Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চলন্ত ট্রেনে পাথর আতঙ্ক

নিক্ষেপকারীদের ধরতে মাঠে নামছে বিশেষ টিম

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বিশেষ সংবাদদাতা : দেশে নিরাপদ ভ্রমণ বলতে ট্রেনকেই বোঝায়। কিন্তু চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ট্রেন যাত্রীদের প্রাণনাশের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল খুলনায় এক চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে কর্তব্যরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শিকদার বায়েজিদ গুরুতর আহত হন। হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় এনে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বায়েজিদকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গতকাল শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। গত শুক্রবার রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেল কর্মচারি বায়েজিদকে দেখতে যান।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারন করছে। এটি যাত্রীদের জীবন যেমন নিরাপত্তাহীন করছে তেমনি ভাবিয়ে তুলেছে ট্রেনে দায়িত্বরতদের। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে শিগগিরই বিশেষ অভিযান শুরু হবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহারা বসানোর কথা জানিয়েছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতারা।
চলন্ত ট্রেনে কর্তব্যরত রেল কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের কমপক্ষে ৩৬টি পয়েন্টে প্রায়ই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। উঠতি বয়সি তরুণরাই কৌতুহলবশত: এ ঘটনা বেশি ঘটায়। তারা চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এ সময় নিক্ষিপ্ত পাথরে ট্রেনের যাত্রীরা আহত হতে পারে, মারা যেতে পারে-এসব চিন্তা তাদের মধ্যে থাকে না। অনেকে আবার ¯্রফে মজা করে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে। গত ৩০ এপ্রিলের ঘটনার আগেও চলন্ত ট্রেনে নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে ট্রেনযাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে প্রবেশকালে ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে ওই ট্রেনের সহকারি চালক আহত হন। ওই সময় ঢাকাগামী তূর্ণা এক্সপ্রেসের ছাদে থাকা কিছু যাত্রী এই পাথর নিক্ষেপ করে। একই মাসে জয়দেবপুরের কাছে চলন্ত লালমনি এক্সপ্রেসে পাথর ছুুঁড়ে মারলে ইঞ্জিনের গøাস ভেঙ্গে সহকারি চালক রাসেলের গলায় লাগে। এতে তিনি আহত হন। ট্রেন চালকরা জানান, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ভয়ে তারা সারাক্ষণই আতঙ্কিত থাকেন। এমনও ঘটনা আছে রেললাইনের উপর দাঁড়িয়ে বা বসে আড্ডা দিচ্ছে কিশোর বয়সিরা। দূর থেকে হুইসেল বাজানোর পরেও তারা রেল লাইন থেকে না সরায় বার বার হুইসেল দিলে তারা রাগান্বিত হয়ে চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছে। সেই পাথর গিয়ে লাগে ট্রেনের যাত্রীদের শরীরে। একজন ট্রেন চালক বলেন, দু’বছর আগে পাথর নিক্ষেপ্রের প্রবণতা আরও বেশি ছিল। প্রায় প্রতিদিনই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটতো। সে সময় ট্রেন চালকদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট প্রদানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা আর কার্যকর হয়নি।
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ঠেকাতে গনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ করে যে সব এলাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে সে সব এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে মানুষকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমরা বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি, স্থানীয় পর্যায়ে বারবার বৈঠক করেছি। সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করেছি, মাইকিং করেছি। এরপরও চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ হচ্ছে না। তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে অপরাধীদের আটক করা হবে। লাইনঘেঁষা এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরতে বিশেষ টিম মাঠে নামানো হচ্ছে।
এদিকে, স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বায়েজিদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তার জ্ঞান ফেরেনি। বায়েজিদের চিকিৎসা তত্ত¡াবধান করছেন নিউরো সার্জন ডা. রেজাউল সাত্তার। তিনি বলেন, তার অবস্থা আগের চেয়ে সামান্য উন্নতি হলেও এখনও তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
আহত বায়েজিদের ভাই মফিদুর রহমান বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। ভাইয়ের চিকিৎসায় এত টাকা কোথায় পাব। ডাক্তার বলেছেন, তাকে হাসপাতালে দীর্ঘদিন রাখতে হবে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ধার-দেনা করে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। রেলমন্ত্রী ৫০ হাজার টাকা ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ১ লাখ টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। কিন্তু বায়েজিদের চিকিৎসার জন্য আরও অনেক টাকার দরকার। এজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ