Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাহাড়ে আর এক ফোঁটা রক্তও ঝরতে দিবোনা ডিআইজি

ঘটনাবহুল নানিয়ারচরে থমথমে পরিস্থিতি : চলছে যৌথ অভিযান

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সৈয়দ মাহাবুব আহামেদ, রাঙামাটি থেকে: পরপর দুইদিন ছয় হত্যাকান্ডের পর পাহাড়জুড়ে নেমে আসা থমথমে পরিস্থিতির এখনো অবসান হয়নি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শনিবার বাড়ি থেকে বের হয়নি স্থানীয় মানুষজন। এ কারনে হাটবাজারেও লোকজনের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। এদিকে এমন থমথমে পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি। এসময় তিনি জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পুলিশ জীবন দিয়ে হলেও জনগণের জানমাল রক্ষা করবে। তিনি উল্লেখ করেন এখন থেকে পাহাড়ে পুলিশ নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। সরকারের উদ্বর্তন মহল থেকে এ ধরনের নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে। আপনাদের নিরাপত্তা বিধান করতে পাহাড়ে কর্মরত সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে পুলিশ সকলকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নানিয়ারচরে কাপুরোষিত, ন্যাক্কারজনক নির্মম ঘটনায় ব্যর্থতার দায়ভার কোনো ভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই উল্লেখ করে ডিআইজি ড. এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশকে যারা অশান্ত করতে চায় তারাই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করেছে, এখানে রক্তপাত করেছে। আমাদের পরিষ্কার কথা যারা আমাদেরকে শান্তি থাকতে দিতে চাচ্ছে না, আমরাও তাদের শান্তিতে থাকতে দিব না। এই ঘটনার সাথে জড়িত কুলাঙ্গাররা আর যাই হোক এই বাংলাদেশের সন্তান নয় উল্লেখ করে এদের বাড়িতে এরা বসবাস করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময়ে পাহাড়ে লাশের পর লাশ পড়ে থাকতো, সেই লাশের রক্তগুলো যদি নানিয়ারচরের নদীতে ফেলা হতো তাহলে পুরো কাপ্তাই লেক রক্তের নদীতে পরিণত হতো। এই অবস্থা থেকেই উত্তরনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি করেছিলো। মুষ্টিমেয় কিছু কুলাঙ্গারের কারনে এই শান্তি প্রক্রিয়া বিনষ্ট হতে পারেনা। জনগণের উদ্দেশ্যে ডিআইজি বলেন, আপনারা অচিরেই দৃশ্যমান দেখবেন সন্ত্রাসীদের কি হাল হয়। পাহাড়ের অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকবে উল্লেখ করে, জমিতে হালচাষ যেমনিভাবে করে ঠিক তেমনিভাবে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের খুঁেজ বের করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন ডিআইজি মনিরুজ্জামান। শনিবার বিকেলে নানিয়ারচর উপজেলা সদরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এসএম মনির-উজ-জামান এসব কথা বলেন।
সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে পুলিশের তেমন কার্যকর ভূমিকা অতীতে ছিলোনা। শনিবার বিকেলে ডিআইজির বক্তব্যে নতুনভাবে শান্তির প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালীরা।
এদিকে, নানিয়ারচরে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের ৬ নেতাকর্মী হত্যাকান্ডের পর সন্ত্রাসীদের ধরতে নানিয়ারচরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন, নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ। তিনি জানান, বর্তমানে নানিয়ারচরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যসহ ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।
তিনি জানান, নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস এমএন লারমা গ্রæপের সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা, ইউপিডিএফ সংস্কার গ্রæপের প্রধান তপনজ্যোতি বর্মাসহ ৬ জনের হত্যাকান্ডের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে শুক্রবার দুপুরে বেতছড়িতে বাঙ্গালী গাড়ী চালক সজীব হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় ৬মে কালো পতাকা উত্তোলন, ৭ ও ৮ মে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে পার্র্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ।
বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সাকিব বলেন, গাড়ীচালক সজীব হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও মহালছড়ি থেকে অপহৃত তিন বাঙ্গালীকে উদ্ধার করার দাবীতে তারা এই কর্মসূচী দিয়েছে। তিনি বলেন, সজীব হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও অপহৃত বাঙ্গালীদের মুক্তি না দিলে আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে বলে হুশিয়ারী দেয়া হয়।
এরআগে রোববার সকালে রাঙামাটিতে ঝটিকা সফরে এসেই স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মিটিং করেন ডিআইজি ও পুলিশের উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ। এসময় মিটিং শেষে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশকে যারা অশান্ত করতে চান তারাই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করেছে, এখানে রক্তপাত করেছে। আমাদের পরিস্কার কথা যারা আমাদেরকে শান্তি থাকতে দিতে চাচ্ছে না, আমরাও তাদেযেকোন মূল্যে আমরা তাদের চিহ্নিত করবো। ইত্যোমধ্যে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। এদেরকে সমূলে উৎখাত করা না পর্যন্ত এদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো। আপনাদের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকলকে আশ্বস্থ করতে চাই, আমরা তাদের পাশে আছি এবং সরকারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে আর এক ফোটা রক্ত যদি মাটিতে ঝরে, আমরা কঠোর ভাবে দমন করবো। আমরা এই ব্যাপারে কোন ছাড় দিব না। আপনি যদি এদেশের নাগরিক হন এদেশের আইন আপনাকে মেনে চলতে হবে। এর বাহিরে কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করতেছে। মামলা করতে চাচ্ছে না তা না, আমরা অনুসন্ধান কাজ আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। শুধু মামলাই হবে না, আমরা এদেরকে খুজে খুজে সেখানেই থাকুক না কেন সেখান থেকে আমরা তাদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নিব।র শান্তিতে থাকতে দিব না।
মাত্র ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে নানিয়ারচর উপজেলায় পরপর দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনার পর সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। নানিয়ারচরের একমাত্র সড়ক পথ রাঙামাটি মহালছড়ি খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে পাহাড়ি-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রণ বিকাশ চাকমা জানান, আমাদের জীবন এখন কুকুরের জীবনের চেয়েও খারাপ হয়েছে। একটি কুকুরেরও একজন প্রভু বা মালিক থাকে, কিন্তু বর্তমানে আমাদের তাও নেই।

 



 

Show all comments
  • Amin Md Al-Amin ৬ মে, ২০১৮, ১২:১৮ পিএম says : 0
    টহল চৌকিদারি বাদ দিয়া অস্র উদ্ধারে চিরুনি অভিযান চালান,নিরিহ মানুষদের খুনি চাঁদাবাজদের রাহুর গ্রাস থেকে মুক্তি দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ