পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে পার্বত্য জেলাগুলোর পাশাপাশি সারা দেশে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সমাজের সর্বস্তরে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সকলের সাথে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থা থাকবে। এখানে কে পাহাড়ি, কে বাঙালি সেটা বড় কথা না। মানুষ মানুষই। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে। গতকাল সকালে গণভবনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বান্দরবান জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা তিনি। ভিডিও কনফারেন্সে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, বান্দরবান এক সময় অশান্ত বান্দরবান ছিল। এখন শান্তির বান্দরবানে রূপান্তরিত হয়েছে। উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে এগিয়ে চলেছে। এর প্রেক্ষিতে তিনি একথা বলেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাঙামাটিতে ৬ জন খুন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী আমি বলব, শান্তি, নিরাপত্তা এবং একটা স্বস্তিমূলক পরিবেশ আমাদের একান্তভাবে দরকার। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়; ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে। সেই সোনার বাংলাদেশই আমরা গড়তে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার হার বাড়াতে আবাসিক স্কুল তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, যদিও আমরা যোগাযোগ ববস্থার অনেক উন্নতি করেছি, ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, আবাসিক স্কুল থাকলে পরে তাদেরকে এত দূর দূরান্ত থেকে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। সেখানে থেকে তারা পড়াশোনা করতে পারবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি আবাসিক স্কুল চালু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি আরও বেশি আবাসিক স্কুল হোক।
পাসের হার কিছুটা কম মনে হলেও সেটা খুবই হতাশাজনক না : এসএসসি ও সমমানের ফলাফল হাতে পাওয়ার পর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাসের হার কিছুটা কম মনে হলেও সেটা খুবই হতাশাজনক না। কারণ ৭৭.৭৭ ভাগ পাস করাও কম কথা না। আগামীতে এটা আরও বৃদ্ধি পাবে, সেটা আমি আশা করি। তিনি বলেন, যারা পাস করতে পারেনি, তাদেরকে হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে এবং আবার পরীক্ষা দিলে অবশ্যই যারা পাস করতে পারবে। যারা ফেল করেছে তাদের পাশে দাঁড়াতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিভাবকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, যদি কেউ যদি কেউ অকৃতকার্য হয়ে থাকে, তাদেরকে বকাঝকা করে লাভ নাই। ‘বরং তাদের প্রতি আরও মনযোগী হতে হবে যেন তারা আরও মন দিয়ে পড়াশোনা করে আর পড়াশোনা করলেই তারা আগামীতে পাস করতে পারবে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও আমি এই কথাই বলব।
মেয়েদের প্রশংসা করে ছেলেদেরকে পড়াশোনায় আরও মনযোগী হতে শেখ হাসিনা বলেন, পাসের ক্ষেত্রে মেয়েরা দুই ভাগ বেশি। এটা ঠিক না, আমাদের ছেলেদের আরও মনযোগী হতে হবে। তারা যেন সমান সমান পাস করে, এটা আমরা চাই। আমি সকলকে বলব লেখাপড়ায় মনযোগ দিতে হবে। লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে যা যা করণীয়, আমাদের সরকার করে যাচ্ছে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ আমরা তখনেই বলতে পারব, যখন আমাদের দেশের মানুষ শতভাগ শিক্ষিত হবে। শিক্ষা এমন একটা জিনিস যেটা কখনও কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কাজেই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একটা দেশকে সমৃদ্ধশালী করা যায়। আগামীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বাংলাদেশের আরো অনেক সোনার ছেলের প্রয়োজন রয়েছে।
পরে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ পৃথকভাবে স্ব-স্ব শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের কপি প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বিভাগ সংক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল এবং বান্দরবন জেলা সংযুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী পরে জেলা দুটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০টি শিক্ষা বোর্ডের ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫১৪ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০৪ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। এসএসসিতে আটটি শিক্ষাবোর্ডে পাশের হার ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে পাশের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ বছর ১ ফেব্রæয়ারি থেকে ৪ মার্চ সারাদেশে মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ ১০টি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
খাদ্যের আপদকালীন মজুদ গড়ুন: এদিকে এসএসসি ফলাফল হস্তান্তরের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলায় পাঁচ লাখ পরিবারের মাঝে পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে দেশের মানুষকে আপদকালীন খাদ্য মজুদ গড়ার আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য থাকবে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের যেন খাদ্য মজুদটা নিশ্চিত থাকে। যাতে কোনমতেই কখনো আমরা খাদ্য ঘাটতিতে না পড়ি। এ জন্য আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মুজদ রাখুন। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কসিটির সভাপতি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সাহাবুদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে পাবিারিক সাইলোর বিভিন্ন ব্যবহারিক দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ঝালকাঠির জেলা প্রশাকের কার্যালয়ে উপস্থিত প্রকল্পের অনেক উপকারভোগী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের অনূভূতি ব্যাক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতিটা কৃষিভিত্তিক এই অর্থনীতিটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষি কাজটাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য আমরা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ যেন কৃষিকাজে বিমূখ না হয়। আর শিক্ষিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আরো ভালোভাবে কৃষিকাজ করতে পারে, বাপ-মাকে সাহায্য করতে পারে। সেভাবে তাদের মানসিকতাটাকে গড়ে তুলতে হবে। সেটাও আমাদের শিক্ষার সাথে থাকা উচিত। তিনি বলেন, শিক্ষিত হয়ে গেলেইতো আবার অনেকে ক্ষেতে নামতে চায় না। এজন্য ধান কাটার মওসুমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে কলেজের ছেলেদেরকে অন্তত ক্ষেতের সঙ্গে পরিচয় করাতে ক্ষেতে নামানো যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। পারিবারিকভাবে এই সাইলো বিতরণের উদ্যোগকে যুগান্তকরী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে প্রতিটি পরিবার খাদ্যের নিজস্ব আপদকালিন খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ একটি ষড়যন্ত্রের ফসল ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপরই জাতির পিতা বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক খাদ্য মজুদের জন্য গুদাম গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। যাকে খাদ্যটা নিরাপদে থাকে এবং দুর্যোগকালিন এর ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, দুর্যোাগের সময় সময় আমাদের সবকিছুই ভেসে যায়, নষ্ট হয়। এজন্য এখন চিলিং সিষ্টেমের সাইলো (খাদ্য গুদাম) করা হচ্ছে ২/৩ বছরেও যেটাতে খাদ্য রাখলে নষ্ট হবে না। শান্তাহারে (বগুড়ার শান্তাহার) এমন একটি খাদ্য গুদাম করা হয়েছে। মোংলাতে করছি এরকম বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারেও যখন বন্যা, হলো অতিবৃষ্টি হলো আমাদের হাওড় অঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য নষ্ট হলো। সাথে সাথে আমরা খাদ্যের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে, খাদ্য কিনে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। সেখানে আমরা এতটুকুও কালক্ষেপণ করিনি। তিনি বলেন, মানুষের খাদ্য চাহিদা হচ্ছে তার মৌলিক চাহিদা। সর্বপ্রথম তার খাদ্য চাহিদাটা পূরণ করতে হবে। দেশকে ভিক্ষুক বানিয়ে রাখতে আর বিদেশ থেকে এই কঙ্কাল সার রুগ্নœ জনগণকে দেখিয়ে টাকা নিয়ে এসে নিজেদের আখের গোছাতেই বিএনপি এমনটা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন, বিএনপি সরকারের নীতিটাই ছিল তারা ভিক্ষুকের সর্দার হয়ে থাকতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশের মানুষের খাদ্য, পুষ্টি এবং স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করা সহ সার্বিক জীবন-যাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষকে উন্নত জীবন দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। আর সে কারণে সরকার একর পর এক বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।