Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোন দল নির্বাচন আসবে কি আসবে না তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০১৮, ১০:২১ পিএম

০ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স¤প্রদায়
০ নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়েছে
০ সমঝোতায় না হলে ছাত্রলীগের সম্মেলনে ভোট হবে
০ কোটা নিয়ে আর আলোচনার দরকার নেই
০ দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদেরও সড়কের নিয়মগুলো মানতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন দল নির্বাচন আসবে কি আসবে না এটা একান্তই তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। এখানে নির্বাচন অংশ নেয়া না নেয়ার অধিকার সবার আছে। সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন খালেদা জিয়া মুক্ত না হলে দলটি নির্বাচনে আসবে না এতে করে বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগ কী অবস্থান নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য আর জেল থেকে তাদের নেত্রী মুক্ত না হলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না যারা বলছে তাদের বলি-আমরা তো কাউকে জেলে ঢুকাইনি। নিজের অপরাধে তিনি জেলে ঢুকেছেন। তিনি যদি নির্দোষ হতেন তাহলে তাদের এত এত আইনজীবী কেনো তা প্রমাণ করতে পারলো না?
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবে আলোচনা হয়, তারেককেও সেভাবেই ফেরানো হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একজন মানুষ যখন কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়, তখন সে যে দেশের নাগরিক সে দেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে দিতে হয়। এরপরই তাকে ওই আশ্রয় প্রদানকারী দেশে আশ্রয় দেয় এবং সে দেশের পাসপোর্ট প্রদান করে। এই পাসপোর্ট দিয়ে সারা বিশ্বে ওই ব্যক্তি যেতে পারবে। শুধু সে যে দেশ থেকে এসেছে তার দেশ বাদে। বিএনপি নেতারা বলে তারা না কি খুব জনপ্রিয়। প্রতিনিয়ত না কি তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন একটি দলে ভারপ্রাপ্ত চেয়াপারসনের দায়িত্ব চেয়াপারপাসনের কেনো দিতে হলো?

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স¤প্রদায়
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কমনওয়েলথ অনুরোধ করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ সম্মেলনে ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্র অংশ নেয়। এতে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আরও পাঁচ বিষয় নিয়ে কথা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কমনওয়েলথ অনুরোধ করেছে। বিশ্ব দরবারে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স¤প্রদায়। সম্মেলনের ঘোষণায় রোহিঙ্গা বিষয়ক অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে, যেটা আমাদের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে আমি মনে করি। এছাড়া চীন, জাপান, রাশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও এ ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রসংশা করেছেন এবং বাংলাদেশের পাশে থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া বিষয়ে মায়ানমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গেøাবাল সামিট-২০১৮ তে আমি অংশ নিই। এতে সমুদ্র গবেষণায় অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের সা¤প্রতিক বিভিন্ন সাফল্যের প্রশংসা করেছে অস্ট্রেলিয়া।
প্রধানমন্ত্রী জানান, অস্ট্রেলিয়ায় গেøাবাল সামিট অন উইমেনে প্রাপ্ত উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তিনি বিশ্বের সব নারীর প্রতি উৎসর্গ করেছেন।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে
বাংলাদেশের নারীদের পদে পদে বাধার সম্মুখীন ও পুরুষদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উত্তরণে সরকার উদ্যোগী হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ে নানা বাধার কথা তুলে ধরেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নির্বাচন, প্রমিলা ফুটবল টিম চালু করতে গিয়ে যেসব বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন। নারী হয়ে রাজনীতিতে এসে যে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বাধা নারীকেই আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা নিয়ে মোকাবিলা করতে হয়।
আমাদের দেশের সমাজ একসময় খুবই রক্ষণশীল ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হচ্ছে, এই দৃষ্টিভঙ্গি তো নির্ভর করে। আমি যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেয়েদের সংরক্ষিত আসন করে দেই। তখন তারা অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল থেকে তীব্র প্রতিবাদ এসেছিল। প্রার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বাধা এসেছিল। তবে আমি জানতাম একবার শুরু করা হলে, আজ যারা বাধা দিচ্ছে, কালই তারা পক্ষে নামবে। পরে নির্বাচনের সময় দেখেছিলাম, যে শ্বশুর-ভাসুর বিরোধিতা করেছিল তারাই কুপি বাতি নিয়ে পাটখড়িতে আগুন দিয়ে মশাল জ্বালিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন। পরিবর্তনটা একবারেই আসে না। নারীসমাজের দৃষ্টি আর্কষণ করে তিনি বলেন, শুধু আইন করে আর জোর জবরদস্থি করে নারীর ক্ষমতায়ন হবে না। অনুশীলন আর কাজের মধ্য দিয়েই নারীর ক্ষমতায়ন ফিরে আসবে। আমরা দাবি করতেই থাকবো, আবার নারীদের জন্য সব আলাদা আলাদা চাইবো, তাহলে আমরা শক্তিটা দেখাবো কীভাবে। মনের জোর ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনও কিছু অর্জন করা যেতে পারে, তা বিশ্বাস করি। আমি একজন নারী হয়েও বলছি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য শুধু চিল্লালেই হবে না, অধিকার নিজেদের অর্জন করেও নিতে হবে। অবশ্য ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে, পুরুষ অধিকার আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি তাদের সঙ্গেই থাকবো অসুবিধা নেই রসিকতা করে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সমঝোতায় না হলে ছাত্রলীগের সম্মেলনে ভোট হবে
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের কনফারেন্স হওয়ার, হবে। আমাদের নিয়ম আছে। সাধারণত সমঝোতা হয়। ইতিমধ্যে কে কে প্রার্থী, তার কাছে থেকে প্রস্তাব ফরম ছাড়া হয়ে গেছে। এরপর সবাইকে নিয়ে বসা হয়, সমঝোতার চেষ্টা করা হয়, যদি সমঝোতা না হয়, ভোট হয়। প্রথম স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট আমরা শুরু করেছি। যদি সমঝোতা করে নেয়া যায়, তাহলে সেটা প্রেস রিলিজ দিয়েই হবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আর যদি না হয়, তাহলে ভোট হবে। যেহেতু এরা ছেলেপুলে, তাদের মধ্যে অন্য রকম উদ্দীপনা থাকবে। ভোটেরও আবার কিছু ভালো আছে মন্দও আছে, এটাও দেখতে হবে। আমরা চাই উপযুক্ত নেতৃত্ব এবং ছাত্র।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা বয়সসীমা বাধা আছে। এই বয়সসীমার মধ্যে প্রকৃত যে ছাত্র, যে মেধাবী নেতৃত্বে আসুক, এটা আমরা চাই। সেই আলোকেই আমরা কাজ করব। যদি দেখা যায় ভোটের মধ্যে উল্টাপাল্টা আসে, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। এটাও মাথায় রাখতে হবে।
কোটা নিয়ে আর আলোচনা নেই
কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া মনে করছেন আপনি কি মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটা চায় না, আমি তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। এখন আর আলোচনার কী আছে?
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের বোঝা উচিত ছিল যে, ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার চালু করলেও ১৯৭৫ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এমনকি চাকরিতে আবেদনের সময় কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এটা লিখতেও ভয় পেতো। শঙ্কায় থাকতো তার চাকরি হবে কি না। ১৯৯৬ সালে এসে আমরা তাদের কোটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। কিন্তু তখন আর তাদের চাকরির বয়স নেই। তাই তাদের সন্তানদের চাকরি দিয়ে তাদের মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এখন জেলা কোটা না থাকলে আন্দোলনকারীদের কেউ পরে চাকরি না পেয়ে তা চাইলে তা পাবেন না বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। আন্দোলনে যারা যারা আছে, তাদের ছবি সংরক্ষণ করা আছে, তখন যদি কান্নাকাটি করে, তখন দেখা যাবে।
দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদেরও নিয়ম মানতে হবে
দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদেরও সড়কের নিয়মগুলো মানার উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের সহায়তাও চান তিনি। শেখ হাসিনা ঢাকায় ট্রাফিক আইন না মেনে পথচারীদের পারাপারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আমার এই কথাগুলো অনেকে পছন্দ করবেন না, কিন্তু যা বাস্তব, তাই বলছি। তিনি বলেন, রাস্তায় চলার নিয়ম আছে, সেটা আমরা কতটা মানি? একটা গাড়ি দ্রæতগতিতে আসছে, আমরা হাত একটা তুলে রাস্তায় নেমে গেলাম. যারা পথচারী, তাদেরও কিছু রুলস জানা দরকার, মানা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন, কেন আপনি হাত বাইর করে যাবেন? তিনি বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) যার হাত গেল, তার জন্য কান্নাকাটি করছেন; কিন্তু সে যে নিয়ম মানছে না, সে কথা তো বলছেন না। হেলমেট ছাড়া মোটর সাইকেলে এবং সিটবেল্ট না বেঁধে গাড়িতে চড়াও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
সড়ক পারাপারে পথচারীদের আইন মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরিতে বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোকেও প্রচারের চালানোর আহŸান জানান তিনি। যারা পথে পারাপার হয়, তারাও নিয়ম মানে কি না, সেদিকে আপনারা একটু দেখেন। সড়ক দুর্ঘটনা হলেই আইন হাতে নিয়ে চালককে মারধর না করতে সবার প্রতি আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী দায়ী চালকের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সড়ক পরিবহন আইনটি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলমান রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সউদি সামরিক জোটে গেলেও যুদ্ধে যাবে না

সউদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশ নিলেও বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধে জড়াবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অধীনে হলেই কেবল যুদ্ধে জড়াবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী জানান, সউদি নেতৃত্বাধীন জোটে গিয়ে মাইন পরিষ্কার বা অন্য কাজগুলো করবে বাংলাদেশের সেনারা। কিন্তু তারা যুদ্ধ করবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ