Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গাজীপুরের পুলিশ সুপার প্রত্যাহার চায় ২০ দল

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মো. দেলোয়ার হোসেন : নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ সিটি নির্বাচনের স্বার্থে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে রোববার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ২০ দলের প্রধান সমন্বয়ক ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, গাজীপুর জামায়াতে ইসলামির আমীর প্রিন্সিপাল সানাউল্লাহ এবারের সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তিনি তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে বিএনপি প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার তথা ২০ দলীয় জোটকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে গত ২৭ তারিখ তিনিসহ ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ এনে মামলা দেয়া হয়েছে। এখনতো নির্বাচনী প্রচারণার সময়, কোন আন্দোলনের সময় নয়। তারা কেন নাশকতার পরিকল্পনা করবে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা মনে করি এ ধরনের ঘটনা নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় বাধা। আমরা যে সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন আশা করেছিলাম তা ব্যাহত হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারনা থেকে এভাবে আমাদের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হলে আমাদের অন্যান্য কর্মীরা নির্ভয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবে না। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং গ্রেপ্তারকৃতদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচন কমিশনকে এর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রশাসনকে এখানে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে, আর যারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করছেন না তাদের অনতিবিলম্বে এ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, এই এসপি অতীতেও প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত। বিগত একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি একটি দলের পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে ওই নির্বাচনের সময় সাময়িকভাবে তাকে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহর করেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই সময় এসপি একটি দলের পক্ষ অবলম্বন করেছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় নির্বাচন কমিশন তাকে প্রত্যাহার করেছিল।
আমাদের নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারনাকালে কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ গিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদের অযথা হয়রানী করছে। পুলিশ প্রশাসন এখন থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একটা কৌশল অবলম্বন করছে। তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলেছি, গাজীপুর সিটিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা হউক এবং সেখানে কর্মরত এসপিকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হউক।
খন্দকার মোশারফ বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনির্বাচিত সরকার। জনগণের ভোটে সরকার হয়নি। তাই এ সরকার জনগণের সরকার নয়। সেই কারণে জনগণের প্রতি এ সরকারে কোন জবাবদিহিতা নেই এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের সামন্যতম শ্রদ্ধাবোধ নাই। সে কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে আপনারা দেখেছেন সেখানে কিভাবে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে ভোট ডাকাতি করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোটের আগের দিন রাত্রে ব্যালট পেপার সিল মারা ও ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অনেক উদাহরন আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। আমরা আশঙ্কা করি এধরনের কর্মকান্ড সরকার দলীয় প্রার্থীরা করতে পারে। এছাড়াও ভোট ডাকাতি , ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সশস্ত্র ক্যাডারদের অস্ত্রের মহরা, ভোট কেন্দ্র দখন করে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আমরা ইতপূর্বে দেখেছি। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে (সংবাদপত্র) বলতে চাই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেও সরকার নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করেন। নির্বাচন কমিশন যদি সরকার নিয়ন্ত্রন করে তাহলে সেখানে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না এবং ভোটাররা সেখানে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেনা। আমারা আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বলতে চাই তারা যেন এখন থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বচন পরিচালনার পরিবেশ তৈরি করে।
তিনি আরো বলেন, শারীরিক অসুস্থতা ও নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারলেও তার নির্দেশে আত্মীয় স্বজন ও কর্মীরা ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। মেয়র পদে থাকা অবস্থায় এম.এ মান্নান সাব সিটির নির্বাচনী কাজে যোগ দিতে পারবেন না, করলে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ২২ নম্বর ধারায় যা উল্লেখ আছে। অথচ ‘জাহাঙ্গীরের পক্ষে আজমত, হাসানের পক্ষে মাঠে নেই মান্নান’ সংবাদ মাধ্যমে এ ধরণের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ওপর নির্ভর করবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা।
তিনি বলেন, এ সিটি করপোরেশন নির্বাচননঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সিটি নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন কি ধরণের হবে তার ইঙ্গিত বহন করবে এ নির্বাচন। আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন হল বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য একটা অগ্নিপরীক্ষা। আমরা যখন নির্বাচন করছি তখন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি। তাঁকে একটা মিথ্যা বানোয়ায়াট মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। এটি আপিলযোগ্য হলেও তাকে জামিন না দিয়ে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ সরকার আমাদের নেত্রীকে বাদ দিয়ে আমাদের ২০ দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায়। তাই সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে অত্যন্ত গুর”ত্বপূর্ণ। আমাদের ভবিষ্যতের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমাদের নেত্রীর মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদ ভেঙ্গে সামরিকবাহিনীকে নির্বাচনকালীন নির্দিষ্ট সময় মোতায়েন এ দাবিগুলো আদায় করে আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চাই। তার আগে আমাদের নেত্রীর মুক্তি চাই। আমাদের নেত্রীর মুক্তি, গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক সুতোয় গাঁথা। যদি সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সরকার, এই নির্বাচন কমিশন, এই প্রশাসন কি করবে এটা কিন্তু জনগণের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার পূর্বশর্ত হিসেবে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে মূল্যায়ন করব। তাই তিনি সিটি নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ২০দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানী না করার অনুরোধ জানান।
তিনি মিডিয়ার ভূমিকা উল্লেখ করে বলেন, যেকোন নির্বাচনে মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। মিডিয়া যদি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে তাহলে প্রশাসন অনিচ্ছায় হলেও কোন প্রকার দ্বিধা, দন্ধ তৈরী করতে পারবেনা।
সংবাদ সম্মেলনে ধানের শীষ প্রতীকে ২০ দলীয় জোট মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার, বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব ও নরসিংদীর সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিলুপ্ত কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ বিএনপি নেতারা উপস্থি ছিলেন।
এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদকে প্রত্যাহারের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি এবং যা করার তাই করছি। এটা যেহেতু নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার তাই আমরা এটি তাদের কাছে পাঠিয়েছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ