Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা চালু করেছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশের সকল শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতেই সরকার সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা চালু করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, সারাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের উৎসাহিত করতে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০১৩ সাল থেকে চালু করা হয়েছে। মেধাবীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য এ উদ্যোগ সাহায্য করছে। এ মেধাবীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেদিকে সরকার লক্ষ্য রাখবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ মিলনায়তনে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৮ এর জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এজন্য শতকরা ৪০ ভাগ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। বছরের প্রথম দিনে সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া হচ্ছে। ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়াশুনা এবং উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। শতকরা ৯৮ ভাগ শিশু এখন স্কুলে যাচ্ছে। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য সৃজনশীল মেধাবী নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা, যারা দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, প্রতিটি কাজের উপযোগী দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে। একই সাথে আমরা ভাল মানুষ তৈরি করতে চাই। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চাই। জ্ঞান ও প্রযুক্তি শুধু আমদানি নয়, রপ্তানি করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মো. মাহাবুবুর রহমান এবং মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক ও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার সদস্য সচিব ড. মো.আব্দুল মালেক বক্তব্য রাখেন ।
সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০১৮ এর জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ৮টি বিভাগ ও ঢাকা মহানগরী থেকে উত্তীর্ণ ১০৮ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছে। এই ১০৮ জনের মধ্যে ৪টি বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে ১২ জন সেরা মেধাবী নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসএসসির ১২ বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হলেও পরীক্ষা বাতিল হবে না
চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হলেও পরীক্ষা বাতিল হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পরীক্ষার আগে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ প্রশ্ন পেয়েছে পাঁচ হাজারের মত পরীক্ষার্থী। এ কারণে কোনো পরীক্ষা বাতিল করা হবে না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত ও পজএসসি-জেডিসি পরীক্ষার নিরাপত্তা সংক্রানমশ সভায় শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন। সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার ১৭টির মধ্যে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ অংশের ‘খ’ সেটের প্রশ্নফাঁস হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফাঁস হওয়া এমসিকিউ প্রশ্ন খুব অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থী পেয়েছে। এজন্য এই পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হবে না। তিনি জানান, সোশাল মিডিয়ায় ক্লোজড গ্রæপের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে এমসিকিউ প্রশ্নফাঁস হত বলে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। এসব গ্রæপে ১০ থেকে ১০০ জনের মত সদস্য ছিল এবং ৪০ থেকে ৫০টি গ্রæপে প্রশ্ন শেয়ার হয়েছে ধরে নিয়ে তদন্ত কমিটি মনে করছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মত পরীক্ষার্থীর হাতে গেছে। নাহিদ বলেন, ৫ হাজার শিক্ষার্থীর কারণে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পুনরায় নিয়ে তাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলা সমীচীন হবে না বলে তদন্ত কমিটি মত দিয়েছে। এসএসসির সৃজনশীল অংশের কোনো প্রশ্নফাঁস না হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না বলেও তদন্ত কমিটি যুক্তি দিয়েছে। গত ১ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রæয়ারি এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তত্ত¡ীয় এবং ২৬ ফেব্রæয়ারি থেকে ৪ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। আগামী ৬ মে’র পর এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত শিগগিরই-শিক্ষা মন্ত্রণালয়
পাবলিক পরীক্ষায় এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে কি না সে বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সামনের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে এমসিকিউ থাকবে কিনা কিংবা থাকলেও কিভাবে রাখা হবে সে বিষয়ে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এমসিকিউ এখন প্রশ্নফাঁসের একমাত্র উপায় উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এজন্য এমসিকিউ এর বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। শিগগিরই এমসিকিউ এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জানানো হবে।
তিনি বলেন, এমসিকিউ ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে। পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক আগে প্রশ্নফাঁস হলে সেখান থেকে সহজেই বহু নির্বাচনী অংশের উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, এবার থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা হবে শতভাগ যোগ্যতাভিত্তিক বা সৃজনশীল প্রশ্নে। প্রাথমিক সমাপনীর পাশাপাশি চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী বলেন, এমসিকিউ বাদ দেওয়া উচিত। এমসিকিউ বাদ দিলে প্রশ্নফাঁসের কথা উঠবে না। আমি আগামী পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করছি।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, এমসিকিউ সেভাবে আমরা মূল্যায়ন করতে পারছি না। সংস্কার আনব বা বন্ধ করে দিতে পারি। তবে এখনই সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। ভবিষ্যতে অন্যান্য পরীক্ষায়ও বড় ধরনের পররিবর্ত আনা হবে। এর আগে ওই সভায় সোহরাব হোসাইন বলেন, চলমান পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষা হলে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে আমরা পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার আলোকে চলতি বছর শুরু হতে যাওয়া জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় পরিবর্তন আনা হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সভা করা হবে। সেখানে অনেকের মতামত নিয়ে কী কী পরিবর্তন আনা যায়, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, পুলিশ, র‌্যাব, এনএসআই, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকতা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা প্রমুখ।####

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ