Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সতর্ক থাকতে হবে যাতে যুদ্ধাপরাধী-খুনি চক্র আর কোনো দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই সেভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের জন্য আমরা পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি। তিনি বাংলাদেশের এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধী, খুনী এবং দেশের উন্নয়নের প্রতি অনাস্থাশীল চক্র যাতে কোনভাবে আর কোনদিন দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে।
গত শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর অষ্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষে সিডনীর সোফিটেল হোটেলে আওয়ামী লীগ অষ্ট্রেলিয়া শাখা আয়োজিত সংবর্ধনার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গৃহিত বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্যই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হবার যোগ্যতা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আগামী ছয় বছর পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এর অবস্থানকে ধরে রাখার লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি কিভাবে দেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সকল ধরনের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। দেশের মর্যাদার বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যে যেখানেই বাস করুন না কেন, আপনাদের দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করে দেশের সম্মানকে তুলে ধরতে হবে, যে সম্মান আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্যদিয়েই আমরা এই শহীদদের প্রতি যথাযথভাবে সন্মান জানাতে পারি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য নির্মূল করে দেশের মানুষকে সমৃদ্ধ জীবন দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী শাসকরা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কারণ দেশের স্বাধীনতায় তাদের বিশ্বাস ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে দেশের অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় রূপ দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় থাকার স্বল্প সময়ে তিনি যে বিপুল কাজ করেছিলেন তা ভাবলে আমাদের বিম্মিত হতে হয়। তার হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান হলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিঘিœত করার জন্য দায়ী প্রথম ব্যক্তি, তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য একটি এলিট ও দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে বাংলাদেশ একটি ভিক্ষুকের দেশে পরিণত হয়েছিল। অন্য সকল অবৈধ ও সামরিক শাসকরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লাগামহীন দুর্নীতি বাংলাদেশকে পর পর পাঁচ বছর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করে। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দা সংস্থা এই দুর্নীতি উদঘাটন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন এবং এটি দেশকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু জিয়া ও তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার সকল দলিলপত্র ও প্রতীক মুছে ফেলতে হেন চেষ্টা নাই যা করেননি। তিনি বলেন, কিন্তু সত্যকে কেউ দামাচাপা দিয়ে রাখতে পারে না। আর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে তিনি যখন দেশে ফিরেন তখন বাংলাদেশের মানুষ এক কঠিন সময় পার করছিল এবং দেশ খুনিদের শাসনে কাতরাচ্ছিল। তিনি বলেন, বারবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা সত্তে¡ও দেশের মানুষের নিঃস্বার্থ সমর্থন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অপরিসীম ত্যাগের কারণে তার দেশে ফেরা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আমি তাদের হুমকি-ধামকিকে কখনো ভয় পাইনি। জনগণের জন্য কাজ করা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলা অব্যাহত রেখেছি এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে তখন দেশে সত্যিকার উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি হয়। দেশের মানুষ আমাদের শাসন এবং ২০০৮ সাল থেকে আমরা যেসব উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছি তার সুফল ভোগ করছে।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালিয়েছে। এই দলটি দেশে সন্ত্রাস, হত্যা ও দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি এবং তারা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চেয়েছে। আন্দোলনের নামে তারা দেশব্যাপী তান্ডব ও ধ্বংসাত্মক কাজ এবং নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা ও আহত করেছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হবে বলে কেউ চিন্তা করতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করেছিল। আমরা তাই তাদের কাছ থেকে একটি টাকাও নিইনি এবং আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থেই এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার পিতা দেশকে স্বাধীন করে গেছেন এবং এই দেশের জনগণের জন্যই তিনি সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে দেশকে গঠন করাই এখন আমার দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনা আয়োজন কমিটির আহŸায়ক শেখ শামিমুল হক।
দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ায় তিন দিনের সরকারি সফর শেষে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) সিডনীর কিংসফোর্ড স্মিথ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. সুফিউর রহমান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পথে প্রায় এক ঘন্টা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যাত্রাবিরতি করবেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীবাহী বিামানটির আজ মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।



 

Show all comments
  • Parvez Islam ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৩৫ এএম says : 0
    Thik bolesen
    Total Reply(0) Reply
  • আরজু ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৩৬ এএম says : 0
    জনগণের হাতে কী আদৌ সেই সুযোগ আছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • ইসমাইল ইমন ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ২:৩৬ এএম says : 0
    কাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে সেটা আমরা ভালো করেই জানি।
    Total Reply(0) Reply
  • AI ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:১২ পিএম says : 0
    Who all talk against ....... are War criminals. No option now but to follow Delhis Instructions.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ