Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যুক্তরাজ্যে মামলায় হেরেছেন বিজয় মাল্য : তার সম্পদ বিক্রিতে বাধা নেই

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

টাইমস অব ইন্ডিয়া : বিজয় মাল্যর বিরুদ্ধে দেয়া ভারতীয় আদালতের রায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে তার সম্পদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কার্যকর হতে পারে বলে মঙ্গলবার ব্রিটিশ হাইকোর্টের এক বিচারক রায় দিয়েছেন। ফলে এ পলাতক ব্যবসায়ী যুক্তরাজ্যের আদালতে আইনি লড়াইয়ে এক বড় রকমের পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছেন।
যুক্তরাজ্য হাইকোর্টের এনফোর্সমেন্ট অফিসারগণ এখন ভারতের আদালতের রায় বলবত করতে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন যার মধ্যে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মাল্যর সম্পদ আটক ও বিক্রিও থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্য হাইকোর্টের বিচারক অ্যান্ড্রু হেনশ’ কিউ সি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৩টি রাজ্য মালিকানাধীন ব্যাংকের একটি কনসোর্টিয়ামের পক্ষে এ রায় প্রদান করেন। ইউ বি গ্রæপের সাবেক চেয়ারম্যান এ কনসোর্র্টিয়ামের কাছ থেকে ৯ হাজার কোটি রুপি ঋণ গ্রহণ করেন।
হেনশ’ তার রায়ে কর্নাটক, বেঙ্গালুরুর ঋণ পুনরুদ্ধার ট্রাইব্যুনালের (ডিআরটি) ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি দেয়া রায় বহাল রাখেন। ডিআরটি’র রায়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নেয়া মাল্যর ৬২০৩ কোটি রুপি ঋণ সুদসহ (২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৮৬৩ কোটি রুপি) এখন আইনগতভাবে ইংল্যান্ডে নিবন্ধিত হতে পারে।
হেনশ’ তার লিখিত রায়ে বলেন, ড. মাল্যর সম্পদের মূল্য হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে অথবা অন্য ঋণদাতারা তা দাবি করতে পারেন এবং ড. মাল্যর দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ড. মাল্য ভারত ত্যাগ করার পর থেকে সেখানে তিনি আর ফেরেননি এবং গুরুতর অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য তাকে প্রত্যর্পণের ভারতের আবেদনের বিরুদ্ধে তার বাধা তাকে বিচার থেকে পলাতক হিসেবে আখ্যায়িত করার কিছু ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর ব্যাংকগুলো ভারতের ডিআরটি’র রায় ব্রিটিশ আদালতগুলোতে নিবন্ধন করে এবং এ মর্মে একটি আটকাদেশ লাভ করে যে মাল্য বিশ^ব্যাপী তার ১১৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড (১০ হাজার ২শ’ ১০ কোটি রুপি) মূল্যের সম্পদ হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবেন না। মাল্য এ রায় কার্যকর না করা ও সম্পদ আটকের আদেশ বাতিলের আবেদন করেন।
ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিটিশ ল’ ফার্ম টিএলটিতে অংশীদার পল গেয়ার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ড. মাল্যর আবেদন বাতিলের মধ্য দিয়ে হাইকোর্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে আদালতের দেয়া রায় স¦ীকারের ইচ্ছা প্রদর্শন করে পক্ষগুলোকে এখানে আটক সম্পদের বিরুদ্ধে রায় বলবত করার সুযোগ দিয়েছে। এ মামলা পক্ষগুলোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপিদের বিপক্ষে রায় বলবতের ক্ষেত্রে একটি বিশ^ব্যাপী আটকাদেশ নিশ্চিত করার একটি শক্তিশালি নজিরও স্থাপন করেছে। মঙ্গলবারের এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ডিআরটি রায়ের আওতায় বিজয় মাল্যর কাছে প্রাপ্য অর্থ পুনরুদ্ধারে ব্যাংকগুলো এখন তাদের প্রাপ্ত সুযোগ কার্যকর করার কথা বিবেচনা করছে যা ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে এমন ভাবে বলবত যোগ্য যেন তা ইংরেজ আদালত কর্তৃক দেয়া। ভারতের ঋণদাতা ব্যাংকগুলো এখন বিজয় মাল্যর সম্পদ বিক্রি করতে পারবে।
এ রায়ের পর মাল্যর প্রতিনিধিত্বকারী জর্জ হেম্যান কিউসি এ কারণে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় রায় নিবন্ধনের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চান যে ডিআরটি রায় সিল দ্বারা সিলকৃত নয় যা প্রদর্শন করে যে আর্থিক বিচার ব্যবস্থার ব্যাপারে কোনো উচ্চ সীমা নেই যা পারস্পরিক রায় বলবত (ভারত) আদেশ, ১৯৫৮ মোতাবেক ইংল্যান্ডে রায় হিসেবে নিবন্ধিত হতে সক্ষম রায়ের জন্য প্রয়োজন। তিনি এ যুক্তি দেন যে আর্থিক বিচার ব্যবস্থা বিষয়ে ডিআরটির কোনো উচ্চসীমা নেই নিশ্চিত করে যুক্তরাজ্য হাইকোর্টে ডিআরটি প্রিসাইডিং অফিসারের ২০১৭ সালের জুলাইতে প্রেরিত পত্র ডিআরটি রায়ের সাথে একত্রে পঠিত হতে পারে না।
আটক নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে হেম্যান বলেনঃ তলোয়ার ছাড়া অপচয়ের ঝুঁকি প্রদর্শনের মত কোনো কিছু নেই এবং সমগ্র সম্পদের প্রেক্ষাপটে তলোয়ার স্বল্পতম কিছু। তিনি এক সময় টিপু সুলতানের ঐতিহাসিক ১৮৮, ৪০০ পাউন্ড মূল্যের ঐতিহাসিক তলোয়ারের কথা উল্লেখ করেন, যা মাল্য একটি সম্পদ বলে ঘোষণা করেন এবং তারপর দুর্ভাগ্য বয়ে আনায় তা দিয়ে দেন।
ব্যাংকগুলোর আইনজীবীদের সংক্ষিপ্ত নিবেদনে এও বলা হয় যে, মাল্য মেব্যাচ ৬২ গাড়িগুলোর একটি ও মেব্যাচ ৫৭ গাড়ি হস্তান্তর করেছেন এবং তিনি একটি পোরশে কেয়েন (৭০ হাজার পাউন্ড), একটি রেঞ্জ রোভার (৬০ হাজার পাউন্ড), একটি ফেরারি এফ ৪৩০ (৮০ হাজার পাউন্ড), একটি মিনি কুপার (১৬ হাজার পাউন্ড) ও একটি বেন্টলি টার্বোর (১০ হাজার ৫শ’ পাউন্ড) ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়ে সুপ্রিম কোর্ট অব ইন্ডিয়ার এপ্রিল ২০১৬ প্রকাশ আদেশ লংঘন করেছেন।
হেনশ’ মাল্যর কৌঁসুলির আপিল আবেদন ও স্থগিতাাদেশ প্রদান উভয় আবেদনই খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, সম্পদ অপচয়ের প্রকৃত ঝুঁকির সুদৃঢ় প্রমাণ রয়েছে। তিনি ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে তিন সন্তানের ট্রাস্টের জন্য ডায়াজিওর নিকট থেকে পাওয়া ৪ কোটি পাউন্ড মাল্যর হস্তান্তর ও টিপুর তলোয়ার দিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধি নাইজেল টোজি কিউ সি খরচের প্রশ্নে বলেনঃ আমরা জানি এ বাপারে বিজয় মাল্য তার নিজ খরচের জন্য ৫ লাখ পাউন্ড ঋণ গ্রহণ করেছেন। মাল্যকে ব্যয় বাবদ ২ লাখ পাউন্ড দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ