Inqilab Logo

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে -রিজভী

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও এখনও তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আমরা বার বার বলছি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে কোন কর্ণপাতই করছে না। উল্টো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করছেন। এদের নিষ্ঠুর রসিকতায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতভম্ব। যারা হত্যা এবং লাশ নিয়ে খেলা করে তাদের কাছে মানুষের জীবনের কিইবা দাম আছে? গতকাল (শনিবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রীকে মিথ্যা সাজানো ও জাল নথি তৈরির মাধ্যমে সাজা দিয়ে বন্দী করে বিনা চিকিৎসায় ধূকে ধুকে কষ্ট দেওয়াটাই হচ্ছে সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। এর পেছনে সরকার প্রধানের চরম প্রতিহিংসা কাজ করছে। দেশনেত্রীর প্রতি সরকারের আচরণ চরম মানবধিকার লঙ্ঘন ও আইনের লঙ্ঘন। শুক্রবারও আমরা খবর পেয়েছি-তাঁর হাঁটু ও শরীরে প্রচন্ড ব্যথাসহ নানাবিধ জটিল শারীরিক সমস্যা তাঁকে আক্রান্ত করছে। স্যাঁতসেতে পরিবেশে পরিত্যক্ত রুমে থাকায় এখন তিনি প্রায়ই জ¦রে ভুগছেন এবং কাঁিশ ও কফ লেগেই আছে। স্যাঁতসেতে ও ধুলাকীর্ণ এরকম অবস্থায় সাধারণত: নিউমোনিয়ার আশঙ্কা থাকে। তাঁর চোখে যে ব্যথা হচ্ছে সেটি এখনও সারেনি অর্থাৎ একই অবস্থাই আছে। কিন্তু সরকার তাঁকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। উনার হাঁটুতে ফরেন বডি থাকা এবং পিঠে-ঘাড়ে ও কোমরে প্রচÐ ব্যথার জন্য বিশেষ ধরণের এমআরআই এর প্রয়োজন। কিন্তু তাঁর জন্য বিশেষ এমআরআই এর যে দাবি করা হয়েছিল সেটিকেও সরকার পাত্তা দেয়নি।
কারা আইনে বন্দির সাথে প্রতিদিন দেখার করার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কারা আইনে একজন বন্দীর সাথে প্রতিদিনই দেখা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন তো দুরের কথা, দেশনেত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের যেখানে সপ্তাহে একদিন দেখা করতে দেয়া হতো সেখানে এখন ১০ দিন পর পর দেখা করার আদেশ জারি হবে বলে শোনা যাচ্ছে। জুলুমশাহীর হিং¯্র আচরণে দেশনেত্রীকে জর্জরিত করার জন্যই কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রীর সঙ্গে সরকারের এই আচরণে গোটা জাতি শুধু গভীরভাবে উদ্বিগ্নই নয়, মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত। তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানান। অন্যত্থায় দেশবাসী আর বসে থাকবে না। নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই পালন করবে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, লুট, হরিলুট, চাঁদাবাজী, দখলবাজী, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, সমস্ত ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও নির্যাতন-নিপীড়ণে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যে ক্ষোভের আগুন জ¦লছে, যেভাবে মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরণ করে কালা বোবা বানানো হয়েছে, তা থেকে বাঁচতে পুরো জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।
শেখ হাসিনার প্রশাসনকে অকর্মণ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকারের সর্বত্রই ক্ষমতা-আশ্রিত গুÐা-মাস্তানদের দাপট। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস আর গুÐামীকে নিজেদের জীবনাচরণে কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র তৎপরতায় শক্তিমান চাকমাসহ ছয়জন নিহত এবং বেশ কিছু সংখ্যক গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ নরসিংদীতে রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে দিনে-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা আওয়ামী দু:শাসনের এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। সরকারের পায়ের তলা থেকে জনসমর্থন সরে গেছে এবং তারা বেআইনি অস্ত্রকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে দূর্বৃত্তদের মাথায় হাত রেখে দেশ চালাচ্ছে বলেই সারাদেশ খুনখারাপীতে ভরে গেছে। সরকারের সৃষ্ট অশান্তির আগুনে ভেতরে ভেতরে সারাদেশের মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। এসমস্ত রক্তাক্ত ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী।
সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে পুলিশি তাÐব, গণগ্রেফতার এবং এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ দিনকে দিন আরও পরিব্যাপ্ত হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ নানাভাবে হয়রানিও করছে পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হানা দিয়ে ধরপাকড়ের তাÐব চালাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় জনতার ঢল দেখে আওয়ামী লীগ আইন-শৃঙ্ঘলা-বাহিনীকে দিয়ে হয়রানী শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী সরকারি দলের নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্বিচারে আক্রমণ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে সরকারের প্রশ্রয়ে পুলিশ হয়ে উঠেছে স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া। ভরাডুবির ভয়ে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। আওয়ামী শাসন কখনোই ভোটাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর হয়নি। গণমাধ্যমে একতরফা ফলাফল ঘোষণা করাই প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়।
নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, নির্বাচন কমিশন যেখানে দুই সিটির নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি, ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে তাদের দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন কিভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি বিএনপি’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধ, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি জানান। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গাজীপুরের এসপি ও খুলনার পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহারে ইসির প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যত্থায় দুই সিটিতে অবাধ, সুষ্টু ও ভয়মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাসাস সভাপতি ড. মামুন আহমেদ, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ