Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইয়াবা পাচার এখন যেন গণসার্ভিসে পরিণত হয়েছে

চান্দিনায় ইয়াবাসহ বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক আটক

| প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে : ইয়াবা পাচার এখন গণসার্ভিসে পরিণত হয়েছে। নিত্য-নতুন কৌশল অবলম্বন করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ইয়াবা পাচারে এক সময় কতিপয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। পরে সেবনকারীরাও পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এখন সাধারণ নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, চিকিৎসক এমনকি এ কাজের সঙ্গে পুলিশ-আনসারসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনও জড়িয়ে পড়েছে। ফলে ইয়াবা পাচার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরেই বলা চলে। মাত্র এক সাপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় এবার আটক করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক ডা. মোস্তাক আহমেদ কাজলকে। জিজ্ঞাসাবাদে তার বিবরণেও ইয়াবা পাচারের নতুন কলা-কৌশল সম্পর্কে জানা যায়। পুলিশকে দেয়া তথ্যে চিকিৎসক মোস্তাক আহমেদ কাজল বলেন, দীর্ঘ ১-২ বছর ধরে তিনি ইয়াবা পাচার করছেন। কিন্তু কৌশলের কারণে কোনো সময়ই ধরা পড়েননি। তবে এবার পেছনে থাকা লোকের কারণে তিনি ধরা পড়েছেন।
ডা. মোস্তাক আহেমদ কাজল বলেন, আগে এক সময় কক্সবাজার থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ইয়াবা পাচার করতেন তিনি। পরে তা পুলিশের নজরে আসায় কয়েকটি প্রাইভেট গাড়ি ধরা পড়ে। ফলে বিরতিহীন বাস সার্ভিসে ইয়াবা পাচার শুরু করি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সরাসরি ইয়াবা না নিয়ে গ্রামের ভেতরের সড়কগুলো দিয়ে টেম্পু বা সিএনজি অটোরিকশায় ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। সাতকানিয়া থেকে বাঁশখালী বাঁশবাড়িয়া থেকে চন্দনাইশ পটিয়াতে নেমে বোয়ালখালী সড়ক দিয়ে চট্টগ্রামে ইয়াবা আনা হচ্ছে। একইভাবে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কেও মিরসরাই, ফেনী ও কুমিল্লায় নেমে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। আর এতগুলো সড়কে পাহারা দেওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভবও নয় বলে নির্বিঘেœ পাচার চলছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য দেয় মোস্তাক আহেমদ কাজল। গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় ১ হাজার ২০০ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ চিকিৎসক মোস্তাক আহেমদ কাজল (৩৮) পুলিশের কাছে গ্রেফতার হন। এ সময় তার সাথে থাকা বন্ধু ঠিকদার মঈন উদ্দিন (৪২) ও গাড়ি চালক হাসু মিয়া (৩৯) কে আটক করেছে চান্দিনা থানা পুলিশ। মহাসড়কের চান্দিনা-বাগুর বাসস্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করে পুলিশ। চিকিৎসক মোস্তাক আহেমদ কাজল চুয়াডাঙ্গা জেলার ধামড়হুদা উপজেলার দলিয়াপুর গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে। তিনি ২৪তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারি হিসেবে কর্মরত আছেন। এ সময় আটক করা হয় তার বন্ধু মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার উত্তর বাঁশগাড়ি গ্রামের মুজিবুল হকের ছেলে মঈন উদ্দিন (৪২) এবং গাড়িচালক রাজধানীর আদাবর থানাধীন মোহাম্মদপুর শেখেরটেক এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে হাসু মিয়া (৩৯)। মাঈন উদ্দিন নিজে একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার বলে পরিচয় দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রে. জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ-আল-হারুণ ইনকিলাবকে ডা. মোস্তাক আহমেদ কাজলের গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধ করলে শাস্তি হবে এটাই বাস্তবতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চান্দিনা থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মনিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মহাসড়কে নিয়মিত টহলরত অবস্থায় সন্দেহজনকভাবে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৯-৯৭২২) গতিরোধ করে তল্লাশি চালানোর পর তাদের প্রত্যেকের পকেটে ৪০০ পিস করে মোট ১২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ তারা জানান, কক্সবাজারের টেকনাথ থেকে তারা ইয়াবা নিয়ে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ