পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোঃ খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ, থেকে : দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী, দুয়ারাসহ আশপাশের এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, ও সরকারী হালটের প্রায় তিন বিঘা জমির মাটি রাতের আধারে কেটে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরচক্র। এরা এসব জমির মাটি কেটে পাশ^বর্তী ইটভাটাগুলোতে পানির দরে বিক্রি করছে একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র। প্রায় ৯ জনের সংঘবদ্ধ চক্রের দল রাতের আধারে বছরে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাটি কাটার ফলে দাউদপুর-কালীগঞ্জ বেড়িবাঁধ ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। মাটি চোর চক্রের সঙ্গে পরোক্ষভাবে আতাঁত করে বেলদী মাদরাসার অধ্যক্ষ মাদরাসার ওয়াকফ জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দুয়ারাসহ আশপাশের পানি উন্নয়ন বোর্ড, সরকারী হালট ও মাদরাসার ওয়াকফ জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। পানির দরে এসব জমির মাটি স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় সুলতান,জামান, কাইয়ুম, আলম, রশিদ, ছালেক, রূবেলসহ তাদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র গত কয়েক বছর ধরে বিক্রি করে আসছে। প্রতি বছরে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে। মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির পাশে থাকা দুয়ারা বেড়িবাঁধটি ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বেলদী মাদরাসার ওয়াকফ সম্পত্তি প্রায় ৯ শতক জমির মাটি কেটে নিয়েছে এ চক্রটি।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, বাঁধটি ধ্বসে গেলে বর্ষা মৌসুমে নদের পানি বাঁধের ভেতরে প্রবেশ করে বাড়ি ঘর ও কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ি পানিতে ডুবে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় জনসাধারন। সুলতান, জামান, কাইয়ুম, হুমায়ন, আলম, রশিদসহ এ চক্রটি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে দুয়ারা বেড়ি বাঁধের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির মাটি কেটে বসতবাড়ী নির্মাণের জায়গা ভরাট ও ইট ভাটায় মাটি গুলো বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলদি-দুয়ারা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় তিন বিঘা জমি গভীর খনন করে মাটি বিক্রি করছে এ চক্র। মাটি গভীর খননের কারনে বেড়ি বাঁধটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে শীতলক্ষ্যা নদীরপাড় এলাকায় অবৈধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারী জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটি চোর চক্রের কারনে বেলদি-দুয়ারা এলাকার বাঁধের আশেপাশে মাটি কেটে ফেলার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে বৃষ্টির মৌসুমে জনগনের চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে। সরকারী এসব সম্পত্তি স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালী চক্রটি জবরদখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এ সিন্ডিকেটের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস টুকুও পায় না। কেউ এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেই মামলা-হামলার শিকার হতে হয়। নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি জানান, বেলদী এলাকার জামান,কাইয়ুম,আলম, রশিদ,ছালেক,রুবেল, সুলতান স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা তাদের এ সকল অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। সরকারী এ জমির মাটি কেটে নিয়ে স্থানীয় ইট ভাটা গুলোতে বিক্রি করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির পাশেই রয়েছে বেড়ি বাঁধ। এভাবে মাটি কাটতে থাকলে যেকোন সময় বেলদী- দুয়ারা অংশের বেড়ী বাঁধটি ধ্বসে যেতে পারে। আর এ বেড়ি বাঁধটি ধসে গেলে প্রায় ১০ টি গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পরবে। আবাদী জমির ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। মাটি কেটে নেওয়ার ফলে ইতোমধ্যে পাশের বেলদি-দুয়ারা কবরস্থানটি অনেকটা ধ্বসে পড়েছে।
বাবুল নামে এক কৃষক জানান, অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করতে থাকলে দুয়ারা বেড়ি বাঁধটি ধসে গিয়ে ঘর-বাড়িসহ আবাদী জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তাই তিনি সরকারি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বেড়িবাঁধের পাশে মাটি কাটার ফলে প্রচুর ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। এতে করে গ্রীস্মকালে এ রাস্তাটি দিয়ে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। রাস্তার ধুলাবালির কারণে মাঝে মাঝে স্কুলে যেতে মন চায় না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটিতে অধিক পরিমানে কাদা থাকার কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।
এব্যাপারে বেলদী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পাশের জমিগুলোর মাটি বিক্রি করার ফলে মাদ্রাসার জমির মাটি ধ্বসে পড়েছে। তাই সভাপতি তোফাজ্জল মোল্লার নির্দেশক্রমে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, একটি চক্র রাতের আঁধারে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। তারা প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
উওর রূপগঞ্জের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নরসিংদী সেচ প্রকল্পের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দীন ইসলাম বলেন,ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে এবং ঘটনার সত্যতা পেলে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার জমির মাটি ইচ্ছে করলেই সভাপতি কিংবা অধ্যক্ষ বিক্রি করতে পারে না। আর সরকারী জমির মাটি যারা বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।