Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দুদকের নামে ভূয়া নোটিশ!

সনাক্ত করতে বিশেষ টিম গঠন : সর্তক থাকার আহŸান চেয়ারম্যানের

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নামে ভূয়া নোাটিশ, আদেশ ও অভিযোগ থেকে অব্যাহিত দিয়ে সক্রিয় প্রতারক চক্র। দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারক চক্রটি সরকারি বিভিন্ন অফিসে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে নোটিশ, অনুসন্ধান, আবার অর্থের বিনিমিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রলোভনও দেখায় চক্রটি। এ যেন দুদক বাইরে আর একটি কমিশন। দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে প্রতারক চক্রটি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই চক্রটি সনাক্ত করতে একটি বিশেষ টিম গঠন করেছেন দুদক। একইসঙ্গে জুরুযী সভা করে সবাইকে সর্তক থাকতে বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। এছাড়াও প্রতারক চক্রের অনুসন্ধান পেলে ০১৭১১৬৪৪৬৭৫ নম্বরে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সম্প্রতি অবৈধ সম্পদসহ নানা দুর্নীতির ভূয়া নোটিশে ও আদেশের বেশ কিছু অভিযোগ কমিশনের নজরে আসে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার অভিযান শক্তিশালী হওয়ার পর থেকে দুদকের ওই প্রতারক চক্র দুদকের বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে সক্রিয় উঠেছে। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেকেই হরয়ানি শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও কেউ কেউ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এতে করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হচেছ। দীর্ঘ দিন যাবত এই প্রতারক চক্রটি সক্রিয়। গত বছরের এই চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠে। চলতি বছরে গ্রেফতার অভিযান চলাকালে বিষযটি দুদকেবর নজরে আসে। এতে দেখা যায়, কখনো দুদকের উপপরিচালক, মহাপরিচালক কিংবা কখনো সচিব পরিচয় দিয়ে সরকারি বড় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান করছেন আবার অর্থের বিনিময়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিচ্ছেন। এভাবেই হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারকরা কাল্পনিক অভিযোগ বা কমিশনের বিবেচনাধীন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ও নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যেই এমন অনেক ভুয়া কর্মকর্তা দুদকের জালে ধরা পড়ছে। গত মার্চ মাসে গণপূর্ত বিভাগ, বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফরের বিরুদ্ধ অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান বিষয়ে একটি মিথ্যা অফিস আদেশের কপি তৈরী করে দুদকের লোগো ব্যবহার করে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির কপি পাঠিয়েছিল একটি প্রতারক চক্র। ভুয়া আদেশ কপি পাঠানোর পাশাপাশি ওই প্রকৌশলীকে ফোনও করে প্রতারক চক্র। গত ২৭ মার্চ সই করা আদেশের বিষয়ে দুদকের ওই অভিযোগ আসে পরের দিন। যেখানে দুদক উপপরিচালক জহিরুল আলমের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও বর্তমান দুদকে কর্মরত এ নামে কোনো কর্মকর্তা নেই। প্রায় একই প্রক্রিয়ায় ২১ মার্চ উল্লেখ করা অপর এক ভূয়া আদেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পেকু সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফিরোজ হাসানকে দুদকের নাম ব্যবহার করে সম্পদের হিসাব চেয়েছে আর একটি প্রতারক চক্র। দুদকের উপপরিচালক আবুল হোসেনের নাম ব্যবহার করা ও্ই আদেশে কাজী ফিরোজ হাসানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে বলে বলা হয়েছে। অধিক বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে আরেকজন উপপরিচালক মো. শহিদুল্লাহ খানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এই নামেও দুদকে উপপরিচালক নেই বলে দুদক জানায়।
এ্র আগে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্প ও হাসাপাতাল ২৫০ হতে ৫০০ শয্যা উন্নতীকরণ প্রকল্পের পরিচালক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী খানকে পাঠানো হয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আদেশ। দুদক সচিব শামসুল আরেফিনের সই ব্যবহার করে ও্ই ভুয়া আদেশ তৈরী করা হয়েছে। দুদক ধারণা করছে, হয়ত এ ধরণের আদেশ তৈরী করে প্রতারক চক্র বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ দুদকের ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান করেননি কোনো দিন। এর আগে গত ১২ মার্চ মোহাম্মদ আলী খানের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিল করে নোটিশ জারি করেছিল দুদক উপপরিচালক চালক আবদুল্লাহ আল মামুন নামের ভূয়া কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে। এক্ষেত্রেও দুদক থেকে জানা যায় এই নামে কোনো উপপরিচালক দুদকে কমর্রত নেই। গত মাসে দুদকের বিষয়টি নজরে আসে। এরপর দুদক এ বিষয়ে একটি মোবাইল নম্বর ও টেলিফোন নম্বর দেন । কোন জায়গার অভিযোগ এলে ওই নম্বরে ফোন দিতে বলা হয়েছে। দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করলে দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদিন শিবলীর ৯৩৫২৫৫২ নম্বরে বিষয়টি অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছে সংস্থাটি। দুদক উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য ইনকিলাবকে বলেন, একাধিক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে বা টেলিফোনের মাধ্যমে কাল্পনিক অভিযোগ অথবা কমিশনের বিবেচনাধীন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ও নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের কাছে অবৈধ আর্থিক সুবিধা দাবি করে। এটা প্রতি বছর সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করার পায়তারা করছে। তিনি আরো বলেন, এই চক্রটি সন্ধান পেলে আমাদের নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। একসঙ্গে কোন ধরনের অর্থের লেনদেন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছেন চেয়ারম্যান স্যার। #####

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ