Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন: রামাদ্বানের চাঁদ তালাশ করার উপকারিতা কী?


প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ১০:০২ পিএম

উত্তর: আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদ্বান মাসকে বরণ করতে রজব মাস থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকতেন। শাবান মাসকে রামাদ্বানের সর্বোচ্চ প্রস্তুতির মাস হিসেবে কাজে লাগাতেন। বিশেষ করে শাবানের শেষার্ধকে অনেক গুরুত্ব দিতেন। রামাদ্বান মাস কবে শুরু হবে তা নিয়ে থাকতেন ব্যাতিব্যস্ত। চাঁদ দেখার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখবে এবং চাঁদ দেখে রোজা ছাড়বে। যদি মেঘলা আকাশ চাঁদকে তোমাদের থেকে গোপন করে রাখে তবে শাবান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করবে -(বোখারী ও মুসলীম)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এ মাসের চাঁেদর হিসাব রাখতেন। এ মাস ছাড়া অন্য কোন মাসের এভাবে হিসাব রাখতেন না। যা দ্বারা রামাদ্বান মাসের গুরুত্বকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। ‘হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এছাড়া অন্য কোন মাস এত হিসাব করতেন না। অতঃপর রামাদ্বানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। যদি মেঘলার কারণে চাঁদ গোপন থাকত, তবে শাবান মাস ত্রিশ দিন গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন’ -(আবু দাউদ)। শুধু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসাব রাখতেন এমন নয়। বরং তিনি শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা রামাদ্বান মাসের জন্য শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখবে’ -(তিরমিজি)।
অপর হাদীসে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, (রামাদ্বান মাসের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা রোজা রেখো না। আর (শাওয়াল মাসের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা ইফতার (রোজা শেষ) করো না। আকাশ মেঘলা থাকার দরুন যদি চাঁদ তোমাদের থেকে গোপন থাকে তবে (শাবান) মাসের দিনগুলো পূর্ণ করবে। অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, মাস কখনো ঊনত্রিশ রাতেও (দিনে) হয়। সুতরাং চাঁদ দেখা না পর্যন্ত রোজা রাখবে না। যদি মেঘলা আকাশ থাকার কারণে চাঁদ তোমাদের থেকে গোপন থাকে তবে (শাবান মাস) ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে’ -(বোখারী ও মুসলীম)। অত্র হাদীসের আলোকে বলা যেতে পারে, রোজা পালন এবং রোজা ভঙ্গ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।
শাবান মাস সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে গেছেন। এ মাস কখনো ঊনত্রিশ আবার কখনো ত্রিশ দিনে হতে পারে। তবে রামাদ্বান ও জিলহজ্জ মাস একই বৎসরে (উভয় মাস) ঊনত্রিশ দিনে হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আবু বাকরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঈদের মাস দুটি যথা রামাদ্বান ও জিলহজ (একই বছরে) কম হয় না’ -(বোখারী ও মুসলীম)। এর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ বলেন, এই দুই মাসের একটি মাস ঊনত্রিশ দিনে হলে অপরটি ত্রিশ দিনে অবশ্যই হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদ্বান মাসের দু একদিন পূর্ব হতে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। তবে, যদি কেউ আগে থেকে রোজা রাখতে অভ্যস্থ থাকে কোন সমস্যা নেই। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যেন রামাদ্বানের একদিন অথবা দুদিন পূর্বে অবশ্যই রোজা না রাখে। তবে হ্যাঁ, যদি কারও (পূর্ব হতেই) এদিনে রোজা রাখার নিয়মে চলে এসে থাকে তবে সে ঐ দিনেও রোজা রাখতে পারে’ -(বোখারী ও মুসলীম)।
এমনকি ইয়াওমুশ শক তথা সন্দেহের দিন রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার দরুন শাবান মাসের ঊনত্রিশ তারিখ দিবাগত রাতে চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিনকে ইয়াওমুশ শক বা সন্দেহের দিন বলা হয়। হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্দেহের দিন রোজা রাখল, সে আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে নাফরমানী করল’ -(তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও দারেমী)।
সবশেষে এটাই বলতে পারি, আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদ দেখে বা চাঁদ দেখার সংবাদ শুনে রামাদ্বান মাসের রোজা পালন করতেন। ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সমবেত লোকেরা চাঁদ দেখতে ও দেখাতে লাগল। তখন আমি যেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সংবাদ দিলাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। এতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা রাখলেন এবং লোকদেরকে রোজা রাখতে আদেশ করলেন’ -(আবু দাউদ ও দারেমী)।
উত্তর দিচ্ছেন: মাহফুজ আল মাদানী

ইসলামিক প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]



 

Show all comments
  • Ruhul Amin ১০ মে, ২০১৮, ১:৪০ এএম says : 0
    Thanks
    Total Reply(0) Reply
  • masud ১৬ মে, ২০১৮, ৮:০২ এএম says : 0
    excellent topic
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশ্ন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ