Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইংল্যান্ডে মস্তিষ্ক টিউমার বাড়ছে সেল ফোন ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ

ইংল্যান্ডে মস্তিষ্ক টিউমার বাড়ছে সেল ফোন ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৫ এএম, ৪ মে, ২০১৮

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইংল্যান্ডে আগ্রাসী মারাত্মক মস্তিষ্ক টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে। এক নতুন গবেষণায় এ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। বুধবার জার্নাল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী ১৯৯৫ থেকে ২০১৫-র মধ্যে ইংল্যান্ডে গিøওবøাস্টোমা-য় আক্রান্ত হওয়ার হার প্রতি ১০ হাজার জনে ২.৪ শতাংশ থেকে ৫.০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গবেষণায় বিশ্লেষণকৃত তথ্যে শুধু মস্তিষ্ক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাই শুধু প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু কেন এ প্রবণতা সংঘটিত হয়ে থাকে সে ব্যাপারে কোনো আলোকপাত করা হয়নি। তবে গবেষকরা জীবন যাপনের বিষয়সমূহকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা একটি ভ‚মিকা পালন করে থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন।
এসব বিষয়ের মধ্যে তারা পূর্বের গবেষণার উল্লেখ করেন যাতে বলা হয়েছে যে ব্রেইন টিউমার ও ব্রেইনে পরিবর্তন ঘটানোর সাথে সম্ভত সেল ফোন ব্যবহারের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
গবেষণার শীর্ষ লেখক ও ‘চিলড্রেন উইথ ক্যান্সার ইউকে’-র অন্যতম ট্রাস্টি অ্যালাসডেয়ার ফিলিপস বলেন, এ গবেষণা সেলফোন বিষয়ে নয়, এটা হল শুধু টিউমারের পরিবর্তন বিষয়ে। কিন্তু মনে হয় যে আসলে সেলফোন হচ্ছে সম্ভাব্য আসল কারণ। তিনি বলেন, টিউমারগুলো হয় প্রধানত সামনের দিকে ও মস্তিষ্ক সন্নিহিত এলাকায়, আপনার কপাল ও কানের লতিতে যা সেলফোন সম্পর্কে সন্দেহ বাড়ায়।
তিনি বলেন, যেহেতু মস্তিষ্ক টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল সে কারণে তার সন্দেহ নিয়ে আতংক সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। কারণ, সেলফোন ব্যবহার যদি আপনার মস্তিষ্ক টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়ও, তা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত কম মাত্রার ঝুঁকি, কারণ এতে খুব কম লোকই আক্রান্ত হয়। আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনি যদি দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে যান তবে তা যাতে হাত মুক্ত সেট হয় সেটা নিশ্চিত করুন। তবে আমি কোনো ভাবেই আতংক সৃষ্টি করতে চচ্ছি না।
যুক্তরাজ্যের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে এ গবেষণায় যদিও মস্তিষ্ক টিউমার বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছে, কিন্তু কথা হচ্ছে সেলফোন ব্যবহার এ জন্য দায়ী সে প্রমাণ মেরেনি।
বিশ^ব্যাপী সেলফোনের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও ক্যান্সার ঝুঁকির সাথে সম্ভাব্য সংযোগ বিষয়ে গবেষণা উত্তরের বদলে আরো বেশি প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। কিছু গবেষণায় সেলফোন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ও টিউমারের বর্ধিত ঝুঁকির মত নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে কোনো সম্পর্ক খুজে পায়নি। অন্যদিকে অন্যরা বলেছেন উল্টোটা। স্বাধীন সায়েন্স মিডিয়া সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত এক লিখিত বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতাল এনএইচএস ফাউন্ডেশন-এ মেডিক্যাল ফিজিক্স ও ক্লিনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর পরিচালক ম্যালকম স্পেরিন বলেন, আমি বিশ^াস করি না যে এই গবেষণার পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ টিউমার বৃদ্ধির কোনো কারণ চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
সেলফোনগুলোর অ-স্থুলাণু বিকিরণের একটি রূপ রেডিওফ্রিকোয়েন্সি শক্তি নিঃসরণ করে এবং ফোনের নিকটবর্তী আমাদের শরীরের টিস্যুগুলো সেই শক্তি শোষণ করে। দ্বিতীয়ত,আমাদের সেলফোনের ব্যবহার দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ, আমাদের ফোন কলের সংখ্যা ও কলের দৈর্ঘও বৃদ্ধি পয়েছে।
যাহোক, যুক্তরাষট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বলেছে যে সেলফোনগুলো যেহেতু কম মাত্রার রেডিওফ্রিকোয়েন্সি শক্তি নিঃসরণ করে সেগুলো অ-স্থুলাণু। সেগুলো আমাদের জৈবিক টিস্যুগুলোর স্থায়ী ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
রোগের বৃ্িদ্ধ
নয়া গবেষণায় ইংল্যান্ডে মারাত্মক মস্তিষ্ক টিউমার বিষয়ে ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে নির্ণয়কৃত ক্যান্সার নিবন্ধন তথ্য-উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে পাওয়া এই তথ্যে ৮১ হাজার ১৩৫টি রোগ নির্ণীত ঘটনার উল্লেখ করেছে। ১৯৯৫ সালের সাথে ২০১৫ সালের তথ্য তুলনা করে গবেষকরা অতিরিক্ত ১৫৪৮টি আগ্রাসী গিøওবøস্টোমা মাল্টিফর্ম টিউমার আক্রান্তের ঘটনা দেখতে পেয়েছেন। ফিলিপস বলেন, আমি এই বিরাট বৃদ্ধি দেখে বিস্মিত।
গবেষকরা গবেষণায় লিখেছেন যে গিøওবøস্টোমা রোগ বৃদ্ধির পিছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিশেষ করে সি.টি স্ক্যানে ব্যবহৃত এক্স-রে থেকে আয়োনাইজিং বিকিরণের সমর্থন মুলক প্রমাণ রয়েছে।
গবেষকরা আরো উল্লেখ করেছেন যে আণবিক বোমা পরীক্ষার প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাকস্থলিতে ও শ্বাসের সাথে গ্রহণকে একটি সম্ভাব্য কারণ এবং তারা সেলফোন ব্যবহারের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে যানবাহন চলাচল জনিত বায়ু দূষণের কথাও উল্লেখ করেছেন।
সায়েন্স মিডিয়া সেন্টার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে লন্ডন বিশ^বিদ্যালয় কলেজের মহামারি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র লেকচারার লিওন শাহাব বলেন, এ গবেষণাপত্রে ইংল্যান্ডে সুনির্দিষ্ট মারাত্মক মস্তিষ্ক টিউমার বৃদ্ধির দেয়া প্রমাণে দেখা গেছে যে গত দু’দশকে এ রোগ দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষণে যে কথাটি বলা হয়নি তা হল এ বৃ্িদ্ধর কারণ হল মোবাইল ফোন।
শাহাব বলেন, প্রথমত এ গবেষণায় মস্তিষ্ক টিউমার বৃদ্ধির ঘটনারসাথে মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধিকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়নি। এটা করার জন্য পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি সহজলভ্য। দ্বিতীয়ত এ ধরনের সংযোগ যদি খুঁজে পাওয়া যায়ও, পারস্পরিক সম্পর্ককে কারণ হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়নি।
অন্য কথায়, মস্তিষ্ক টিউমারের ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে যখন সেলফোনের ব্যবহার বাড়ছে। যার অর্থ একের কারণে অন্যটি ঘটছে।
গবেষণাকালীন সময়ে মানুষের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার যেখানে ১৫ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেভাবে আমরা মারাত্মক মস্তিষ্ক টিউমার বৃদ্ধি দেখি না। এ থেকে বোঝা যায় যে সেলফোনের কোনো ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া থাকলেও তার মাত্রা কম।
তিনি বলেন, এখন মারাত্মক মস্তিষ্ক টিউমার বৃদ্ধিকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাথে যুক্ত করা অনুমান পর্যায়ে আছে এবং তা উৎসাহজনক জীবনধারা পরিবর্তন থেকে সেসব কিছু বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয় যা ক্যান্সার ঝুঁকি হ্রাসের জন্য পরিচিত। যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, মদপান হ্রাস ও ধুমপান বন্ধ করা।
মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থ প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেড এসোসিয়েশন জিএসএমএ-র মতে, বিশ^ব্যাপী মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা অনুমান ৫শ’ কোটি। ন্যাশনাল হেল সার্ভিসের মতে, যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯৩ শতাংশের সেলফোন আছে বা ব্যবহার করেন। পিউ রিসার্চ-এর মতে, অনুরূপ ভাবে ৯৫ শতাংশ আমেরিকানের সেলফোন আছে।
ফেব্রæয়ারিতে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সেলফোন বিকিরণের উচ্চমাত্রা এবং পুরুষ ইঁদুরের মধ্যে তাদের হৃদযন্ত্রে শোয়ান্নোমা নামের বিরল ধরনের একটি টিউমারসহ ক্যান্সার মূলক তৎপরতার কিছু প্রমাণের মধ্যে একটি সংযোগ খুঁজে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কোনো মেয়ে ইঁদুরের মধ্যে এ ধরনের কিছু দেখা যায়নি।
উদ্বিগ্ন হলে করণীয়
ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম-এ ঊর্ধ¦তন বিজ্ঞানী ও রিপোর্টগুলোর অন্যতম লেখক জন বুচার বলেন, আমাদের অনুসন্ধানের ব্যাপারে কৌত‚হল জনক বিষয় হচ্ছে মারাত্মক শোয়ান্নোমাস যদিও তার আক্রমণ ঘটে হৃদযন্ত্রে, মাথায় নয়।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, ইতোমধ্যে সেলফোনের রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণের ব্যাপারে উদ্বিগ্নরা বিকিরণ সীমিত করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তার মধ্যে থাকতে পারে মাথা থেকে দূরে রাখার জন্য ফোনে কথা বলার সময় স্পিকার মোড অথবা হাতের ব্যবহার মুক্ত যন্ত্র ব্যবহার করা। কথা বলার বদলে মেসেজ করা এবং আপনার সেলফোন ব্যবহার, পাশাপশি বাড়িতে যে কোনো শিশুর মোবাইল ব্যবহার একেবারেই সীমিত করার চেষ্টা করুন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ