পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঋণ বিতরণ বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি আমানত। একই সঙ্গে এই ঋণ সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। এই ঋণ যাচ্ছে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থানে। আর তাই তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছে। আর নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বলছিলাম বেসরকারি খাতে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কথা।
গত বছরের জানুয়ারিতে মালিকানা বদল ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনের মাত্র ১৫ মাসেই আস্থার সঙ্কটে ভুগছে ব্যাংকটি। এর কারণ হিসেবে অব্যবস্থাপনা, লোভ ও পারস্পরিক দ্ব›দ্বকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট গ্রæপের কাছে রাতারাতি পুরো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া এবং কয়েকজন পরিচালকের অযাচিত হস্তক্ষেপে ব্যাংকটি এমন দুরবস্থায় পড়েছে বলে উল্লখ করেন তারা।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে আমানত এসেছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, এ সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে যে পরিমাণ আমানত এসেছে, তার তিন গুণ ঋণ দিতে হয়েছে ব্যাংকটিকে। এই ঋণ কোথায় গেছে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেনা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কেউই। এমনকি ব্যাংকটিতে চাউর আছে এই ঋণ বিতরণে বড় ধরণের অনিয়ম হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নির্দিষ্ট একটি স্থানে এই ঋণ গেছে। একই সঙ্গে ওই নির্দিষ্ট স্থানে নতুন করে বড় অঙ্কের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন নিয়েও ব্যাংকটির নতুন মালিকদের সঙ্গে পরিচালনা পরিষদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আর তাই ভবিষ্যতে মানি লন্ডারিং মামলা, দুদকের হয়রানিসহ নানা ঝামেলা এড়াতেই গত ১৭ এপ্রিল পদত্যাগ করেছেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এছাড়া সম্প্রতি একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও তিনজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (ডিএমডি) একযোগে পাঁচজনকে পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া নিজেদের দ্ব›েদ্ব গত বছর ব্যাংক ছেড়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলম।
সূত্র মতে, এক সময়ে আমানতকারীদের আস্থার অন্যতম নাম ছিল ইসলামী ব্যাংক। অধিকাংশ গ্রাহকই ছুটতেন ইসলামী ব্যাংকে। অথচ মাত্র কয়েকদিনে বেসরকারি খাতে দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংক শুধু আমানতের পেছনে ছুটছে। গত বছরের জানুয়ারিতে বাজার থেকে নতুন শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানা বদল হয়ে চলে আসে চট্টগ্রামবিত্তিক শিল্প গ্রæপ এস আলমের কাছে। মালিকানা বদলের পরপরই ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের পর এই প্রথম বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ল ব্যাংকটি। আর তাই টাকার অভাবে ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম ছোট করে এনেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ-আমানত অনুপাত ৯২ শতাংশে হয়ে গেছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত হারের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান মোট আমানতের পরিমাণ ৭৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মুদারাবা আমানত ৬৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর বাকিটা খরচ ছাড়া (কস্ট ফ্রি) আমানত। ব্যাংকটি বিনিয়োগ রয়েছে ৭৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগ ৭৪ হাজার ৮৭ কোটি এবং বাকিটা শেয়ার বিনিয়োগ। সে হিসাবে আইডিআর ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়ে গেছে।
অথচ ২০১৭ সালের শুরুতে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা ও ঋণ ৬১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির ইসলামিক বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৫ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের শুরুতে আমানত বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ও ঋণ বেড়ে হয় ৭০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, পরিবর্তনের আগমুহূর্তেও ব্যাংকটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের পর তারা যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে, ঋণ দিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। সীমা ছাড়িয়ে ইসলামী ব্যাংক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ দিয়েছে। এই ঋণ সাধারণ মানুষ নয়; গেছে ব্যাংকটির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থানে। আর সংকটের কারণও সেটাই। এমনকি অর্থসংকটে পড়ে সরকারের ইসলামী বিনিয়োগ বন্ডে থাকা টাকাও তুলে নিয়েছে ব্যাংকটি। বিনিয়োগ-আমানত অনুপাত বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমার মধ্যে আনতে ব্যাংকটিতে ঋণ ফিরিয়ে আনতে হবে, অথবা আমানত বাড়িয়ে অনুপাত সমন্বয় করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারাই বলছেন, আমানত বৃদ্ধির যে হার, তাতে এ সীমা সমন্বয় করা ব্যাংকটির জন্য কঠিনই।
এদিকে মালিকানা বদলের পর ইসলামী ব্যাংকের বিদেশি মালিকানা কমে গেছে। আস্থাহীনতায় অনেকেই ব্যাংকের মালিকানা ছেড়ে দেন। ব্যাংকটির শুরুতে বিদেশিদের অংশ ছিল ৭০ শতাংশের মতো, বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসার পর থেকে অনেকের কাছে বিষয়টি ধোঁয়াটে মনে হয়েছে। বিনিয়োগ-আমানত অনুপাতটা ৯২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। এটা স্বাভাবিক যে ঋণ দেওয়ায় আগে এত আগ্রাসী হওয়ায় এখন রক্ষণশীল হতেই হবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেকোনোভাবেই হোক আমানতকারীদের কাছে এমন একটি বার্তা রয়েছে যে, ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে। এটা দূর করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক যেহেতু দেশের বড় ব্যাংক এবং এর ক্ষতি মানে দেশের ক্ষতি, তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে এর ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। অর্থাৎ পরিচালনা পরিষদ যাতে সঠিক ভূমিকা পালন করে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যাতে না থাকে।
এদিকে গতকাল ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের সভায় ২০১৭ সালের জন্য ১০শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী ২৫ জুন ব্যাংকের ৩৫তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকের ডিভিডেন্ড-এর রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২১ মে। ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. নাজমুল হাসান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসিফ আব্দুল্লাহ আল-রাজী ও মো. সাহাবুদ্দিন, পরিচালবৃন্দ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুব উল আলম উপস্থিত ছিলেন। তবে দু’জন পরিচালক সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সভায় ২০১৭ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়। সভা সূত্রে জানা যায়, আর্থিক বিবরণী অনুমোদনের বিষয় থাকায় সভায় অন্য কোন ইস্যুতে আলোচনা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।