Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিরসনে উদ্যোগ : মহাসড়কে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরির নির্দেশ

একনেকে ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য চতুর্থ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প। আগের তিন পর্যায়ের বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় নতুন করে প্রকল্প সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারিভাবে চিহ্নিত ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত এক লাখ শিশু পাবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা। আরও এক লাখ শিশুকে দেয়া হবে কারিগরি প্রশিক্ষণ। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে দেয়া হবে এক হাজার টাকা করে বৃত্তি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভা শেষে এ কথা বলেন। এদিকে মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালক। মালিকদের সীমাহীন লোভের কারণে চালকদের বিশ্রাম ছাড়াই ছুটতে হয় দুরপাল্লার পথে। অবশ্য চালকদের জন্য সুখবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, মহাসড়কে বাস এবং ট্রাক চালকদের জন্য তৈরি করতে হবে বিশ্রামাগার। দূরত্ব বজায় রেখে মহাসড়কের পাশে এসব বিশ্রামাগার করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘পাশের দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশেও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে এটা এখনো চালু হয়নি’। দুরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকরা কিছু দূর পর পর যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন, সেজন্য বিশ্রামাগার তৈরি করে দিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে পারলে চালকদের মন প্রফুল্ল থাকবে। রাসড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প: জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক (এন-৪) ৪- লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন। এই প্রকল্পের আওতায় দুরপাল্লার পথে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করা হবে।
বৈঠকে এই প্রকল্পসহ ১৩ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে সাত হাজার ৪৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ছয় হাজার ১৯৬ কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। শিশু শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বের করে এনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ৮টি বিভাগের ১৪টি এলাকার মোট এক লাখ শিশু শ্রমিককে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং আরও এক লাখ শিশুকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে দেয়া হবে এক হাজার টাকা করে বৃত্তি।
‘জাতীয় জীন ব্যাংক প্রকল্প’ অনুমোদন : আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জেনেটিক সম্পদ এই গ্রহের প্রাথমিক সম্পদ। প্রাণিসম্পদ, উদ্ভিদ, অণুজীব, কীটপতঙ্গ এবং সামুদ্রিক অণুজীবের শুক্রাণু ও ডিম্বানু সম্পর্কে জানতে হবে। একইসঙ্গে সংরক্ষণও করতে হবে। এগুলো কিভাবে কাজে লাগানো যায় তার গবেষণা করতেই ‘জাতীয় জীন ব্যাংক’ স্থাপন করব। আমরা জীন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২১ এর জুন মেয়াদকালে বাস্তবায়ন হবে। এতে ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যা পুরোটাই সরকারি টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আওতায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ও গণপূর্ত অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প এলাকা ঢাকার সাভারে।
খুলনা-দর্শনা রেলপথে ডাবল লাইন প্রকল্প অনুমোদন : খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ দুই হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
রেলপথের বিদ্যমান সমস্যা দূর করতেই প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। ঢাকা-খুলনা এবং খুলনা-চিলাহাটি (লালমনিরহাট) করিডরে পরিবহনে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। ভারতের সঙ্গে রেলপথে মালামাল পরিবহনেও প্রকল্পটি অবদান রাখবে।
জরুরি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য হারিয়ান, ভেড়ামারা পাওয়ার প্ল্যান্টে ভারত থেকে মালামাল পরিবহন করা হবে। ফরিদপুর, রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করবে সরকার।
মহাসড়ক চার লেন : আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নওগাঁ সড়ক বিভাগের অধিনে একটি আঞ্চলিক ও ২টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। জয়পুরহাট (হিচমি) পুরান আইপল-পাঁচবিবি হিলি মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নড়াইল-ফুলতলা জেলা মহাসড়ককে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। উল্লাপাড়া রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি টাকা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেলান্দহ, জামালপুর স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ১৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি নবায়ন, সংস্কার ও মেরামত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জয়দেবপুর-চন্দ্র-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ