Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৩ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

পর্যাপ্ত মজুদ স্বত্তে¡ও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ক্রেতাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার স্বত্তে¡ও রোজার আগেই বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। গত তিনদিনের ব্যবধানের পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গতকাল বুধবার বাজার পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এদিন মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায় ও আমদানি পেঁয়াজের দাম ২৮-৩৫ টাকা। গত তিন থেকে চারদিন আগেও দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা আর আমদানি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। তিনদিনের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা। ফলে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে এখন গুণতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিমূল্য বেশি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, এরকম নানান অজুহাতে আড়ত ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, যার কারণে খুচরা দামও বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ বেশি থাকা স্বত্তে¡ও বেশি দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পবিত্র মাস রমজান আসছে। রোজা আসলেই একশ্রেণির অসাধু মুনাফালোভী মজুদদার ও ব্যবসায়ীরা কৌশলে পণ্যের দাম বাড়ায়। তা না হলে তিনদিনের ব্যবধানে কেন পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বাড়বে?
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারমূল্য স্থীতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ। সংস্থাটির হিসাবে এ সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আট দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজ আট থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গতকাল বুধবার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৫ টাকায় ও আমদানি পেঁয়াজের দাম ৩০-৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা আর আমদানি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
কারণ জানতে চাইলে শান্তিনগন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জব্বার মুন্সী বলেন, গত তিন-চারদিন ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়ারের দাম বেড়েছে। দেশি-বিদেশি সব ধরনের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে কিনে খুচরায়ও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
খুচরা বিক্রেতা জামাল বলেন, গত রবিবারও দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু সোমবার আড়তে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি কেজিতে দাম বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। দেশি পেঁয়াজ আড়তেই কেনা পড়েছে কেজিতে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। হঠাৎ করে এভাবে দাম বাড়লে আমাদের বিক্রি করতেও সমস্যা হয়। আর দাম বাড়া-কমার পেছনে আমাদের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, পাইকারি ও আড়তদারদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। গোডাউনে তাদের মাল ভরা। কেন যে দাম বাড়ায় কিছুই বুঝি না। কারণ এখানে সরকার বা কোনো দায়িত্বশীল মহলের নিয়ন্ত্রণ নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়া অযৌক্তিক। রমজান আসছে, এটাকে পুঁজি করে মানুষের পকেট কাটার একটি পাঁয়তারা। গত বছর ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট। এখন সংকট নেই, তাহলে দাম বাড়ে কেন? কারণ বাজার তদারকির কেউ নেই। যে যার ইচ্ছা মতো দাম বাড়ায়, এতে কোনো শাস্তি হয় না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটে। ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। কোনো পণ্যের অহেতুক দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি সরকার ব্যবস্থা নেয় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রমজানের বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টদের এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিতÑ বলেন তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেগুলোর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে আগাম নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২.৫ লাখ টন, চিনি তিন লাখ টন, ছোলা ৮০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ চার লাখ টন। এর বিপরীতে দেশে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্যতেলের মজুদের পরিমাণ আট গুণ বেশি, ছোলা আট দশমিক ৩৩ গুণ, পেঁয়াজ তিন দশমিক ৪৮ গুণ, খেজুর দুই দশমিক ৫৬ গুণ এবং চিনি শূন্য দশমিক ৪৫ গুণ।
পেঁয়াজের মজুদ পরিস্থিতি-
বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা আছে ২৪ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২১ দশমিক ৫৩ লাখ টন। সে বছর আমদানি করা হয় ১২.৬৭ লাখ টন। চাহিদা পূরণের পর গেল বছরের উদ্বৃত্ত পেঁয়াজের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ২ লাখ টন। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছরের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত আমদানি করা হয় ৪ দশমিক ৫০ লাখ টন। একই সঙ্গে চলতি বছরের উৎপাদনও এখন বাজারে গড়াচ্ছে। এর পরিমাণ ২০ লাখ টন ধরা হলেও বর্তমানে দেশে অভ্যন্তরীণ মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৭ লাখ টন। গত ৯ মাসে পেঁয়াজ খাওয়া হয় ১৭ দশমিক ১৮ লাখ টন। এ ছাড়া ১১-১৮ মার্চ পর্যন্ত পণ্যটির এলসি খোলা হয়েছে ১৮ হাজার ৪০৪ টনের। একই সময়ে খালাস করা হয় আরও ২১ হাজার ৩৯ টনের। ফলে ওই সময় পর্যন্ত পেঁয়াজের সার্বিক মজুদ

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ