Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে লুকোচুরি

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : প্রতি বছর কোন মন্ত্রণালয় কি পরিমান কাজ করতে পারবে সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিও করা হয়। ইতোমধ্যে কোন মন্ত্রণালয় কত ভাগ চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চিঠি দিলেও তার সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় একই তথ্য বার বার দিচ্ছে, আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয় শতভাগ কর্ম সম্পাদনের তথ্য দিলেও বাস্তবের সাথে তার মিল নেই। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানায়, তিন বছরে সকল মন্ত্রণালয়ের কর্ম সম্পাদনের অগ্রগতি গড়ে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ ৭৩ শতাংশ। এ হিসাবে গড়ে অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। আগামী ৪ জুলাই ২০১৮-২০১৯ সালের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব এন এম জিয়াউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকার এ কর্মপরিকল্পনা করেছে। যাতে করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্রæত কাজগুলো করতে পারে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করা মানে টার্গেট বেঁধে দেয়া। এখন মন্ত্রণালয়গুলোতে কোন উন্নয়নমূলক কাজের ফাইল আগের মতো পড়ে থাকে না। এর জন্য জবাবদিহিতা করা হচ্ছে।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মসম্পাদন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ অধিশাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে প্রথমবারের মত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে প্রশাসেনর ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৩৫৩টি অধিদপ্তর ও অন্যন্য প্রতিষ্ঠান, ৮ বিভাগীয় কমিশনার ৬৪ টি জেলা প্রশাসন এবং ৪৯১টি উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলাকে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাাগের সাথে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি কার্যক্রম।
প্রথমবারের মত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং আমাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার আলোকে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির একটি কাঠামো অনুসৃত হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির আওতায় প্রতি বছর প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে মন্ত্রী পরিষদ সচিব একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটি মূলত, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গেই চুক্তি করা হয়ে থাকে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মহলকে আন্তরিক হবার পাশাপাশি এটি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে প্রমবারের মত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গেও এই চুক্তি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর নিয়ে তৃতীয়বারের মত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিস্বাক্ষর হল। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সিনিয়র সচিব এবং সচিবগণ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিবেদন বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যান্ডেট। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে অধিকতর শক্তিশালী ও বিকেন্দ্রীকরনের জন্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং চারটি নতুন সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ও পৌরসভার জন্য অপারেশনাল ম্যানুয়েল প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত তিন বছরে সারাদেশে গ্রাম এলাকায় ১৬ হাজার ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৩০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং ৯৩ হাজার ৬০০ মিটার ব্রীজ/ কালভার্ট করা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার ব্যবসা উন্নয়নের জন্য ৫২৩টি গ্রোথসেন্টার উন্নয়ন, হাটবাজার উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকল্পে ২২৫টি ঘুর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য ২ হাজার ৪শত ৭০কিলোমিটার রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫৪০ কিলোমিটার ড্রেন নিমাণ করা হয়েছে। ৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পল্লী এলাকায় ৮৮ জনের একটি সরকারি নিরাপদ পানি খাবার উৎস রয়েছে এবং বর্তমানে পানি সরবরাহ কভারেজ ৮৭ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। ৩৭টি গ্রামে পাইপ সিস্টেম ৫৮৩টি উৎপাদক নলকুপ, ৯৫ হাজার ৯৭৮টি স্যানেটারী ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ মন্ত্রণালয়ের অর্জনের বিবরণীতে বলা হয়, ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরণ, ১০ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রক্ষাবেক্ষণ এবং ৩৫০০ কিলোমিটার ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত, ৮২টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ, ৫৫টি উপজেলা ভবন এবং ১৮০টি হাট-বাজার উন্নয়ন ও ১০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ২৮ হাজার ২৯৭ জন জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও সহায়ক জনবলকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়নে এখনো হাজার হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক কাঁচা এবং বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো মেরামত বা পাকাকরণ করা হচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, যে সকল জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়নে বিএনপির প্রতিনিধি রয়েছে সেগুলো জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়নের রাস্তার অবস্থা করুণ। তারপরও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠিতে ৯৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত বর্তমান সরকারের বড় অর্জন। অথচ সারাদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য নাকাল জনগন। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে তিন বছরে অনেক অর্জন দেখানো হয়েছে। অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে জনসাধারনের কাছে বিদ্যুতের সুফল পৌঁছে দেয়া একটি অন্যতম অঙ্গীকার। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এখন এ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নের দিকে শতভাগ। এছাড়া কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী যে সব মন্ত্রণালয় শতভাগ অর্জন দাবি করেছে সেগুলো হলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, শিল্প মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, বছরে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন না করেও খাতা কলমে বাস্তবায়ন দেখাচ্ছে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, বানিজ্য মন্ত্রণালয়, ভুমি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ সব ছাড়াও বিভিন্ন অধিদপ্তর বছরে জুড়ে কাজ কম করলেও তা খাতা কলমে দেখানো হচ্ছে ৯০-৯৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকল মন্ত্রণালয়ের কর্ম সম্পাদনের অগ্রগতি গড়ে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ ৭৩ শতাংশ। এ হিসাবে গড়ে অগ্রগতি ৯১ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ