু) হ্রাস পেয়ে কেবলমাত্র ২০ মি:মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অপরদিকে, গত ৩দিনের মধ্যে গতকাল দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান তুলনামুলক কম। সোমবার জকিগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল জকিগঞ্জে ৯০ মি,মি:, মনু রেল্ওয়ে ব্রিজ ৫০ মি,মি:, জারিয়াজঞ্জাইল ৫৭ মি,মি:, মৌলভীবাজারে ৮১ মি,মি:, কমলগঞ্জে ৯১ মি,মি:, হবিগঞ্জে ৪৩ মি,মিটার। গত মঙ্গলবার জকিগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল জকিগঞ্জে ২২মি,মি:, মনু রেলওয়ে ব্রিজ ৭২ মি,মি:, জারিয়াজঞ্জাইল ৬৩ মি,মি:, মৌলভীবাজারে ৭৬ সে,মি:, কমলগঞ্জে ৮৬ মি,মি:, হবিগঞ্জে ৬০ মি,মিটার। কিন্তু গতকাল (বুধবার) জারিয়াজঞ্জাইলে বৃষ্টিপাত না হল্ওে অন্যস্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমান তুলনামুলক কমে যায়। এর মধ্যে জকিগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল জকিগঞ্জে ১১ মি,মি:, মনু রেল্ওয়ে ব্রিজ ১১ মি,মি:, মৌলভীবাজারে ১৬ মি,মি:, কমলগঞ্জে ৫২ মি,মি:, হবিগঞ্জে ২৫ মি,মিটার। বন্যা ও আবহ্ওায়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে য্ওায়ায় স্বল্প মেয়াদী ্ও বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে গড়াবে। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কতিপয় স্থানে আকস্মিক বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে। নেত্রকোনা ্ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘন্টায় স্থিতিশীল থাকবে। সুনামগঞ্চ জেলার নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি ঘটল্ওে আকস্মিক বন্যার আশংকা নেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ