প্রশ্ন : বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে মুসাফির থাকা প্রসঙ্গে।
প্রশ্নের বিবরণ : আমি ২৩ বছর হল অষ্ট্রেলিয়া থাকি এবং বলতে গেলে এটাই এখন আমার পারমানেন্ট ঠিকানা। দেশে যাওয়া হয় খুব কম, তবে যখন যাই
উত্তর: মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী ব্যক্তি বলতে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপনকারীদেরকে বুঝায়। একজন মুসলিমের সৌন্দর্য্যই হলো তার ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা ও উদারতা। মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী ব্যক্তিরা সব কিছুতে ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। মধ্যমপন্থা অবলন্বনের মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ রয়েছে। আমাদের রাসূল (সা) সকল পরিবেশ পরিস্থিতি সবরের সাথে মোকাবিলা করেতেন। যার ফলে হযরত রাসূল (সা) এর জামানায় মুসলমানরা সকল ক্ষেত্রে সাফল্যে লাভ করতো। উগ্রতা, হিংস্রতা, অহংকার ও ক্রোধ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মধ্যমপন্থা হলো ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে সাফল্যে লাভের একমাত্র চাবিকাঠী। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের উপর সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো।’ (সূরা বাকারা:১৪৩)।
সমগ্র বিশে^ জুড়ে মুসলমান উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আথিতেয়তা ও উদারতার জন্যে প্রশংসিত। মুসলমানরা মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী সহনশীল জাতি। মুসলমানদের নিকট পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর লোকজন নিরাপদ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন,‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহŸা এবং হাত থেকে সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ ( বুখারী: ০৯)। উগ্রপন্থা কিংবা চরমপন্থা হলো শয়তানের পথ। আমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের হাত থেতে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সকলকে চরমপন্থা পরিহার করে চলতে হবে। শয়তান সব সময় মানুষকে মন্দ কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। শয়তানের অনুসারী ব্যক্তি গোষ্ঠীরা মানুষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লাগানোর জন্য সর্বদা চেষ্টা করে। তাই মানুষরূপী শয়তান সম্পর্কে মুমিনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শক্র।’ (সূরা বাকারা:২০৮)।
বর্তমান সময়ে পৃথিবী জুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। প্রভাবশালীরা নীতি নৈতিকতা ভালো মন্দের বিচার বিশ্লেষণ করছে না। দুর্বলের উপর সবলের দখল নির্যাতন হামলা মামলা অত্যাচার শোষন জুলুম কোথাও থেমে নেই। মুসলমানের ঈমান আকিদা ঐতিহ্য ধ্বংস করতে মানুষরূপী শয়তান সদা সর্বদা তৎপর রয়েছে। আজ শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কিছু সংখ্যক মুসলমান যুবক উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা মুসলমানের জন্যে আশংকার বিষয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেনো তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকুন:০৯)।
দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সকলকে মাত্রাতিরিক্ত ভোগ বিলাস, হিংসা ও নিন্দা পরিহার করে চলতে হবে। আমাদের সকলকে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতে হতে হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘হে ঈমানদারগণ, কোনো সম্প্রদায় যেনো অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আরো কোনো নারীও যেনো অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম।’ (সূরা হুজরাত:১১)।
আজকাল পৃথিবীর সর্বত্রই দুর্বলেরা নির্যাতিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ের সকল পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্বল নির্যাতিত ব্যক্তি গোষ্ঠীকে অবশ্যই মধ্যমপন্থার অনুসরণ করতে হবে। তাহলে নির্যাতিত দুর্বল ব্যক্তিদের বিজয় আসবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, যদি মুমিন হয়ে থাকো তবে বিজয় তোমাদের হবেই।’ (সূরা ইমরান:১৩৯)।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ
ইসলামিক প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।