Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মানববন্ধন আজ

কোটার প্রজ্ঞাপন সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনায় : জনপ্রশাসন সচিব

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান। এ দিকে কোটা বাতিলসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আজ বুধবার দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় একযোগে মানববন্ধন কর্মসূূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিয়েছেন এবং বিদেশ থেকে আসার পরে সংবাদন সম্মেলনে বলেছেন তা দ্রæততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এছাড়া সোমবার কোটার কমিটি শিগগিরই হবে, আশা মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন জনপ্রশাসন সচিব।এই মন্ত্রণালয়কেই কোটা বাতিল বা সংস্কার করে প্রজ্ঞপন জারি করতে হবে। মোজাম্মেল হক বলেন, কোটা বাতিলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন সেটার চূড়ান্ত রূপৃ প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার (জারির) কাজটা একটু বাকি আছে। সেটা কোন পর্যায়ে আসবে (জারি হবে) সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে কি না- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনাধীন আছে। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল পরিষ্কার কথা আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল। কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন সরকার প্রধান। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছিল। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানিয়েছিল তারা। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলার পর তারা এখন সেই প্রজ্ঞাপন দ্রæত প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত থাকার বিষয়ে মোজাম্মেল বলেন, যখন ছাত্ররা আন্দোলন করছিল, তখন সরকারের প্রতিনিধিরা গেলেন, তখন তাদেরকে বলা হল ৭ তারিখ পর্যন্ত এক মাস আন্দোলন স্থগিত করা হবে। তারপর দেখা গেল সেই কথা বলার পরও আন্দোলন থামেনি। তাহলে আমার বিবেচনায় ৭ তারিখ তো আর থাকল না। তারা যদি ৭ তারিখ পর্যন্তআন্দোলন বন্ধ রাখত তাহলে আজকে বলা যেত তারা ৭ তারিখ বলেছিল ৭ তারিখে কেন হল না, এটা ঠিক কি না? এই বিষয়টা সরকারের মাথার আছে, বিবেচনায় আছে। প্রধানমন্ত্রী যখনই নির্দেশ দেবেন সেটা বাস্তবায়িত হবে। সচিব বলেন, কোটা নিয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি। আমরা যে কোনোভাবে প্রস্তুত, কমিটি লাগলে করব, আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলে করব। যে কোনো পদ্ধতিতে যদি সরকার প্রধান বলেন সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। কোটা বাতিলের প্রক্রিয়া জানতে চাইলে এনিয়ে এখনও সরকারের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় সুস্পষ্ট কোনো কথা বলেননি জনপ্রশাসন সচিব। এত তো খোঁচানো যাবে না। আমি এখন একটা বললাম সেটা থেকে কালকে একটু ব্যত্যয় হল, পরে আপনি বলবেন, গতকাল এটা বলেছিল আজকে আবার এটা হচ্ছে। এত অ্যাডভান্স কথা বলার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বললেও ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার চাকরির কথা বলেছেন। কোটা বাতিল হলে তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বাতিলের কথা বলেছেন তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি তিনি সংসদে বলেছেন, যারা নৃ- গোষ্ঠী ও যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবস্থার রূপরেখা আমরা এখনও সেভাবে প্রকাশ করিনি, সেটি আমাদের মাথায় আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সেটা চিন্তা করছেন। কোটা নিয়ে শিগগিরিই প্রজ্ঞাপন জারি হবে এটা বলা যায় কি না- সেই জিজ্ঞাসায় মোজাম্মেল বলেন, আমরা তো আশাবাদী, দ্রæত হওয়াই ভাল।
এদিকে কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আজ বুধবার দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলোয় একযোগে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরিষদের আহŸায়ক হাসান আল মামুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ বেলা ১১টায় সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় একযোগে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান ও ফারুক হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কোনো টালবাহানা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১৭ ফেব্রæয়ারি থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। গত ৮ এপ্রিল শাহবাগে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উসকানিতে পুলিশ রাতভর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। এর প্রতিবাদে ৯ এপ্রিল সারা বাংলার ছাত্রসমাজ ফুঁসে ওঠে। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ১৮ সদস্যের একটি দল সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করে। সেখানে প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়, ৭ মের মধ্যে কোটাপদ্ধতির সংস্কার করা হবে। অথচ এখনো তার বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাই কোটা সংস্কারের দাবিতে কাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শেষে আন্দোলনকারীরা ¯েøাগান দিতে থাকেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ