Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাসফিয়ার মৃত্যু এখনো অন্ধকারে পুলিশ ফেসবুকের অপব্যবহার নিয়ে উৎকন্ঠা

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ফুটফুটে তাসফিয়া (১৬)। ছাত্রী হিসাবেও মেধাবী। এই কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে তাকে চট্টগ্রাম আনা হয়। ভর্তি করানো হয় নগরী অভিজাত ইংরেজি মাধমের স্কুল সানশাইন গ্রামার স্কুলে। পরিবারের এই বড় মেয়েকে ঘিরে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। অসময়ে প্রেমে সাড়া দেওয়ায়ই তার জন্য কাল হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফেইসবুকের এমন অপব্যবহার নিয়ে এখন উৎকন্ঠায় অনেক অভিভাবক। উঠতি তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের অনেকে ফেইসবুকের কারণে বিপদগামী হচ্ছে। এমনিতেই পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়াসহ নানা কারণে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে। তার উপর মোবাইল, ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তি অপব্যবহার তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিশোর প্রেমিকের সাথে বেড়াতে বের হয়ে কিশোরী তাসফিয়ার লাশ হয়ে ফেরার ঘটনায় ফেইসবুকের অপব্যবহার নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়েও চলছে নানামুখি আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে চারদিন পরও তাসফিয়া আমিনের হত্যার কারণ উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রহস্য উদঘাটনে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। বন্ধু আদনান মির্জাকে গ্রেফতার করা হলেও অন্য আসামিদের গ্রেফতার করা যায়নি। বন্ধু আদনানের সাথে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আধা কিলোমিটা দূরের ও আর নিজাম রোডের বাসায় না গিয়ে তাসফিয়া কেন ১৮ কিলোমিটার দূরের পতেঙ্গা সৈকতে গেল তাও এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের (সিএমপি) কর্ণফুলী জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) জাহেদুল ইসলাম রাতে ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। রহস্য উদঘাটনে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। তা হলো, নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তাসফিয়া কেন এবং কী-ভাবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় গেল। তার সাথে কারা ছিল, তাকে কি জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, নাকি সে নিজের ইচ্ছায় সেখানে গেছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে তাসফিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যে অটোরিকশায় উঠেছিলো সেই অটোরিকশার চালককেও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বেশ কিছু তথ্য প্রমান হাতে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি দ্রæত সময়ে এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা যাবে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে এই মামলার আসামি সোহায়েলকে আটক করা হয়েছে বলে গুজব থাকলেও পুলিশ তাকে আটকের কথা অস্বীকার করে। তাসফিয়া খুনের ঘটনায় তার বাবার দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আদনানকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তাকে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত রিমান্ডের বিষয়ে রোববার শুনানির দিন ধার্য করেন। অন্য আসামিরা হলো, তাসফিয়ার সহপাঠি সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত মিরাজ ও আসিফ মিজান, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম এবং ফিরোজের সহযোগী কথিত যুবলীগ কর্মী সোহায়েল ওরফে সোহেল।
পুলিশ জানায়, আদনান, শওকত, আসিফ এবং ইকরাম নাসিরাবাদ-মুরাদপুরকেন্দ্রীক একটি কিশোর গ্রæপের সদস্য। ‘রিচ কিডস’ নামে এই কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক ফিরোজ। মোটর সাইকেলে করে ঘোরাঘুরি, তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি, এলাকায় হিরোইজম প্রর্শন করে এই গ্রæপের সদস্যরা। ফেইসবুকে পরিচয়ে সূত্রধরে আদনানের সাথে তাসফিয়ার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এই নিয়ে তার পরিবার আদনানকে বাসায় ডেকে সতর্ক করে দিলে তার সহযোগীরা পাল্টা হুমকি দেয়। পুলিশ জানায় ১ মে বিকেল থেকে তাসফিয়া নিখোঁজের পর তার মায়ের ফোন পেয়ে আদনান মির্জা তাদের বাসায় যান। এ সময় তাসফিয়ার বাবা আমিন প্রথমে আদনানকে নিয়ে চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে যান। পরে সেখান থেকে আবারও বাসায় যান। সেখানে আদনানকে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ফিরোজ ও ইকরাম তাসফিয়াদের বাসায় গিয়ে দুই ঘন্টার মধ্যে তাকে খুঁজে দেওয়ার কথা বলে আদনানকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। এরপর রাতে তারা লাপাত্তা হয়ে যান। বুধবার সকালে নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির অদূরে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় চোখ, নাক-মুখ থ্যাতলানো তাসফিয়ার লাশ পায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাসফিয়ার বাবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ