Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মজীবীদের প্রকৃত আয় কমেছে

সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


# শিল্প খাতে নারীর কর্মসংস্থান কমেছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চার বছরের ব্যবধানে দেশের কর্মজীবী মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজার ১৫২ টাকা মজুরি পেতেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসে তা কমে ১৩ হাজার ২৫৮ টাকা হয়েছে। প্রকৃত আয় কমেছে আড়াই শতাংশের মতো।
অন্যদিকে পুরুষদের চেয়ে নারী কর্মজীবীদের প্রকৃত আয় বেশি কমেছে। ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী নারী প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৭১২ টাকা মজুরি পেতেন। এখন পান ১২ হাজার ২৫৪ টাকা। মজুরি কমেছে তিন দশমিক আট শতাংশ। অন্যদিকে, পুরুষেরা চার বছর আগে পেতেন ১৪ হাজার ৩০৯ টাকা। এখন এক দশমিক নয় শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৫৮৩ টাকা মজুরি পান।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘প্রোমোটিং ফিমেল এমপ্লয়মেন্ট ইন বাংলাদেশ ফর রিয়েলাইজিং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়। গবেষণা উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে ওই গবেষণাপত্রের ওপর সংলাপ অনুষ্ঠান হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন বছরে (২০১৩ থেকে ২০১৬) শিল্পখাতে সাড়ে আট লাখ নারীর কর্মসংস্থান কমেছে। ভাবা হয় নারীরা পুরুষের সমান শিল্পখাতে অবদান রাখতে পারবে না। এ জন্য সংকুচিত হচ্ছে নারীর কর্মসংস্থান। বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারীরা।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, নারীদের ‘আনপেইড’ কাজের সংখ্যা বেশি। এগুলো গণনা করা হলে জিডিপিতে নারীদের অবদান ৭৭ থেকে ৮৭ শতাংশ হতে পারত।
মূলত ২০০২ সাল থেকে ধীরে ধীরে দেশে নারীর কর্মসংস্থান কমতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ ৮০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩৬ দশমিক তিন শতাংশ। অথচ সারা বিশ্বে গড়ে ৫০ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন।
সিপিডির গবেষণায় আরও বলা হয়, কর্মক্ষম বয়সের নারীদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ কোনো মজুরির বিনিময়ে কাজে সম্পৃক্ত নয়, আবার পড়াশোনা কিংবা প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না তারা। এর ফলে শ্রমবাজারে বিপুলসংখ্যক নারী অংশগ্রহণ নেই। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রয়োজন। সিপিডি আরও বলেছে, গত চার বছরে শিল্প খাতে সাড়ে আট লাখ নারীর কর্মসংস্থান কমেছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী চার দশক জনমিতির লভ্যতার দ্বারপ্রান্তে আছে বাংলাদেশ। শ্রমবাজারে অনেক তরুণ-তরুণী আসবে। আমরা তাদের কীভাবে কাজে লাগাব-তা ভাবতে হবে। নারীদের শোভন কাজের বিষয়টি ভাবতে হবে। তাহলে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি আমরা পূরণ করতে পারব। এজন্য আগামীতে শ্রমবাজারে মহিলা বান্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) শামসুল আলম বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান কীভাবে কমিয়ে আনুষ্ঠানিক আনা যায়, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে। আবার গৃহস্থালির কাজ করেন, কিন্তু মজুরি পান-এমন নারীদের কাজের মূল্য কীভাবে বের করা যায়, তা গবেষণা করে বের করা উচিত। তাহলে তাদের অবদান জাতীয় আয়ে যুক্ত করা যাবে।
শামসুল আলম বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে নারীদের জন্য বেশি বেশি কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, আমাদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে। খাবার রান্না ও গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি পায় না নারী। এসব কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তি দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকাইল হেমিনিতি উইন্থার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বিবিএস পরিচালক (ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইং) কবির উদ্দিন আহমেদসহ অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, অর্থনীতিবিদ, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ