পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : স্থায়ী ও টেকসই অর্থনীতির পথে নানামুখী চ্যালেঞ্জ দেখছে গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’। সংস্থাটি বলছে, বড় অংকের বাজেট দেওয়া হলেও সরকারের খরচ বেড়ে যাওয়া ও রাজস্ব আয়ে ঘাটতির কারণে বাজেট তার ভারসাম্য হারাচ্ছে।
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উন্নয়ন অন্বেষণ জানাচ্ছে-খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে, কৃষি ও শিল্প উভয় খাতে প্রবৃদ্ধি থাকছে অনেক কম, আমদানি খরচ বাড়লেও পাশাপাশি রফতানি আয় সেই অনুপাতে না বাড়ায় ডলারের দামের অবমূল্যায়ন ঘটছে। যে কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঋণ শোধেও বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে।
এছাড়াও দারিদ্র্যের হার কমার ধীরগতি, আয় বৈষম্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেও অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্থায়িত্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে গবেষণা সংস্থাটি।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের আসন্ন বাজেট সামনে রেখেছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ বা ঋণের ক্ষেত্রে আসবে পরিবর্তন। সরকারকে এসব বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী ও রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, এনজিওসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের প্রাক বাজেট আলোচনা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এসব আলোচনায় অর্থনীতির নানা সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি নানা সুবিধা চেয়েছেন তারা। ব্যবসায়ীরা করপোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করেছেন, কমানোর কথা বলা হয়েছে ব্যক্তি কর মুক্ত আয় সীমাও। এছাড়া, বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের নিজেদের সেক্টরে কর মওকুফ চেয়েছেন।
স্টেক হোল্ডারদের পাশাপাশি অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জসহ বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। তারই ধারাবাহিকতায় গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ তাদের এপ্রিল মাসের প্রতিবেদনে অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের খরচ বেড়ে যাওয়া ও রাজস্ব আয়ে ঘাটতির কারণে বাজেট তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। গত আট মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫০ দশমিক ৯১ শতাংশ। টাকার অংকে যার পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরে একই সময়ে এই আদায়ের পরিমাণ ছিল ৫৩ শতাংশের বেশি।
খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে মন্তব্য করে রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে বলছে, ২০১৭ সালের শেষের ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের নয় দশমিক ৩১ শতাংশ। এই বাস্তবতাকে মোকাবেলা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলছে প্রতিষ্ঠানটি।
কৃষি ও শিল্প খাত নিয়ে উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদন বলছে, কৃষিতে এখনো যথাযথ প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না। সেই সঙ্গে শিল্পখাতেও নেই পর্যাপ্ত উৎপাদন। এ কারণে এই দুটি খাতে প্রবৃদ্ধি অনেক কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। যা আগের বছরের চেয়ে এক শতাংশ কম। অন্যদিকে, কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ যা আগের বছরের চেয়ে এক শতাংশ বেশি। তবে, প্রতিষ্ঠানটি এই দুটি খাতে চলতি অর্থবছরের কোনো প্রবৃদ্ধির হার দেখায়নি।
সম্প্রতি দেশে আমদানি খরচ বেড়েছে। কিন্তু পাশাপাশি রফতানি আয় সেই অনুপাতে না বাড়ায় অবমূল্যায়ন হয়েছে ডলারের দামে। এতেই চাপ তৈরি হয়েছে আমদানি রফতানি ভারসাম্যে, মত উন্নয়ন অন্বেষণের। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসেব দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার আগের চেয়ে কম। আর চলতি অর্থবছরের আগষ্ট মাসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার হলেও মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়ায় তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
যেহেতু আমদানি রফতানির ভারসাম্যের কারণে ডলারের অবমূল্যায়ন হয়েছে তা বৈদেশিক বাণিজ্যের ঋণ শোধেও বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বেড়ে ১১শ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিকে অর্থনীতির জন্য আশংকা হিসেবে দেখছে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’।
অর্থনীতিবিদ বা সংশ্লিষ্টরা বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ কমপক্ষে ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ হলে অর্থনীতি গতি পায়। অথচ দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ গত ১০ বছর ধরেই ২২ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। আবার ব্যাপকহারে অর্থপাচারের কারণে সরকারিখাতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি আটকে আছে। এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগে অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কথা বলছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। গেøাবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির সবশেষ ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে নয় বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানাচ্ছে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’।
সরকারি হিসেবে, দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে, এই হার ধীরগতি হিসেবে উল্লেখ করেছে উন্নয়ন অন্বেষণ। একই সঙ্গে আয় বৈষম্য বাড়ার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্থায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাৎসরিক গড় হিসেবে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুলাই থেকে বেড়ে মার্চ মাসে দাঁড়িয়েছে সাত দশমিক ৩১ শতাংশে।
কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থার ঘাটতির পাশাপাশি সামাজিক খাতে অপর্যাপ্ত সরকারি ব্যয় অর্থনীতিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবৃদ্ধি অসন্তোষজনক জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে এক লাখ বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেকারের সংখ্যা হয়েছে ২৬ লাখ ৮০ হাজার। আংশিক বেকার ১৪ লাখ ছয় হাজার। এছাড়া, শিক্ষা, কর্ম বা প্রশিক্ষণ কোথাও নেই এমন বেকারের সংখ্যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চার কোটি ৮২ লাখ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সে সংখ্যা ছিল চার কোটি ৬৬ লাখ। একই সঙ্গে মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও এখন ৪৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মানবসম্পদ উন্নয়নেও হতাশাজনক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। তারা বলছে, ২০১৭ সালে বিশ্ব মানবসম্পদ সূচকে ১৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১১১ তম। দেশে ৩৯ শতাংশ শিক্ষিত বেকার থাকার পরও বিদেশি কর্মীরা প্রতিবছর ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। স্বাস্থ্যখাতে খরচ বেড়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত স্বাস্থ্যখাতে খরচ বেড়েছে ১১ শতাংশ। অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে পকেট থেকে ৫৬ শতাংশ অর্থ খরচ হলেও ২০১৫ তে হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আরো কঠিন করে তুলছে বলে মত ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’র। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, রাজস্ব আয়ের সক্ষমতা বাড়ানো, আর্থিক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, সঠিক নীতি প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানো এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ানোর তাগিদ রয়েছে এই প্রতিবেদনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।