পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ও সেনা কর্মকর্তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলকে মিয়ানমার সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে বোঝানো চেষ্টা করছে যে তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফেরানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সম্ভব সবকিছুই করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংস হামলার পর গত ৯ মাসে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে গেছে।
তবে সফরটি শেষ হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো অর্জন ছাড়াই। মিয়ানমার সরকারের জন্য এটি ছিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর ১৫ জন সিনিয়র কূটনীতিককে বোঝানোর একটি সুযোগ। আর কূটনীতিকরা পেয়েছিলেন ভয়াবহ যে বিপর্যয়টি সারা দুনিয়ার নজর কেড়েছিল তা সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখার সুযোগ।
অবশ্য, এই সফরের পরিণতি হতে পারে সুদূরপ্রসারী। এর জের ধরে আন্তর্জাতিক অবরোধ জারি হতে পারে, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। আবার এর মাধ্যমে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এমন এক নতুন সহযোগিতার যুগে প্রবেশ করতে পারে যার ফলে উদ্বাস্তু সঙ্কটটি কেটে গিয়ে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, প্রত্যাবর্তন ও পুনঃবসতির পথ দেখাতে পারে।
জাতিসংঘ দলটি বাংলাদেশে উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেছে। উদ্বাস্তুরা খুবই করুণ অবস্থায় রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতিত হওয়া, ধর্ষিত হওয়া, সহিংসতার শিকার হওয়ার স্মৃতি। মিয়ানমারে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের সাথে যোগ দিয়েছিল আসিয়ান প্রতিনিধিরা। তারা সেখানে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও সেনা কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের সাথে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। এরপর তারা একটি দিন ব্যয় করেছেন রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে। তারা অভ্যর্থনা কেন্দ্র, ট্রানজিট ক্যাম্প ও পুনঃবসতির জন্য নির্ধারিত একটি গ্রাম পরিদর্শন করেন।
সফরকালে মিয়ানমারের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দ জোর দিয়ে বলেন, তারা ‘বৈধ’ উদ্বাস্তুদের সবাইকে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ সফরের সময়ই প্রকাশিত এক বিবৃতিতে স্টেট কাউন্সিলর বলেন, উদ্বাস্তুদের অবশ্যই ‘নিরাপদে, মর্যাদার সাথে ও স্বেচ্ছায়’ ফেরাতে হবে। আর তা করার জন্য এখনই মিয়ানমার ও জাতিসংঘকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।
মিয়ানমার সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য ছিল। তবে গত কয়েক সপ্তাহে সু চি জাতিসংঘের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানানোর মধ্যেই বোঝা যাচ্ছে, তারা জাতিসংঘের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। পর্দার আড়াল থেকে সাবেক থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুরাকিয়ার্ট সাথিনথাইয়ের নেতৃত্বাধীন তার আন্তর্জাতিক পরামর্শক দল তাকে এই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিল।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের পদস্থ সূত্র অচলাবস্থার জন্য মিয়ানমার সরকারকে দায়ী করেছে। উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হলেও এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) ও জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর)কে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি স্থবির হয়ে আছে।
স¤প্রতি সু চি বলেছেন, তিনি তার দেশের সমস্যাগুলো সুরাহার জন্য জাতিসংঘের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। সফরকালে মিয়ানমার সরকার রাখাইন প্রশ্নে কফি আনান উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে তাদের প্রয়াস সম্পর্কে অবগত করেন। দেশটির গোলযোগপূর্ণ পশ্চিম অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও উন্নয়নে সরকারের রোডম্যাপও তারা দেখান। সু চি এই রোডম্যাপ অনুমোদন করেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, কফি আনানের দলটি রাখাইনের সব স¤প্রদায়ের উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন।
তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, এসব সুপারিশ রাখাইনে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন আনতে সরকারের প্রয়াস বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে।
সরকার এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করার জন্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিট আয়ারের নেতৃত্বে ‘ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ ফর হিমেনিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিসেটলমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ গঠন করেছে। রাখাইনে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের সফরের সময় এ মন্ত্রীও সাথে ছিলেন। উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন, পুনঃবসতি স্থাপন ও রাখাইন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য এই কমিটি জাতিসংঘের সাথে কাজ করে যাবে।
সরকারের উদ্যোগের প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় ধীর গতির জন্য হতাশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল। যেভাবে কাজ এগুচ্ছে, তাতে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে অন্তত তিন বছর লেগে যাবে। এত দীর্ঘ সময় তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। প্রতিনিধিদলের এক সদস্য সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, এখন পর্যন্ত একেবারে খুব কম লোককে ফেরানো হয়েছে।
জাতিসংঘ সফরের ফলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) পথ দেখাতে পারে বলেও আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার নেতাদের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বলেছেন, গত বছরের আগস্ট মাসের পর রাখাইন রাজ্যে যে সামরিক দমন অভিযান চলেছে, তার একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের কয়েকজন সদস্য বলেন, তদন্ত হতে হবে ন্যায়সঙ্গত ও স্বীকৃত। রাজধানী নেপিয়াদোতে সফরের শেষ কালে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি কারেন পিয়ার্স বলেন, জবাবদিহিতা থাকার জন্য স্বীকৃত পন্থায় যথার্থ তদন্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, দুটি পন্থায় তা করা যায়। একটি হলো আইসিসির মাধ্যমে অন্যটি মিয়ানমার সরকার নিজেরাই করতে পারে। প্রতিনিধিদলের আঞ্চলিক সদস্যরা এসএএমকে বলেন, সিনিয়র জেনারেল ও সু চি উভয়ের সাথে বৈঠকের সময়ই স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে সু চির আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন প্রতিনিধিদলের সবাই। তবে সেনাপ্রধানের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি পোলিশ প্রতিনিধি জোয়ানা রঙনেকা ইঙ্গিত দেন, মিয়ানমার পরিস্থিতিতে কেউই সন্তুষ্ট নয়। এ ব্যাপারে নজর রেখে যাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। সফরের সূচনাকারী ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে আরো স্পষ্টভাবে বলেন, আমি মনে করি, পরিষদের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। আমরা অনেক কিছু করতে পারি, আমরা আনান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের কাজ দ্রæত করতে পারি। সূত্র : এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।