Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর মুগদা ও মান্ডায় ওয়াসার পানি সঙ্কট

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে পানির সঙ্কট নতুন কিছু নয়। রমজান এলে এই সঙ্কট তিব্র আকার ধারণ করে। মুগদাপাড়া ও মান্ডা এলাকার মানুষের পানি সমস্যা সারা বছর। এ এলাকার পাম্পগুলোতে নেই জেনারেটর ব্যবস্থা। তাই কখনও পাম্প নষ্ট, কখন বিদ্যুত থাকে না একটা না একটা সমস্যার কারণে পানি নিয়ে সারা বছরই এই এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে গত প্রায় দেড় মস ধরে মুগদাপাড়া ব্যাংক কলোনি ও মান্ডা এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। পানির সঙ্কটে মুগদাপাড়া ও মান্ডার প্রায় ৬ লাক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। অজু, গোসল, রান্ন-বান্নাসহ গৃহস্থালী কাজ করতে হচ্ছে অন্য এলাকা থেকে সংগ্রহ করা পানি ও কেনা পানির উপর নির্ভর করে। পানির অভাবে মুগদা রসুলবাগ জামে মসজিদের মুসলিরা অজু করতে পারছে না। অথচ এ এলাকার বাসিন্দারা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করতে হয় ওয়াসাকে। কিন্তু বাস্তবে তারা পানি সমস্যা দূর করতে পারছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরের এই ভোগান্তির কথা অসংখ্যবার জানানো হয়েছে ওয়াসাকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেসব কথা আমলেই নিচ্ছে না। বাস্তব চিএ দেখলেও তার প্রমাণ মিলে। ঢাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, দুই এলাকার দুই ধরনের সমস্যা সম্পর্কেই তারা অবগত আছেন। সঙ্কট কাটাতে তাদের চেষ্টাও অব্যাহত আছে বলে জানান।
ওয়াসার জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা তারেক মোস্তফা বলেন, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। খোঁজ খবর নিয়ে সমাধানের জন্য জোন অফিসকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন মুগদাপাড়া ও মান্ডা এলাকা ঘুরে ওয়াসার পাম্পগুলোতে সারাদিনই ভিড় দেখা যায়। পানির জন্য অনেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সকাল থেকে, এটাই তাদের প্রতিদিনের রুটিন। যাদের পাম্পে দাঁড়ানোর সময় নেই, তারা নগদ টাকা দিয়ে ভ্যানওলাদের সেবা কিনে নেয়। এই ভ্যানওলারাই পাম্প থেকে পানি নিয়ে গ্যালন দরে পৌঁছে দেন বাসায় বাসায়।
ঢাকা ওয়াসা মডস জোন-১ এর আওয়াতাধীন মুগদাপাড়া, ব্যাংক কলোনিসহ মান্ডা এলাকায় ৬ লাখ মানুষের রান্না ও গোসল করাতো দূরের কথা অনেকেই ঠিকমত অজুর পানি পর্যন্ত পায় না। পানির এ সঙ্কট দ্রæত দূর না হলে আসন্ন রমজানে এ এলাকার রোজাদারেরা সিমাহীন দুর্ভোগে পড়বে। বিশেষ করে মুসলিরা তারাবির নামাজের অজু করতে পারবে না এমন অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি রসুলবাগ জামে মসজিদের মুসলিরা।
দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা জুয়াইরিয়া কবির জিনিয়া ও সুমাইয়া কবির মুনিয়া জানান, বেশ কিছুদিন থেকে এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোনো দিন ২৪ ঘণ্টায় একবারও পানি আসে না। যে কারণে পানির অভাবে এলাকায় হাহাকার চলছে।
এ এলাকার অন্য এক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারণে পরিবেশ কিছুটা শান্ত। দু’দিন পর তাপপ্রবাহ শুরু হলে মুগদাপাড়া ব্যাংক কলোনি ও মান্ডার মানুষের পানির অভাবে স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার কাছে পানি সঙ্কটের সমাধান চেয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে এলাকার পানি বঞ্চিত প্রাহকরা মানববন্ধনসহ বিক্ষোভের ডাক দিবে। গরমের দাবদাহ যতই বাড়ছে পানির চাহিদা ততই বাড়ছে। পানির অভাবে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
অন্যদিকে ওয়াসার যে পরিমাণ পানি পাওয়া যায় তাও ময়লা-দুর্গন্ধের জন্য ব্যবহার করা যায় না। পানি নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ ও অভিযোগের শেষ নেই। মান্ডার এলাকার দুই গৃহবধু মিসেসে ফারা বেগম ও মিসেস রানু বেগম বলেন, পানির অভাবে আমাদেরকে রান্না থেকে শুরু করে গোসল, বাথরুমের কাজ কোনোটাই করা যাচ্ছে না। অনেকে অন্য এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে কোন মতে আপদকালীন সময় পার কেেছন।
মান্ডা এলাকার আরেক বাসিন্দ মোহাম্মদ ফারুক আল হাসান বলেন, দুর্গন্ধ ও ময়লা পানি খেয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ পেটের পীড়ায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন। দক্ষিণ মুগদাপাড়া ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দারা পানির জন্য বিক্ষোভ করার চিন্তা করছে।
একই এলাকার অভিজিৎ নামের এক বাসিন্দা বলেন, অনেক দিন ধরে মুগদা ব্যাংক কলোনি এলাকায় পানির সঙ্কট চলছে। পানির অভাবে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি। পানির দাবিতে ভুক্তভোগীরা কলসি, বালতি, গ্যালন ও বোতল নিয়ে বিক্ষোভ করার কথা ভাবছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ সমস্যা দ্রæত দূর না হলে তীব্র আন্দোলনে যাবেন তারা।
এর আগে চলতি বছর ২৪ এপ্রিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ববাবরে আবেদন করা হয়েছে। সেখানে পানির লাইনের পাইপ ৮ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি ব্যাস প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। শাহবুুদ্দিন-আছিয়া ফাউন্টেশন ও নাছির উল্লাহ ফাউন্টেশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, লম্বা পানির লাইনের পাইপটি ৮ ইঞ্চি ব্যাসের হওয়ায় পানি প্রবাহ পর্যাপ্ত নয়। ফলে মহল্লার ৮৫-৯০টি বাড়ির মালিক দাবী করেন পানির লাইনে পাইপটির বিভিন্ন জায়গায় ১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উচু নিচু ফলে পানি প্রবাহ সবসময় বাধাগ্রস্থ হয়।
ব্যাংক কলোণী এলাকার বাসিন্দ এড. সুলতান আহমেদ বলেন, ব্যাংক কলোনির শেষ মাথার প্রায় ত্রিশটি বাড়িতে পানি সঙ্কট সারা বছর লেগেই থাকে। বাধ্য হয়েই বাড়ির মালিকদেও গভীর রাত পর্যন্ত জেগে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাও এই পানি টানা মোটর দিয়ে যৎসামান্য পানি সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য প্রতিটি বাড়ির মালিক মাসে বাড়তি দুই লাখ টাকারও বেশী বিদুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া অনেক বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তারা রাত জেগে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মুগদা ও মান্ডা এলাকায় ওয়াসার যে পানির পাম্প আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায অনেক দুর্বল। যা দিয়ে এলাকার চাহিদামত পানি এই দুর্বল পাম্প দিয়ে উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ওয়াসার কর্মকর্তারা এ নিয়ে ফিল্ডে কাজ করছে ঠিক কিন্তু এই সমস্যার কোন সমাধান আজো হচ্ছে না। এছাড়াও এ এলাকার কোন পাম্পেই জেনারেটর ব্যবস্থা নেই। ###

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ