Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত চীন রাশিয়ার ‘বড় ভূমিকা’ চান প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও জাপানের কাছ থেকে ‘বড় ধরনের’ ভূমিকা পালনের আশা করছে বাংলাদেশ। চীনের প্রকাশ্যেই মিয়ানমারের পক্ষ নেয়া আর ভারতের দোদুল্যমান অবস্থানের মধ্যেই এই প্রত্যাশার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি গুস্তাবো আদোলফো মেসা কুয়াদ্রা ভেলাসকাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধদলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জবাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে বাংলাতদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
আগের দিন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করে। সেখানে রোহিঙ্গাদের মুখে তাদের দুর্দশার কথা শুনে কেঁদে ফেলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার অঙ্গীকারও করে তারা।
৮০ দশক থেকেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে বারবার তাড়িয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে দেশটি। গত বছরের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ লাখ।
এদেরকে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সই হয়েছে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি। কিন্তু মিয়ানমার নানা অযুহাতে টালবাহানা চালিয়েই যাচ্ছে। ফলে জানুয়ারিতে প্রত্যাবসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখনও অনিশ্চিত।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর চীন প্রকাশ্যেই মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ বিষয়ে জাতিসংঘে তোলা বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় বিশ্বের এই পরাশক্তি। আর ভারত কারও পক্ষে অবস্থান না দিয়ে দুই শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলছে। জাতিসংঘে তারা বাংলাদেশের পক্ষেও ভোট দেয়নি, বিপক্ষেও দেয়নি। তারা ভোটদানে ছিল বিরত। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মিত্র রাশিয়ার কাছ থেকেও প্রত্যাশিত ভূমিকা পায়নি ঢাকা। এর মধ্যেও চীন ও ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক সব আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব দেশের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের জোরাল ভূমিকাও চাইছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে’। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার কথাও ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে চুক্তি করেছে সে অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ারমানের সমাজ কল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার সময় আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে নিবন্ধন করার বিষয়টিও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের চাপে কক্সবাজারে স্থানীয়রা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং পরিবেশ ও বনভূমিরও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেলি কারি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে মানবিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের জন্য নতুন একটি মানদÐ তৈরি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে জানান নিরাপত্তা পরিষদের দলে দেশটির প্রতিনিধি য়ু হাইতাও। রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশকে সমর্থন স¤প্রসারণের আশ্বাস দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রমূখ।

 



 

Show all comments
  • kamal ১ মে, ২০১৮, ১০:০৫ এএম says : 0
    already miserably failed our diplomacy . who cares what our prime wants ? she can say many things at home infront of her awami league not the nation.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ