Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘনীভ‚ত হচ্ছে পাহাড়ের সংঘাতময় পরিস্থিতি : অজানা আতঙ্ক

সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাঙালি সংগঠনগুলোর হরতাল পালন

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সৈয়দ মাহাবুব আহামেদ, রাঙামাটি থেকে : একের পর এক হত্যাকান্ড, সশস্ত্র তৎপরতা, অপহরণ, গুমসহ শতকোটি টাকার চাঁদা আদায়ের কেসিনু পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো ঘণিভূত হচ্ছে। দুইটি আঞ্চলিক রাজনৈতিকদলের দুই শীর্ষনেতাসহ ছয়জনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যাসহ আরো আটজনকে গুলিবিদ্ধ করে আহতের ঘটনা পরবর্তী সময়ে সহিংস পরিস্থিতির এখনো পর্যন্ত কোনো প্রকার অগ্রগতি নেই বলে মনে করছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। এই ধরনের অবস্থায় দিন যত যাচ্ছে ততই আন্দোলনের নতুন নতুন শাখা প্রশাখা বিস্তৃত হয়ে গত দুইদিন পাহাড়ে পালিত হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। চলতি মাসের গত ৪ তারিখে নানিয়ারচরের বেতছড়িতে সশস্ত্র হামলায় প্রতিপক্ষের ব্রাশ ফায়ারে ১২জন হতাহতের ঘটনায় সজিব নামে একজন বাঙ্গালী মাইক্রো চালক নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনদফা দাবিতে ৪৮ঘন্টা হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয় পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। এরই আলোকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে হরতাল শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অনেক শান্তিপূর্নভাবে পালিত হয়। এরআগে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে অপর একটি সংগঠনের ব্যানারে ৭২ঘন্টা হরতাল পালনের ডাক দিয়ে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বাঙ্গালীরা। উভয় সংগঠনই তাদের প্রথমদিনের কর্মসূচী পালন শেষে প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তাদের উপর আস্থা রেখে পরবর্তী হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, বাঙ্গালী মাইক্রো চালক সজিবসহ ছয়জনের হত্যাকারি উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, মাটিরাঙ্গা থেকে অপহৃত তিন বাঙ্গালী ব্যবসায়িকে উদ্ধারসহ সশস্ত্র তৎপরতার সাথে জড়িত জেএসএস-ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা ৪৮ঘন্টা হরতালের ডাক দিয়েছেন। প্রথমদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাহাড়বাসী তাদের হরতাল কর্মসূচী পালন করে। এসময় আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মেনে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিলে জনদূর্ভোগ বিবেচনায় আমরা আপাতত আমাদের হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ সত্যজিৎ বড়–য়া জানিয়েছেন, রাঙামাটিতে হরতালে জনজীবনের কোনো প্রভাব ফেলেনি। তিনি বলেন, আমরা জনসাধারনের জানমালের নিরাপত্তায় অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে শহরজুড়ে নিয়োজিত রেখেছি। সার্বিক পরিস্তিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
এদিকে, পার্বত্য চুক্তি সময় বিরোধীতাকারি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ এর মুখপাত্র নিরন চাকমা জানিয়েছেন, সরকারের একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, পাহাড়ের সমস্যা হলো রাজনৈতিক সমস্যা, এটিকে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু এটা নাকরে নির্মম দুইটি হত্যাকান্ড সংগঠিত করে দোষ চাপানো হচ্ছে আমাদের দলের উপর। এটা মোটেও গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। তিনি বলেন, নানিয়ারচরের উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাসহ নব্য মুখোশ বাহিনীর প্রধান বর্মাসহ আরো সকলের উপর যে হামলা হয়েছে আমরা এই দুই ঘটনার কোনোটার সাথেই জড়িত নাই। এই লক্ষ্যে উক্ত ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে উক্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও জানিয়েছি।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর মুখপাত্র সজীব চাকমা বলেছেন, পার্বত্যচুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই উত্তরনে সরকারকেই এগিয়ে আসার উপর গুরুত্বারোপ করে জনাব সজীব চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পাহাড়ের এইসকল সকল সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলম কবির জানান, সার্বিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্তিপূর্ন এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি জানান, ছয়জন হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি তবে প্রক্রিয়াধীন আছে। মামলা হলে আপনারা জানবেন।
এদিকে ইউপিডিএফর দুই নেত্রী মন্টি ও দয়াসোনা চাকমা অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে সশস্ত্র হামলার ঘটনাবহুল সার্বিক পরিস্থিতির অত্যন্ত সতর্ক নজর রাখছে নিরাপত্তা বাহিনী। এমন তথ্য জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানালেন, আমরা এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। উপরমহল পরিস্তিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আপাতত কোনো পদক্ষেপের তথ্য আপনাদেরকে দিতে পারছিনা।
একদিকে দিনেদুপুরে সশস্ত্র হামলা, ব্রাশ ফায়ারে হত্যা, বন্দুক যুদ্ধ, অপহরণসহ ব্যাপক চাঁদাবাজির সাথে জড়িত আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম পার্বত্যাঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতিতে পাহাড়ের উৎকন্ঠিত মানুষ এখন বিকেল হলেই নিজেদেরকে লুকিয়ে ফেলেন। অজানা আতঙ্ক নিয়ে কাটছে প্রতিটি মুহুর্ত।
পাহাড়জুড়ে অজানা আতঙ্ক উৎকন্ঠা
নানিয়ারচরে ২৪ ঘন্টায় ছয় হত্যাকান্ডের পর পাহাড়জুড়ে নেমে আসা থমথমে পরিস্থিতির এখনো অবসান হয়নি। চারদিকে বিরাজ করছে এক অজানা আতঙ্ক, বিবাদমান স্বশস্ত্র আঞ্চলিক দলগুলোর দ্বন্ধ কোন সময় কোন দিকে মোড়নেয় এনিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে পাহাড়ের মানুষ।
গত রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেনসেনাবহিনীর চট্টগ্রামরেঞ্জের জিওসি। তবে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলেননি। নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, দুই হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল রেকি করাসহ স্থানীয়দের বক্তব্য ও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে গত দু’দিনে যৌথবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের পালিয়ে যাবার পথথেকে একটি একটি সম্ভাব্য এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে সন্ত্রাসীরা থাকতে পারে। সহসা এসব এলাকা ঘিরে অভিযান শুরু করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। তারা অস্ত্রধারীদেও গ্রেপ্তারসহ অপহৃত তিন বাঙালি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে। ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যেও কোনো মামলা না হওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা বিষয়টিকে রহস্যজনক বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা না হলেও পুলিশ বাদী হয়ে এখন পর্যন্ত কেন মামলা হচ্ছে না’ বিষয়টি বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানিয়েছেন, মামলার ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশসহ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযান পরিচালনা করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তার আগে, শনিবার নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি আরও বলেন, পরপর দুইটি ঘটনায় নিহত নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদেরচেয়ারম্যান শক্তিমান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা গ্রুপ) সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা এবং ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক প্রধান তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ নিহত অন্যান্যদের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তাদেরকে মামলা দায়ের করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি কিন্তু তারা মামলা দায়ের করবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছে। পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, শনিবারের মধ্যে যদি ভিকটিমদের পরিবার মামলা না করে তাহলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। দুইদিনে ৬জনকে হত্যার পরসেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান। তবে পুরো নানিয়ারচর এলাকায়যৌথবাহিনীর টহলজোরদার করা হয়েছে। এদিকে গত ৩ এপ্রিল নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে উপজেলাচেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদেও গ্রেফতারের দাবিতে গত রোববার রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেছে রাঙামাটিজেলা আইনজীবি সমিতি। এই মানববন্ধনথেকে জানানো হয়, এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের বিরুদ্ধে রাঙামাটিতে কোনো মামলা দায়ের করা হলে সেই আসামীদের পক্ষে রাঙামাটি বারের কোনো আইনজীবি আদালতে দাঁড়াবেনা। পাহাড়ের অব্যাহত সন্ত্রাস, চাঁদাজাজি, গুম-খুন, অপহরণের সাথে জড়িত সন্ত্রাসী আঞ্চলিক দল জেএসএস, ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গতকাল সোম ও মঙ্গলবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে টানা ৪৮ঘন্টা হরতাল পালন করার কর্মসূচী দিয়েছিল পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ।
বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ হোসাইন সাকিব জানান, বাঙ্গালী গাড়ি চালক সজিব হত্যাকারিদেরগ্রেফতার ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, মানিকছড়ি থেকে অপহৃত তিন বাঙ্গালীকে উদ্ধার ও সশস্ত্র কর্মকান্ড পরিচালনাকারি আঞ্চলিক দলজেএসএস-ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ এই তিনদফা দাবিতেসোমবার পাহাড়ে টানা ৪৮ ঘন্টার হরতালের ডাক দিয়ে সোমবার হরতাল পালন শেষে পরের দিন মঙ্গলবার হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয় দলটি।
এদিকে পাহাড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে উদ্যোগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপল্সডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সংগঠনটিররকেন্দ্রীয় কমিটি সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থক ও জনগণকে শান্তথেকে ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতিমোকাবিলাপূর্বক পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে অবিচল থাকার আহŸান জানিয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে অশ্রু-রক্তপাত, সংঘাত ও ভূমিবেদখল বিচ্ছিন্নকোন ঘটনা নয়, তা নীলনক্সা মাফিক বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে শক্তিমান ও তপনজ্যোতি বর্মাসহ ছয় জনের মৃত্যুরপেছনে আসলে সরকার-কায়েমী স্বার্থবাদী একটিশ্রেণী জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন ইউপিডিএফনেতৃবৃন্দ।
শীঘ্রই যৌথ অভিযান
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরগ্রেফতারে তিন পার্বত্য জেলায় শিগগিরই যৌথ অভিযান চালাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর সহায়তায় এই অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আই জি। আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারের বিরোধকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলে দু’দিনের ব্যবধানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ছয় জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে এইযৌথ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সময় যতো গড়াচ্ছে, তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি যেন ততোটাই জটিল হয়ে উঠছে। শান্তি চুক্তির অন্যতম অংশীদার পার্বত্য জন সংহতি সমিতিযেমনভেঙে দু’ভাগ হয়েছে।তেমনি চুক্তির মূল বিরোধীতাকারী ইউপিডিএফ’ও ভেঙে দু’ভাগ হয়ে গেছে। আঞ্চলিক দলগুলোরনেতৃত্বে চার ভাগ হলেও তৃনমূল পর্যায়ে বিভক্তি অনেকবেশি। চাঁদাবাজি এবং অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় এখন এসব উপ-গ্রুপের আয়ের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে সাথে খুন এবং গুমতো রয়েছেই। আর এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার জন্য প্রতিটি গ্রুপের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলো প্রশাসনের কাছে। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‹চাঁদাবাজির জন্যই মূলক চারটি সংগঠন গড়ে ওঠেছে। চাঁদাবাজির কারণেই পার্বত্য এলাকা তারা চষেবেড়াচ্ছে।› রাঙ্গামাটিজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকমোহাম্মদ মুছা মাতব্বর বলেন, ‹এখনইযৌথ অভিযানের সময়। একজন জনপ্রতিনিধিকে দিনে দুপুরে হত্যা করা কারোর কাম্য নয়।› রাঙ্গামাটি পার্বত্যজেলার দুর্গম এলাকা হিসাবে পরিচিত বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, মারিশ্যা এবং লংগদু এলাকায় দুর্বৃত্তরা অনেকটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার নানিয়ারচর এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয় ৫ জন। এর আগের দিন একই এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান উপজেলাচেয়ারম্যান ওজেএসএসনেতা অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা। এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার কথা বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপাদেওয়ান বলেন, ‹আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যেযে আত্মঘাতী সংঘাত শুরুর হয়েছে আমরাযেটাকে ভ্রাতৃঘাতীও বলি এটা আসলে খুব অনাকাক্ষিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিবাসীফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, ‹অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করা অত্যন্ত জরুরি।›
পার্বত্য অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, বিজিবি ওসেনাবাহিনী কাজ করে। তাইযৌথ অভিযানেপ্রতিটি বাহিনীকেই সম্পৃক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামরেঞ্জের ডিআইজি। ড. এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অপরাধী অপরাধীই। সেটা রাজনৈতিক বা সামাজিকযে কারণেইহোক। এখানে আমরাসেনাবাহিনীর সঙ্গেযৌথ অভিযান অব্যাহত রাখবো।› তবে গহীন অরণ্যের দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযান চালাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে চরমবেগপেতে হয়। আর এই সুযোগে পালিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ