Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকের বিরোধেই খুন নিহতদের পরিচয় সনাক্ত ঘাতকদের সন্ধান মিলেনি

বগুড়ার শিবগঞ্জ পল্লীর চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ার শিবগঞ্জের পল্লীতে ধান ক্ষেতে পাওয়া গলাকাটা লাশের সবার পরিচয় মিলেছে। এরা হলেন- বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের কাঠগাড়া চকপাড়া গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে সাহাবুল ইসলাম সাবুল (৩০), একই গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে জাকারিয়া (৩২) এবং পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পাঁচপাইকা চেয়ারম্যান পাড়ার আজার মÐলের ছেলে হেলাল (২৯) একই উপজেলার নান্দাইল গ্রামের সামসুদ্দির ছেলে খবির উদ্দিন (৩৫)। গত সোমবার ওই ৪ টি লাশের সন্ধান পাওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিহতদের স্বজনরা হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তাদের সনাক্ত করেন। ঘটনাটির গুরুত্ব ও ভয়াবহতার বিচারে গতকাল বিকেলে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল আরিফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাÐের মোটিভ কিংবা জড়িতদের এখনও সনাক্ত করতে পারেনি। নিহত চার জনের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলাও দায়ের করা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৬ জনকে আটক করেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম জানায়নি পুলিশ। কর্মকর্তারা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অগ্রগতি হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। এছাড়া ময়না তদন্ত সম্পন্ন হলেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত লাশগুলো পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরও করা হয়নি। সোমবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের ডাবুইর গ্রাম সংলগ্ন ধান ক্ষেতে চার ব্যক্তির গলা কাটা লাশ পাওয়া যায়। দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর তাৎক্ষণিকভাবে দু’জনের পরিচয় পাওয়া যায়। বিকেলে আরও একজনের নাম জানতে পারে পুলিশ। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে স্বজনরা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে গিয়ে খবির উদ্দিন নামে একজনকে সনাক্ত করে। লাশ উদ্ধারের সময় নিহতদের প্যান্টের পকেট এবং লুঙ্গি থেকে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম ও বেশ কিছু গাঁজার পুরিয়া পাওয়া যায়। তাছাড়া চার জনের স্বজনরা স্বীকার করেছেন যে তারা মাদকাসক্ত ছিল। যে কারণে পুলিশের ধারণা মাদক নিয়ে কোন বিরোধের জেরেই তাদের খুন করা হতে পারে। একই ধারণা স্থানীয় আটমূল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেনেরও। তবে কি সেই বিরোধ এবং কাদের সাথে তা বেধেছিল সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু ধারণা পেলেও এখনও তা নিশ্চিত হতে পারেনি। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, যে স্থানে চারটি লাশ মিলেছে তার অদূরেই ‘ভাইয়ের পুকুর হাট’ নামে এলাকাটি ‘জুয়া, চোরাই গরু ও মাদকের হাট’ হিসেবে পরিচিত। সেখানে রেজাউল ও সেলিম নামে দুই ব্যক্তি যৌথভাবে অবৈধ সব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো। কিছুদিন আগে ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে বিরোধের জেরে তারা আলাদা হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক তৈরি হয়। নিহত সাবুল সেলিমের ‘এজেন্ট’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। তাছাড়া সে পুলিশের সোর্স ছিল বলেও কানাঘুষা রয়েছে। গত ৩ মে রেজাউলের ‘এজেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ওবাইদুল নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এতে রেজাউলের লোকজন সাবুলকে সন্দেহ করে। ওই ঘটনার পর রেজাউলের লোকজন ভাইয়ের পুকুর বাজারে সাবুল ও তার বন্ধু নিহত জাকারিয়ার খোঁজে দফায় দফায় হোন্ডা নিয়ে মহড়া দেয়। নিহত জাকারিয়ার মা জাহানারা বেগম ইতিপূর্বে বলেছেন, তার ছেলের সঙ্গে একই গ্রাম কাঠগাড়া মÐলপাড়ার দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরোধ চলছিল। সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, শাহীন ও আলাল নামে স্থানীয় দুই মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তার ছেলে দীর্ঘদিন বাকিতে ইয়াবা কিনে সেবন করেছে। টাকা দিতে না পারায় তিন দিন আগে তারা জাকারিয়ার কাছ থেকে দামি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এটা নিয়ে জাকারিয়ার সঙ্গে ওই দুই মাদক ব্যবসায়ীর গ্যাঞ্জাম তৈরী হয়।
এই ঘটনায় নিহত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নান্দাইল গ্রামের খবির উদ্দিনের বড় বোন মেরিনা খাতুন জানান, তার ভাইও মাদকাসক্ত ছিল। তিনি বলেন, খবিরের মাদকাসক্তি এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে সে প্রতিদিন স্ত্রীকে নির্যাতন করতো। সইতে না পেরে কিছুদিন আগে তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে গেছে।’ নিহত অপর যুবক হেলাল উদ্দিনও জয়পুরহাটের কালাইয়ের বাসিন্দা। এলাকাবাসীর কাছে সেও মাদকাসক্ত এবং ছিঁঁচকে চোর হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় পুনট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস ফকির জানান, পুলিশ হেলালকে একাধিকবার গ্রেফতার করেও তাকে মাদক ছাড়াতে পারেনি। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা আর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা পাশাপাশি হওয়ায় খবির ও হেলালের প্রায়ই মাদক কিনতে ভাইয়ের পুকুর হাটে আসতো। সেখানেই অপর দুই যুবক সাবুল ও জাকারিয়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ থানার ওসি (অপারেশন্স) জাহিদ হাসান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মোটামুটি মাদক সংক্রান্ত বিরোধেই এই নারকীয় হত্যাকাÐ ঘটেছে বলে ধারণা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে বলেও তিনি জানান ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ