Inqilab Logo

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কাতারে প্রতারিত কর্মীদের মানবেতর জীবন-যাপন

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


শামসুল ইসলাম : প্রতারক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রতারক খালিজ সোয়ান গ্রæপ ক্লিনিং কোম্পানী বিগত ৯ মাসেও বাংলাদেশী কর্মীদের ইকামা দিতে পারেনি। দীর্ঘ ৬/৭ মাস যাবত বাংলাদেশী কর্মীদের কোনো কাজ দেয়া হয়নি। শুধু ক্যাম্পে থাকার জায়গা দেয়া হয়েছে। কাজ দেয়ার দাবী তোলায় অনেক কর্মীরই পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়েছে। দেশের আতœীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এসব কর্মীরা খাবার কিনে খাচ্ছে। ঋনের টাকা পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছেন আতœীয়-স্বজনরা। প্রতারণার শিকার এসব কর্মী অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। টাকার অভাবে এসব কর্মী দেশে ফিরে আসতে পারছে না। আতœীয় স্বজনদের মধ্যে যারা ঋন করে বিমান ভাড়া কাতারে পাঠাতে পারছে কেবল মাত্র তারাই খালি হাতে দেশে ফিরতে পারছে। কাতারের সম্ভাবনমায় শ্রমবাজার এখন দালাল চক্রের কারণে হাত ছাড়া হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কাতারে ২১ হাজার ৩শ’ ৪৯ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। এসময়ে কাতার থেকে অভিবাসী বাংলাদেশী কর্মীরা ২শ’ ৩৪ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার কোপাকি গ্রামের তৌহিদ ইসলাম কাতার থেকে ইনকিলাবকে বলেন, খালিজ সোয়ান গ্রæপ ক্লিনিং কোম্পানীর ৭০ জন বাংলাদেশী কর্মী গত ডিসেম্বর মাস থেকে কোনো কাজ নেই তৌহিদ ইসলামের মা’ মুক্তি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৪ লাখ টাকা ঋন করে ছেলেকে কাতার পাঠিয়েছি। ইকামা দেয়নি, খাবারও দিচ্ছে নো কোম্পানী। পাশের গ্রামের দালাল সাবেক পুলিশ সৈয়দ আলী ও তার মেয়ের জামাই দুলাল ৪ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া কোম্পানীতে তৌহিদকে কাতার পাঠিয়েছে। দালাল দুলাল দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কাতারে গিয়ে এসব কর্মীরা পথের ভিক্ষারী হয়েছে বলে তার মা মুক্তি উল্লেখ করেন। প্রতারণার শিকার তৌহিদ বলেন, কাতার লেবার কোর্টে ঐ কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেশে ফেরার আশ্বাসে কোর্ট থেকে মামলাও তুলে নিয়েছে তৌহিদ। সে বলেন, দেশে গিয়ে ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মির্জাপুর থানার শাহীন মিয়া’ও একই কোম্পানীতে গত ৭ মাস যাবত কোনো কাজ পাচ্ছে না। শাহীন মিয়ার বাবা বাবুল মিয়া জানান, সখিপুর থানার কালিহাটি গ্রামের দালালহাকিম চার লাখ টাকার বিনিময়ে বনানীর মেটকো এন্টারনপ্রাইজের মাধ্যমে শাহীন মিয়াকে কাতার পাঠায়। ভালুকা থানার বারাজোড় গ্রামের মনির হোসেনও একই কোম্পানীতে গত ৯ মাস যাবত কাজ পাচ্ছে না। একই কোম্পানী থেকে টাংগাইলের সখিপুযর থানার বেরবাড়ী গ্রামের শরিফ, ও যশোরের শহিদুল ও সাকিল গত ২৫ এপ্রিল দেশের আতœীয়-স্বজন থেকে বিমান ভাড়া নিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছে। প্রতারণার শিকার শরিফ রাতে ইনকিলাবকে বলেন, দেশ থেকে ২৩ হাজার টাকা বিমান ভাড়া নিয়ে বাড়ি না ফিরে এলে কাতারে না খেয়ে মরতে হতো। এদিকে, কাতারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতারণার শিকার বাংলাদেশী কর্মীদের সৃষ্ট সংকট নিরসনের তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। মাঝে মধ্যেই কাতারের দূতাবাস ভিজিটের নামে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা কাতার সফরে গেলে প্রতারণার শিকার কর্মীদের কোনো খোঁজ খবর নেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএমইটি’র মহাপরিচালক মো: সেলিম রেজার নেতৃত্বে কাতার মিশন (দূতাবাস) পরিদর্শনের জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল কাতারে পৌছেছে। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব কাজী আবেদ হোসেন, যুগ্ন-সচিব শফিকুল ইসলাম ও উপ-সচিব ফাতেমা জাহান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ