Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাস পরিশোধন নীতিমালা হচ্ছে আমদানি হবে কনডেনসেট

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট আমদানি ও প্রক্রিয়াকরণ পরিশোধনে নতুন নীতিমালা করছে সরকার। সরকারের নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্যবসা করলে জরিমানা করা হবে। এমনকি উদ্যোক্তাদের অনুমোদনও বাতিলের বিধান যুক্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিলেই বিপিসির অনাপত্তিপত্র অনুযায়ী অনুমোদিত পরিমাণ কনডেনসেট সংশ্লিষ্ট প্ল্যান্ট আমদানি করতে পারবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, কনডেনসেট আমদানির বিষয়ে একটি নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। এ নীতিমালা হলে সকলের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। জানা গেছে, বতর্মানে কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে পেট্রোল ও অকটেনের উদ্বৃত্ত সরবরাহ হচ্ছে। এ অবস্থায় কনডেনসেট আমদানি বাড়ানো হলে উৎপাদিত জ্বালানি পণ্যের মজুদ ও ব্যয় নিয়ে এক ধরনের ঝামেলায় পড়বে বিপিসি। সন্দেহ নেই, বেসরকারি প্ল্যান্টগুলোকে কনডেনসেট আমদানির অনুমোদন দিলে যে পরিমাণ পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন হবে, তা অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হবে। সরকারি চারটি ও ব্যক্তিখাতের ১৩টির মধ্যে ৯টি ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টে কনডেনসেটের মোট চাহিদা ১৩ লাখ ৭০ হাজার টন। অথচ এর বিপরীতে কনডেনসেট সরবরাহ করা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টন। নীতিমালায় আমদানি-নির্ভর কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টের বিষয়ে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। আমদানিকারকদের অবশ্যই ৩০ হাজার টনের সংরক্ষণাগার বা স্টোরেজ ট্যাংক থাকতে হবে। এ ছাড়া তাদের নিজস্ব জেটিও থাকতে হবে। যেসব কনডেনসেনট রিফাইনারিংয়ের রিফাইনাররা আন্তর্জাতিক মানের পণ্য, যেমনÑ পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, এমটিটি এবং কেরোসিন ইত্যাদি উৎপাদনে সক্ষম শুধু তাদেরকেই গ্যাস কনডেনসেট আমদানি বা স্থানীয়ভাবে গ্রহণের জন্য অনুমোদন দিতে হবে। অন্যদিকে কনডেনসেট রিফাইনারি হতে উৎপাদিত পণ্যসমূহ অবশ্যই বিএসটিআই মানের হতে হবে। আমদানির বিষয়ে নীতিমালায় বলা আছে, পেট্রোবাংলা থেকে স্থানীয় হেভি কনডেনসেট সরবরাহ করা সম্ভব নয় মর্মে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হেভি কনডেনসেট আমদানি করতে পারবে। প্ল্যান্ট কনডেনসেটের প্রতিটি পার্সেল আমদানির আগে বিপিসির কাছে আবেদন করবে। বিপিসি যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠাবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিলে বিপিসির অনাপত্তিপত্র অনুযায়ী অনুমোদিত পরিমাণ কনডেনসেট সংশ্লিষ্ট প্ল্যান্ট আমদানি করতে পারবে। কনডেনসেট আমদানির ক্ষেত্রে এর আগেই স্থানীয়ভাবে বা আমদানির মাধ্যমে প্রাপ্ত কনডেনসেটের ব্যবহার বিষয়ক তথ্য বিপিসিকে দিয়ে প্রতি পার্সেলের জন্য বিপিসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমোদিত কনডেনসেটের সালফারের পরিমাণ পরিবেশ অধিদফতরের নির্ধারিত বা অনুমোদিত মাত্রার মধ্যে থাকতে হবে। দেশে ডিজেলের চাহিদা বেশি থাকায় ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ডিজেল পাওয়া যাবে এমন মানের কনডেনসেট আমদানি করতে হবে। পণ্যের মান পরিবেশ অধিদফতর নির্ধারিত মানের মধ্যে থাকতে হবে। এমন কনডেনসেট আমদানির করা যাবে না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য কনডেনসেট আমদানি, ব্যবহার, মজুত, বিভাজনের মাধ্যমে প্রাপ্ত পণ্য এবং সরবরাহ বিষয়ের সব তথ্য তিন মাস পরপর বিপিসির কাছে পাঠাতে হবে। তথ্য না পাঠালে বিপিসি তাদের আমদানির অনুমোদন বাতিল করতে পারবে। বিপিসির অনুমোদিত পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না। উৎপাদিত পণ্য বিপিসির কাছে বিক্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর অক্টোবরের মধ্যে এবং গ্রেডভিত্তিক পণ্য প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টি বিপিসিকে জানাতে হবে। ওই সরবরাহের বিষয়ে বিপিসির চাহিদা থাকলে অনাপত্তিপত্র দেবে। অর্থাৎ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বছরের শুরুতেই কী পরিমাণ কনডেনসেট প্রক্রিয়া করবে তার একটি ধারণা পাবেন। কোনো কারণে উদ্যোক্তা প্রক্রিয়াকরণে ব্যর্থ হলে তিন মাস আগেই তা বিপিসিকে জানাতে হবে। উদ্যোক্তা কোনো অবস্থাতেই উৎপাদিত পণ্য দেশের ভেতরে বাজারজাত করতে পারবেন না।
বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসি যে পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন বা আমদানি করে, তার থেকে দেশে উৎপাদিত কনডেনসেটের তেলের মান খারাপ। তারপরও দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রের উপজাত তাই কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত তেল দেশে ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, নীতিমালাটি যাতে কনডেনসেট আমদানিকারকদের সুবিধা দিতেই করা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমদানিকারকদের যদি সত্যিই নীতিমালার মধ্যে আনা যায় তাহলে কিছুটা হলেও জবাবদিহি তৈরি হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ