পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : দেশে এখন ভেজাল গণতন্ত্র চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্লজ্জ ও অনৈতিক সরকার। এই সরকার নীতিহীন এবং স্বৈরচারী। ভেজাল গণতন্ত্রের দেশে আইনের শাসন চলে না। সরকার তার ইচ্ছামতো দেশ শাসন করে। এসব অভিমত দেশের বিশিষ্টজন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের। ‘আইনের শাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা আরো বলেন, এ দেশে আর একটা ৫ জানুয়ারী মার্কা নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বিপন্ন হয়েছে। এর জন্য দায়ী ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিচার বিচার করতে হবে। তারা গণতন্ত্রের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের শামছুল হক চৌধুরী হলে গতকাল এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, গণস্বাস্থ্যের ট্রাষ্টি ডা, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকর মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আবদুল মতিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, বিএফইউজে একাংশের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমূখ।
ড. কামাল হোসেন বলেন, এই সংবিধান যেটাকে আমরা ধরে রেখেছি, তা বহু মূল্য দিয়ে পেয়েছি। এখানে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশে স্বৈরাচার কোনো দিন টিকে থাকতে পারবে না। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র কোনো দিন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘নির্লজ্জ ও অনৈতিক সরকারের’ উদাহরণ অবিহিত করে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, এই সরকার কতটা নীতিহীন এবং কতটা স্বৈরশাসক হতে পারে তা এই সরকারের আচরণই প্রমাণ করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমাকে বলেছিল আর একটি জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু এর পর ২০১৪, ১৫, ১৬, ১৭ গেল নির্লজ্জভাবে তারা এখনও দেশ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের লজ্জা নেই, নীতি নেই। এরা আমাদের ওপর বসবে, আর আমরা মেনে নেব? আসুন সব আইনজীবী ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেলায় জেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে দেই। দলমত নির্বশেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। তা না হলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে। ৫ জানুয়ারির মতো দেশে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করি। জনগণের ঐক্য থাকলে সব কিছু সম্ভব। এই নাগরিকদের ঐক্যের কারণে এরশাদের মতো এতো বড় স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। দেশে আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী রায় দেয়ায় প্রধান বিচারপতিকে অন্যায়ভাবে, অসাংবিধানিকভাবে বিদায় করা হলো। আমরা এর বিচার চাই।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত রায়ের কারণে দেশে ‘ভেজাল গণতন্ত্র’ এসেছে। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী ওই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়। যিনি এটা করেছেন পরবর্তীতে পুরস্কার হিসেবে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। তার কারণেই আমাদের দেশে এখন ভেজাল গণতন্ত্র চলছে। আর ভেজাল গণতন্ত্র যেখানে সেখানে আইনের শাসন চলতে পারে না। এই ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে বিচারপতি খায়ররুল হকের ভূমিকা রয়েছে তার বিচার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে বিএনপি ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত¡াবধায়ক প্রবর্তন করলেও সেটি উচ্চ আদালতে বাতিল হয়েছে আওয়ামী লীগের গত আমলে। এরপর সরকার আগের মতোই নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। সংবিধানের বিধানের বাইরে গিয়ে অনুযায়ী নির্বাচন করা সম্ভর নয়, এটা জানিয়ে দিয়েছে সরকার। তবে এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে-এমন ঘোষণা এখনও আসেনি। তাই আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় কাটছে না। এবারের ছাত্রলীগের কমিটি শেখ হাসিনা নিজে দেবেন বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের সূত্র ধরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ছাত্রলীগকে সাচ্চা বানাবেন। প্রশ্ন হলো ‘সাচ্চা’ ছাত্রলীগ করবেন, ঠিক আছে। কিন্তু ‘সাচ্চা’ আওয়ামী লীগ কীভাবে করবেন। আপনার আত্মীয়ের বাবা তো শান্তি কমিটিতে ছিলেন। এর সুরাহা কীভাবে করবেন?
আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, দেশে আইনের শাসনের পতনের শুরু ১৯৭৪ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। এরপর থেকে পতনের মাধ্যমে ’৮৮ সালে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়; ৯০ দশকে কিছুটা ছিল। এর ২০০০ এর পর চিতা, কোবরা দিয়ে আইনের শাসন নিম্নমুখী যাত্রা শুরু করে। এখন সেটা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। রাজনীতির কাণে সমাজ সাংঘাতিকভাবে বিভাজিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজে বিভাজন থাকে, রাজনৈতিক কারণে বিভাজন হয়। কিন্তু আজকে দেশ দুইটি জাতিতে পরিণত হয়েছে। দেশে এতো বিভাজন হতয়েছে যে এখন সমাজে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয় না, আমরা ওই জায়গায় চলে গেছি। এই সমন্ত হয়েছে পেশাজীবীদের লেজুরবৃত্তির কারণে। পেশাজীবীদের লেজুরবৃত্তি ছাড়তে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। এমনকি তা প্রবিধান করার জন্য কোনো আইন নেই। তাই পেশাজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। লড়াই করার মতো লোক লাগবে। একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থাই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করবে দেশকে। এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনের শাসন গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। রাজনৈতিক সব দলকে এক হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে। সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা জীবন থেকে নেওয়া চলচ্চিত্র দেখেছেন। এখাচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে! ওই গানটা ছিল ইয়াহহিয়া সময়ের কথা। তবে আজও সেই একই রকম সমস্যা এ খাচা ভাঙ্গতে আমাদের সব পেশাজীবীকে রাজপথে নামতে হবে। আজকে ভীতি এমন ভাবে ছড়ানো হয়েছে, ভীতির চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে দেশ। ভয় পেলে হবে না। সাহস করে নামতে হবে। এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমার ভোট আমি দেব তোমার ভোটও আমি দেব। ক্ষমতাসীনদের এই শ্লোগান চলছে। আমি তো দেশে গণতন্ত্র দেখি না, দেখি একনায়কতন্ত্র। একজনের ইশারা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ছে না। গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, আছে পুলিশী শাসন। আপনি অজীবন ক্ষমতায় কেন এর উপর কিছু থাকলে সেটাও করেন। ৫ জানুয়ারির মতো একটা নির্বাচন আমরা আর চাই না। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এখানে সভায় আমিসহ চারজন আছেন, যারা কোন কারণ ছাড়াই মামলার আসমী হয়েছেন জেল খেটেছেন; শুধুমাত্র এ সরকারের সমালোচনা করেছেন বলে। আমরা আগেও লেখালেখি করেছি কখনও এমন মামলার হয়রানির মুখমুখি হতে হয়নি। সর্বনাশ হওয়ার জন্য আর কত অপেক্ষা করবেন? এখনও সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে সরকার তা ওপর জুলুম করেছে; আরেক জুলুম করেছে তাকে জামিন না দিয়ে। ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল মতিন বলেন, গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত নির্বাচিত সরকার। এই সরকার জনগণের দ্বারা গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশে এখন স্বৈরতন্ত্রকে আঁকড়ে ধরেছে। যে দেশে আইনের শাসন নাই, একটি দল জনসভা করতে পারে না, মতো প্রকাশ করতে পারে না। সে দেশে কোথায় গণতন্ত্র? উল্টো আইসিটি আইন হয়েছে, ডিজিটাল আইন করা হচ্ছে, মতো প্রকাশ রোধ করতে।
সভাপতির বক্তব্যে সুপ্রিম কোট বার এসোসিয়েশন সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, দেশের প্রেক্ষাপট হচ্ছে বিচার বিভাগের নিম্ন আদালতগুলো সরকার ও প্রশাসনের কবজায়। সেগুলো ইচ্ছা মতো পরিচালিত হচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সুপ্রিমকোর্টও তাঁদের কবজায় বলে মনে হচ্ছে। দেশের জনগণ সুপ্রিম কোর্টের ওপর আস্থা রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। এমনকি দেশের প্রধান বিচারপতিকে বের করে দেওয়ার পরে আইনজীবী সমাজ শঙ্কিত। সুপ্রিম কোট, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে সব রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো হবে। সমস্ত রাজনৈতিক পেশাজীবী শক্তিগুলোকে এক করতে ভুমিকা পালন করবে সুপ্রিম কোট বার এসোসিয়েশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।